‘ঠুঁটো জগন্নাথ’ অপবাদ কাটিয়ে উঠছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর

প্রকাশিতঃ 9:31 am | February 24, 2019

বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো:

প্রতিষ্ঠার ২৭ বছরে ৩১ জন মহাপরিচালক (ডিজি) পেয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। কিন্তু মাদক নির্মুল তো দূরের কথা নিজেরাই কোমর সোজা করে দাঁড়াতে পারেননি। সাফল্য দেখাতে পারেনি মাদক বিরোধী অভিযানেও। শিকড় নড়াতে পারেনি মাদকের গডফাদারদের।

যুগোপযোগী পদ্ধতির প্রয়োগ না থাকা এবং পরিকল্পনার অভাবসহ নানা কারণে এই অধিদপ্তরটির গাঁয়ে লেগেছে ‘ঠুঁটো জগন্নাথ’ অপবাদ। এমন অবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ এই অধিদপ্তরটিকে নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করে সরকার। মাদকের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর শুন্য সহিষ্ণু নীতি (জিরো টলারেন্স) গ্রহণ করে খোলনলচে পাল্টে দিয়েছেন ডিএনসি।

৩২ তম মহাপরিচালক (ডিজি) হিসেবে দায়িত্ব পেয়ে মো: জামাল উদ্দীন আহমেদ অধিদপ্তরটিকে নতুন উদ্যম ও শক্তিতে গড়ে তোলতে নানামুখী কার্যকর উদ্যোগ নিয়েছেন। গত দেড় বছরে অনিয়মের শক্ত সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে লোকবলের অভাব, অবকাঠামো ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছেন।

আরো পড়ুন:
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের হাল নিয়ে কালের আলোতে ধারাবাহিক প্রতিবেদন

গত বুধবার (৩০ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর সেগুনবাগিচাস্থল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে নিজ অফিস কক্ষে জনপ্রিয় গণমাধ্যম কালের আলো’র সঙ্গে কথা বলেন জামাল উদ্দীন আহমেদ।

দীর্ঘ আলাপচারিতায় জানা যায়, গত ২৭ বছরে যেখানে অধিদপ্তরের যানবাহন ছিলো মাত্র ৫২ টি। এখন সেখানে গত এক বছরে অনুমোদন মিলেছে ৪৯ টি যানবাহনের।

মন্ত্রণালয়ের কাছে অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। প্রতিটি জেলায় অন্তত একটি করে গাড়ি’র ব্যবস্থা করতে চান।

মাদক গডফাদারদের শক্ত সিন্ডিকেট ভাঙার কাজ করছেন। প্রায় তিন দশকের বর্ণাঢ্য চাকরি জীবনে কাজকে কখনো ভয় না পেয়ে পথ হেঁটেছেন ডিজি জামাল উদ্দীন আহমেদ।

আরো পড়ুন:
দেশকে মাদকমুক্ত করার অঙ্গীকার ডিজি জামাল উদ্দীনের

লোকবলের সঙ্কট কাটিয়ে মাথা উঁচু করে ডিএনসিকে চালাতে নতুন আরো ১ হাজার ৫৯৭ টি নতুন পদ সংযোজনের উদ্যোগ বাস্তবায়ন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সচিব পর্যায়ে অনুমোদনের পর আর দুই থেকে তিন মাসের মধ্যেই অধিদপ্তরে এই বিপুল সংখ্যক জনবল যুক্ত হলে কাজের গতি আরো বাড়বে বলেও কালের আলোকে জানান এই মহাপরিচালক।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের (ডিজি) পদে দায়িত্বকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করে ২০১৭ সালের ২৬ জুন এই মিশন শুরু করেন জামাল উদ্দীন। নিজের ক্যারিয়ারের সূচনা থেকেই ঘৃণা করেছেন মাদককে। অধিদপ্তরের এই কঠিন দায়িত্বকে যে তিনি উপভোগ করছেন এর প্রমাণও মিলেছে বিগত সময়কার কর্মযজ্ঞে। গত বছরে মাদক বিক্রেতাদের পাশাপাশি কমপক্ষে ৫০ জন মাদকের গডফাদারকে গ্রেফতার করেছে ডিএনসি।

মাদকদ্রব্য ও পুলিশ সদর দফতর থেকে জানানো হয়েছে, ২০১০ সালে ২৯ হাজার ৬৬২টি, ২০১১ সালে ৩৭ হাজার ২৪৫টি, ২০১২ সালে ৪৩ হাজার ৭১৭টি, ২০১৩ সালে ৪০ হাজার ২৫০টি, ২০১৪ সালে ৫১ হাজার ৮০১টি, ২০১৫ সালে ৫৭ হাজার ১৩৪ টি, ২০১৬ সালে ৬৯ হাজার ৭৩৯ টি ও ২০১৭ সালে ১ লাখ ৬৫ হাজার ৫৩৬টি মামলা করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর।

আরো পড়ুন:
বিভাগ পর্যায়ে ২০০ শয্যার নিরাময় কেন্দ্র ও দুই বিভাগে কেমিক্যাল ল্যাব করছে ডিএনসি

তবে সবচেয়ে বেশি মামলা হয়েছে ২০১৮ সালে। ওই বছরে দায়ের করা মামলার সংখ্যা কমপক্ষে ২ লাখ। কোকেন, ফেনসিডিল, ইয়াবা, হেরোইন, চোলাই মদ, গাঁজা ও বিভিন্ন ধরনের ইনজেকশন জব্দের ঘটনায় এসব মামলা হয়েছে। মামলাগুলোতে আসামির সংখ্যাও প্রায় ৩ লাখের মতো। অবশ্য অধিকাংশ আসামিই জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে অধিদপ্তরটির ডিজি জামাল উদ্দীন আহমেদ কালের আলোকে বলেন, ‘প্রতি বছরই মামলা বাড়ছে। আমাদের তৎপরতা বাড়ায় মাদক জব্ধ বেশি হচ্ছে। আগে সর্বাতœক কার্যক্রম ছিলো না। এখন জব্ধ করার পরিমাণ বেড়েছে।’

কালের আলো/এএ