সুযোগ এসেছে বাজারকে স্বস্তির জায়গায় নিয়ে যাওয়ার : ভোক্তার ডিজি

প্রকাশিতঃ 10:37 pm | August 27, 2024

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এ.এইচ.এম. সফিকুজ্জামান বলেছেন, এখন সুযোগ এসেছে বাজারকে একটা স্বস্তির জায়গায় নিয়ে যাওয়ার। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন তারা জাতীয় বীর। আমরা যা পারিনি শিক্ষার্থীগণ তা করে দেখিয়েছে। তিনি বলেন, সরকারি দপ্তর হিসেবে সমালোচনাকে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে নিয়ে স্বচ্ছতার সাথে কাজ করে যাচ্ছে অধিদপ্তর। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কর্তৃক বাজার তদারকি কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।

মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) টিসিবি অডিটোরিয়ামে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে ‘ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯’ সহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আইন বিষয়ে দিনব্যাপী কর্মশালায় তিনি এসব কথা বলেন। কর্মশালায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

কর্মশালার জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক (কার্যক্রম ও গবেষণাগার) ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন বলেন, ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ ও ভোক্তা-অধিকার বিরোধী কার্য প্রতিরোধের লক্ষ্যে অধিদপ্তর মূলত ৩ ধরনের কাজ করে থাকে; ভোক্তা সাধারণকে সচেতন করার লক্ষ্যে বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম, ভোক্তা অধিকার বিরোধী কার্য প্রতিরোধ ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে বাজার তদারকি এবং গ্রাহকদের দায়েরকৃত অভিযোগ নিষ্পত্তি। বাজার তদারকি কার্যক্রমে শিক্ষার্থীগণ সংযুক্ত হওয়ার ফলে তদারকি কার্যক্রম গতিশীল হয়েছে। কর্মশালা শেষে শিক্ষার্থীগণ বাজার তদারকিতে আরও সমৃদ্ধ হবেন মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করে তার ব্যক্ত শেষ করেন।

কনশাস কনজ্যুমার সোসাইটির এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর পলাশ মাহমুদ বলেন, ২০১৩ সাল থেকে কনশাস কনজ্যুমার সোসাইটি শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করছেন। তিনি অধিদপ্তরের আইন সংশোধনসহ জনবল সমস্যা সমাধানের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানান। এছাড়াও তিনি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন কর্তৃক গঠিত প্রকৃত কমিটির মাধ্যমে বাজার তদারকি কার্যক্রম পরিচালনা এবং অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সাথে সমন্বয় করার অনুরোধ জানান।

অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ.এইচ.এম. সফিকুজ্জামান বলেন, সম্প্রতি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থী কর্তৃক দেশব্যাপী নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার তদারকি কার্যক্রম অধিদপ্তরের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। অধিদপ্তর শিক্ষার্থীদের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানায়। জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অন্যতম প্রধান কাজ বাজার তদারকি কার্যক্রম পরিচালনা করা। সে প্রেক্ষিতে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের বাজার তদারকি কার্যক্রমে দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আয়োজন করা হয়েছে আজকের এই কর্মশালা।

আলোচনায় মহাপরিচালক নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির যৌক্তিক কারণ হিসেবে আর্ন্তজাতিক বাজারের মূল্য বৃদ্ধি, পরিবহণ ব্যয় বৃদ্ধি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব, ডলার সমস্যা ইত্যাদি বিষয়ে বলেন। তবে অযৌক্তিক মূল্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কোন অসাধু ব্যবসায়ী জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তিনি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে অধিদপ্তরের পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন দপ্তর/সংস্থা কাজ সম্পর্কে সম্যক ধারনা প্রদান করেন। পরিশেষে তিনি বাংলাদেশকে একটি অবাধ উন্নয়নের দেশ হিসেবে গঠনের লক্ষ্যে তরুণ ছাত্র সমাজকে নিয়ে কাজ করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে তাঁর বক্তব্য শেষ করেন।

কর্মশালায় বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের সহকারী প্রধান লোকমান হোসেন এবং বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের সহকারী পরিচালক নূর উদ্দিন যোবায়ের ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণে তাদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান কর্তৃক গৃহীত কার্যক্রম সম্পর্কে সম্যক ধারনা প্রদান করেন।

আলোচনায় কনজ্যুমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর কোষাধ্যক্ষ ড. মঞ্জুর-ই-খোদা তরফদার বলেন, ক্যাব আন্দোলনের ফলে সৃষ্টি হয়েছে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। তিনি অধিদপ্তর ও সমন্বয়কদের সাথে ক্যাব যুক্ত থেকে কাজ করতে চায় বলে জানান।

পরে কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের মাঝে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ সহ আজকের কর্মশালার বিষয়ে কুইজ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় এবং প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার প্রদান করা হয়।

সভার শেষ পর্যায়ে অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ও মতামত প্রদানের জন্য সভায় উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানান। তিনি জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নামে অসাধু চর্চা না করতে পারে সে বিষয়ে সকলকে সর্তক থাকার আহ্বান জানান। তিনি মতবিনিয়ম সভায় সকলের সমন্বিত কাজ করার মাধ্যমে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ সহজ হবে মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করে সভায় উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে কর্মশালার সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

কালের আলো/ডিএস/এমএম