মসজিদে পাহারা না লাগলে মন্দিরে কেন লাগবে, প্রশ্ন জামায়াত আমিরের

প্রকাশিতঃ 6:54 pm | September 02, 2024

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘আমার বাড়িতে যদি পাহারা না লাগে, আমার মসজিদে যদি পাহারা না লাগে তাহলে হিন্দু বন্ধুদের মন্দিরে কেন পাহারার প্রয়োজন হবে? আমরা এ ধরনের কোনও বৈষম্য চাই না। আমরা চাই আমাদের সন্তানেরা যে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে করে গিয়েছে, এর মাধ্যমে সকল প্রকার বৈষম্যের কবর রচনা হোক। বাংলাদেশ একটা বৈষম্যবিহীন দেশে পরিণত হোক।’

সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) সকালে দিনাজপুর ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে দিনাজপুর উত্তর সাংগঠনিক জেলা আয়োজিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে নিহত রুদ্র সেন, অন্যান্য শহীদ ও আহতদের জন্য সমাবেশ ও দোয়া অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘ছাত্র-জনতার এই আন্দোলন বিশেষ কোনও গোষ্ঠী, দলের বা সম্প্রদায়ের নয়। এখানে আপামর জনতা রাস্তায় নেমে এসে আন্দোলনকে সফল করেছে। এখানে কোনও নির্দিষ্ট ধর্মের লোকেরা শুধু লড়াই করে নাই, জাতি-দল-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আপামর জনতার এই আন্দোলনকে কেউ যদি নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতে চায়, তাহলে বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ তাদের রুখে দেবে। জনগণের সকল আন্দোলনে জামায়াত ইসলামী সঙ্গে থাকবে। স্বৈরাচার তার শেষ দিনগুলোতে দিশেহারা হয়ে আমাদের সন্তানদের হত্যা করেছে। এই বাংলাদেশ ছোপ ছোপ তাজা রক্তে ভরে উঠেছে। তবে আগে যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কাড়াকাড়ি-মারামারি হতো, মানুষ যেদিকে চলাফেরা করতে গেলে আতঙ্কে থাকতো। এখন সেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্র-ছাত্রীরা বন্যার্তদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাদের সঙ্গে সাধারণ জনগণও দাঁড়িয়েছেন।’

তিনি ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘ক্ষমতার মালাই খাওয়ার উদ্দেশ্য জামায়াতের ইসলামীর নেই। সমাজের একটু গুণগত পরিবর্তন আনা আমাদের উদ্দেশ্য। এমন একটি দেশ ও জগৎ চাই যেই দেশে জাতি-দল-ধর্ম নির্বিশেষে সমস্ত মানুষ শান্তিতে বসবাস করবে। এ দেশের নাগরিক হিসেবে দেশে এবং প্রবাসে যেখানে যাক গর্বের সঙ্গে কথা বলবে। আমার বাড়িতে যদি পাহারা না লাগে, আমার মসজিদে যদি পাহারা না লাগে তাহলে হিন্দু বন্ধুদের মন্দিরে কেন পাহারার প্রয়োজন হবে? আমরা এ ধরনের কোনও বৈষম্য চাই না। আমরা চাই আমাদের সন্তানেরা যে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে করে গিয়েছে, এর মাধ্যমে সকল প্রকার বৈষম্যের কবর রচনা হোক। বাংলাদেশ একটা বৈষম্যবিহীন দেশে পরিণত হোক। দুনিয়ার সবাই যেন আমাদের নিয়ে গর্ব করে, এজন্য একটি জাতি গঠন করতে চাই আমরা। যারা শহীদ হয়েছেন তাদের পরিবারের কাছে এসেছি ঋণ পরিশোধ করার জন্য।’

তিনি আরও বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে কোনও মা তার সন্তান হারিয়েছেন, বাবা তার সন্তান হারিয়েছেন, স্ত্রী তার স্বামী হারিয়েছেন, ছোট সন্তানরা তার বাবাকে হারিয়েছেন, ভাই হারিয়েছে বোনকে, বোন হারিয়েছে ভাইকে। ৬৫ হাজার বর্গমাইলের এই বাংলাদেশ ছোপ ছোপ তাজা রক্তে ভরে উঠেছে। আমাদের আগামী প্রজন্ম যেন বলতে পারে আমাদেরও আবু সাঈদ আছে, আমাদেরও রুদ্র আছে, আমাদেরও মুগ্ধ আছে। আমাদের এরকম হাজারো বীর আছে। আমরা সেই বীরদের অনুসারী। তারা যেন অনুপ্রাণিত হয়।’

জামায়াতের আমীর বলেন, ‘জনতার এই আন্দোলনকে কেউ যদি নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতে চায়, তাহলে দেশের ১৯ কোটি মানুষ তাদের রুখে দেবে। হাজারো প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এই বিপ্লব, এই পরিবর্তন, এই আন্দোলনের সফলতা একে অবশ্যই রক্ষা করতে হবে। এর কোনও ধরনের অপমান এই জাতি সহ্য করবে না।’

এর আগে সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত রুদ্র সেনের বাসায় গিয়ে তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমান।

দিনাজপুর উত্তর জেলা জামায়াতের আমির অধ্যক্ষ আনিসুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে এ সময় জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সহসভাপতি রাশেদ প্রধান, জেলা জামায়াতের সাবেক আমির আফতাব উদ্দিন মোল্লা, জেলা উত্তর জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য অ্যাড মাহবুবুর রহমান ভুট্টুসহ কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।

কালের আলো/এমএএইচ/ইউএইচ