কার স্বার্থে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আলী আযমকে বিতর্কিত করা হচ্ছে?
প্রকাশিতঃ 6:34 pm | September 14, 2024
ইয়াছিন আরাফাত, কালের আলো:
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (মাঠ প্রশাসন) কে এম আলী আযমকে নিয়ে হঠাৎ করেই বিতর্ক শুরু হয়েছে। দেশের অর্ধশতাধিক জেলায় নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদায়নকে ঘিরে এই অনাকাঙ্ক্ষিত বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছে। শুধুমাত্র বগুড়ায় বাড়ি হওয়ার কারণে প্রায় ২৪ বছর পদোন্নতি বঞ্চিত এ কর্মকর্তা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর উইংয়ে দায়িত্ব গ্রহণের পর সুযোগ সন্ধানী বিশেষ মহলের শ্যেনদৃষ্টিতে পড়েছেন বলেও অভিযোগ ওঠেছে।
এক্ষেত্রে তাঁরা পদত্যাগ করে ভারতে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের প্রভাবশালী দুই আমলার সঙ্গে কে এম আলী আযমের দায়িত্ব পালনকে ইস্যু করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। অথচ তাদের আশীর্বাদপুষ্ট হলে তাঁর রাতারাতি কেন পদোন্নতি হয়নি, কেন বঞ্চিতদের তালিকায় ঠাঁই নিতে হয়েছে এসব প্রশ্নে অবশ্য মুখে কুলুপ এঁটেছেন তাঁরা।
জানা যায়, দুদকের বর্তমান চেয়ারম্যান মাঈনুদ্দিন আব্দুল্লাহ ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার হিসেবে যোগদানের ৪ দিনের মাথায় গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে বদলী হয়ে যান আযম। অথচ বলাবলি হচ্ছে তিনি মাঈনুদ্দিন আব্দুল্লাহ’র পিএস ছিলেন। এটি ডাহা মিথ্যাচার। আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিব ড. খোন্দকার শওকত হোসেনের মাত্র ৩ মাস ২২ দিন ব্যক্তিগত সচিব ছিলেন আলী আযম। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সমাজসেবা সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করা জিল্লার রহমান ঢাকার জেলা প্রশাসক হিসেবে বদলী হয়ে সেখানে যোগদানের আগে থেকেই আরডিসি পদে ছিলেন আযম। ওই সময় ফখরুদ্দিনের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় ছিল। অথচ এসব বিষয়াদিকে সামনে এনে তাকে কেন জনপ্রশাসনের মাঠপ্রশাসনের মতো স্পর্শকাতর ডেস্কের যুগ্ম সচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এ নিয়ে মুখ ভার করে তাকে নিয়ে খিস্তিখেওর করছেন কেউ কেউ।
তবে বাস্তব বিষয় হচ্ছে- বগুড়া জেলায় বাড়ি হওয়ার কারণে বিসিএস প্রশাসন ২০ ব্যাচের কর্মকর্তা আলী আযম দীর্ঘদিন পদোন্নতি পাননি। অথচ তাঁর ব্যাচের কেউ কেউ আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধা নিয়ে যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত সচিব হয়েছেন। কিন্তু তাঁর ভাগ্যে শিকেয় ছিঁড়েনি। ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের আগ পর্যন্ত তাকে সিনিয়র সহকারী সচিব পদ নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। গত ১৩ আগস্ট তিনি উপসচিব ও পরে গত ১৯ আগস্ট একই মন্ত্রণালয়ের (মাঠ প্রশাসন) যুগ্ম সচিবের দায়িত্ব নেন।
একই সূত্র জানায়, সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের (এসএসবি) সদস্য সচিব হিসেবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এই যুগ্ম সচিব (মাঠ প্রশাসন) এর ভূমিকা প্রকৃত সংস্কারের পক্ষে।অতি সম্প্রতি জেলা প্রশাসক পদায়নেই মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা তিনি বাস্তবায়ন করেছেন। তিনি কারও জন্য খুঁটি হিসেবে কাজ করেননি। কিন্তু তার পক্ষে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
সূত্র জানায়, ডিসি পদ বঞ্চিতরা যুগ্ম সচিব আলী আযমের কক্ষে গিয়ে গত মঙ্গলবার দিনভর হইচই-হট্টগোল করেন। অথচ এ নিয়োগে যুগ্ম সচিবের (মাঠ প্রশাসন) ভূমিকা রাখার সুযোগ নেই। মূল কাজ হয় কমিটিতে। মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে ৫ জন গুরুত্বপূর্ণ সচিব সেখানে থাকেন। তাঁরাই কারা ডিসি হবেন সেটি চূড়ান্ত করেন। মূলত আলী আযমকে দায়িত্ব থেকে সরাতেই পরিকল্পিতভাবে তাকে নিয়ে প্রোপাগাণ্ডা চালাচ্ছে।
এসব বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (মাঠ প্রশাসন) কে এম আলী আযম কালের আলোকে বলেন, ‘পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে আমাকে বারবার পদোন্নতি বঞ্চিত করা হয়েছে। আমার প্রায় ২৪ বছরের চাকরি জীবনে শুধুমাত্র পতিত সরকারের সময়ে ২৩ বার বদলী করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি সময় ৭ বছর ১০দিন আমাকে ভূমি আপিল বোর্ডের শাখা প্রধান হিসেবে রাখা হয়। এখনও একটি মহল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। আমি ডিসি ভাইভা বোর্ডের সদস্য সচিব না। এপিডি স্বয়ং সদস্য সচিব। আমি সহায়ক কর্মকর্তা হিসেবে সততা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছি।’
কালের আলো/বিএস/এমএ