শাহজালাল এলাকায় শব্দদূষণ রোধে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ, গণমাধ্যমের সক্রিয় ভূমিকা চান বেবিচক চেয়ারম্যান

প্রকাশিতঃ 8:59 pm | September 22, 2024

ইয়াছিন আরাফাত, কালের আলো:

প্রতিদিন ৩৭ হাজার যাত্রী চলাচল করে দেশের প্রধান হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। স্বভাবতই এই এলাকায় শব্দদূষণ ভয়াবহ। বিমান বন্দরটির আধুনিকায়নে নানামুখী উদ্যোগের পরেও শব্দদূষণে নজর ছিল না কারও। বিপরীতে প্রতিনিয়ত সামনের সড়কে বাড়তি যানবাহনের চাপে শব্দদূষণ মারাত্মক আকার নেয়ার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে উপলব্ধি করেন অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

তিনি গ্রহণ করেন ব্যতিক্রমী এক উদ্যোগ। গত মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) এক ভার্চুয়াল সভায় উপদেষ্টা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দেড় কিলোমিটার উত্তর এবং দেড় কিলোমিটার দক্ষিণ পর্যন্ত এলাকা নীরব এলাকা ঘোষণার পরিকল্পনার কথা জানান। সেদিন তিনি জানান, আগামী ১ অক্টোবর থেকে এই এলাকায় যানবাহনের হর্ন বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ওইদিন থেকে আগামী ১ অক্টোবর থেকে পরিবেশ অধিদপ্তর, বিআরটিএ, সিভিল এভিয়েশন এবং ট্রাফিক পুলিশের সমন্বয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হবে।

পরিবেশ উপদেষ্টার নির্দেশনা বাস্তবায়নে নড়েচড়ে বসে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। গুরুত্বপূর্ণ এ পদক্ষেপ সফলতার সঙ্গে বাস্তবায়নে রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) বেবিচকের সদর দপ্তরে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন, বেবিচক, বিআরটিএ, ঢাকা ট্রাফিক পুলিশ, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতি, ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতিসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে মতবিনিময় সভা করেন এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া।

বেবিচক জানায়, সভায় প্রতিনিধিরা তাদের সংস্থার গৃহীত পরিকল্পনাসমূহ তুলে ধরেন। অন্যান্য অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকেও মতামত গ্রহণ করা হয়। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটির ৩ কিলোমিটার নীরব এলাকা কর্মসূচি বাস্তবায়নে সঠিক পরিকল্পনা ও সমন্বয়ের ওপর জোর দেন বেবিচক চেয়ারম্যান। এছাড়া, মতবিনিময় সভায় বিমানবন্দর এবং সংলগ্ন এলাকায় সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ করার জন্য গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েও গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করা হয়।

শাহজালাল এলাকায় শব্দদূষণ রোধে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া বলেন, ‘এই কর্মসূচি সফল করতে গণমাধ্যমের সক্রিয় ভূমিকা অপরিহার্য। গণমাধ্যমের মাধ্যমে জনসচেতনতা তৈরি করা সম্ভব হবে, যা এই উদ্যোগের সফল বাস্তবায়নে ভূমিকা পালন করবে।’

প্রসঙ্গত, জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির (ইউএনইপি) ২০২২ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকা শব্দ দূষণেও শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। বিশ্বের ৬১ শহরের শব্দ দূষণের মাত্রা তুলে বিশ্লেষণ করে ‘ফ্রন্টিয়ারস ২০২২: নয়েজ, ব্লেজেস অ্যান্ড মিসম্যাচেস’ শীর্ষক এ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ঢাকায় শব্দের সর্বোচ্চ তীব্রতা ১১৯ ডেসিবল। যা এ প্রতিবেদনে আসা শহরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ৬০ ডেসিবেল শব্দে মানুষের সাময়িক শ্রবণ শক্তি নষ্ট হতে পারে এবং ১০০ ডেসিবেল শব্দে চিরতরে শ্রবণশক্তি হারাতে পারে। তাদের হিসাব অনুযায়ী কোন এলাকায় ৬০ ডেসিবেল মাত্রার বেশি শব্দ হলে সেই এলাকা দূষণের আওতায় চিহ্নিত হবে। সংস্থার হিসেব অনুযায়ী অফিস কক্ষে ৩০ থেকে ৪০ ডেসিবেল হাসপাতালে ২০ থেকে ৩৫ ডেসিবেল, রেস্তোরাঁয় ৪০ থেকে ৬০ ডেসিবেল মাত্রা সহনীয়। এই হিসাব মোতাবেক, রাজধানীর কোথাও শব্দের মাত্রা ৬০ থেকে ৭০ ডেসিবেলের কম অথবা এর নিচে নেই। উচ্চমাত্রার শব্দ জীবন করে স্তব্ধ।

কালের আলো/ওয়াইএ/এমএএএমকে