দুই মাসের মধ্যে নদ-নদীর সংখ্যা চূড়ান্তকরণ ও দখলমুক্তকরণ উদ্যোগের নির্দেশ দুই উপদেষ্টার

প্রকাশিতঃ 6:34 pm | September 05, 2024

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

আগামী দুই মাসের মধ্যে দেশের নদ-নদীর সঠিক সংখ্যা চূড়ান্ত এবং দখলমুক্ত করার ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিআইডাব্লিউটিএ, নদী রক্ষা কমিশন এবং বিভাগীয় কমিশনারগণকে নির্দেশ দিয়েছেন পানি সম্পদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বুধবার রাতে বাংলাদেশের নদ-নদীর প্রকৃত সংখ্যা নির্ধারণ এবং সংকটাপন্ন নদ-নদীগুলোর দখল ও দূষণমুক্তকরণ নিয়ে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় পরিবেশ ও পানিসম্পদ উপদেষ্টা এ নির্দেশ দেন। বৈঠকে যোগ দিয়েছেন নৌপরিবহন এবং পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম. সাখাওয়াত হোসেন।

বৈঠকে উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান বলেন, যৌথভাবে প্রণয়নকৃত তালিকা জনমত ও আপত্তি দাখিলের সুযোগ দেওয়ার জন্য ওয়েব সাইটে প্রকাশ করতে হবে এবং এ সংক্রান্ত আপত্তি গ্রহণপূর্বক প্রযোজ্যক্ষেত্রে শুনানী গ্রহণ করতে হবে।

এসময় ৬৪ জেলায় অন্তত ৬৪টি নদী চিহ্নিত করে নদীর অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করতে আগামী দুই মাসের মধ্যে সময়ভিত্তিক, ব্যয় সাশ্রয়ী, কর্মপরিকল্পনা দাখিল করতে এবং পরবর্তীতে সমন্বিত অভিযানের মাধ্যমে দখল উচ্ছেদের পরিকল্পনা গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন।

পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসানের পরিচালনার সভায় পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সচিব, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিআইডাব্লিউটিএ এর চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, নদী রক্ষা কমিশনের প্রতিনিধি এবং বিভাগীয় কমিশনারবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।

পরিবেশ উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান এসময় জানান, পরিবেশ অধিদপ্তর দেশের সবচাইতে দূষিত নদীর তালিকা প্রণয়ন করবে এবং দূষণকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করে দূষণ নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত অভিযান ও তদারকি করবে। প্লাস্টিক দূষণে আক্রান্ত নদীর তালিকা করে দূষণ থেকে পরিত্রাণে কর্ম পরিকল্পনা করবে। পরিবেশ অধিদপ্তর সকল নদীর জন্য ‘হেলথ কার্ড’ প্রস্তুত করবে, যা নদীর প্রাণ সত্ত্বার পরিচয়।

এসময় অভিযান পরিচালনা ও পূনঃদখল ও দূষণ রোধকল্পে এলাকাবাসী, তরুণ প্রজন্ম, সামাজিক সংগঠন, এনজিওদের সম্পৃক্ত করে পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। সকল অফিসে প্লাস্টিকের পানির বোতল, প্লাস্টিকের ফোল্ডার ও প্লাস্টিক ব্যানার ব্যবহার পরিহার কার্যক্রম শুরু করার আহ্বান জানান উপদেষ্টা।

বিআইডাব্লিউটিএ ঢাকা সার্কুলার নৌপথের প্রস্তাবনার সর্বশেষ অবস্থা ও এই প্রস্তাবনার সম্ভাব্যতা বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সাথে মতবিনিময় করবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি জানান, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় উপরোক্ত নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়নের অগ্রগতি নিয়মিত পর্যালোচনা করবে।

এছাড়াও আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী তিন মাসের মধ্যে নদী রক্ষা কমিশনের আইনের সংশোধনের প্রস্তাবনা চূড়ান্ত করবে। এ লক্ষ্যে একটি কমিটি গঠন করতে হবে। ব্যয়সহ চলমান ও বাস্তবায়িত নদী খনন প্রকল্পগুলোর বিস্তারিত তালিকা ও প্রভাব বিষয়ে মতামত দিতে হবে বলে উল্লেখ করেন সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

এসময় নৌপরিবহন এবং পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, অবৈধ পলিথিন ব্যাগ বন্ধে এবং পরিবেশবান্ধব পাটের ব্যাগের ব্যাপক প্রচলনে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সাথে যৌথভাবে একটি ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা হবে। তিনি কীর্তনখোলা, রূপসাসহ গুরুত্বপূর্ণ নদীসমূহের পাড় অবৈধ দখলমুক্ত করতে বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের প্রতি নির্দেশনা দেন।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, নদী রক্ষা কমিশন, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং পানি বিশেষজ্ঞগণের পরিমাপে দেশে মোট নদীর সংখ্যায় ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। এর প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে দায়েরকৃত রিট পিটিশন নম্বর-৮৫৩৯/২০২১ এর নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের বিষয়ে সভায় সিদ্ধান্ত হয়।

কালের আলো /ডিএইচ/কেএ