‘ম্যান অব অ্যাকশন’ সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ

প্রকাশিতঃ 10:56 am | February 28, 2019

বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো:

সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদকে বলা হয় ‘ম্যান অব অ্যাকশন’ (কাজের মানুষ)। তাঁর রয়েছে নিজস্ব স্টাইল এবং পরিচ্ছন্ন দৃষ্টিভঙ্গি। মিনিট, ঘন্টা হিসেব করে সময়ের সদ্ব্যবহার করেন। কথা বলেন আত্মপ্রত্যয়ের সঙ্গে; শৈল্পিক সাবলীল উচ্চারণে।

কঠোর পরিশ্রমী এই সেনা নায়ক সব সময়েই একটি আধুনিক, যুগোপযোগী ও শক্তিশালী সেনাবাহিনী গঠনের অপরিহার্য প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন। তাঁর দক্ষ ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে আরো উজ্জ্বল হয়েছে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি। দেশের পাশাপাশি বিশ্ব পরিমন্ডলেও নিজেদের কর্মদক্ষতার পরিচয়ে অর্জিত সুনাম ধরে রেখেছেন বাহিনীটির সদস্যরা।

দেশ ও জাতির কল্যাণে এবং গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রাখতেও প্রভাবকের ভূমিকা পালন করেছেন সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ। দক্ষ, পেশাগত, সুশৃঙ্খল সেনাবাহিনীর আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর জ্যেষ্ঠ কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদান, সর্বাত্মক পরিকল্পনা, বিভিন্নমুখী কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে আন্তরিকতার কথাও বার বার উচ্চারণ করেছেন তিনি।

আরো পড়ুন:
নতুন ইতিহাস গড়লেন সেনাপ্রধান

বন্দর নগরী চট্টগ্রামের হালিশহরে অর্টিলারি সেন্টার ও স্কুলে বুধবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গোলন্দাজ রেজিমেন্টের কালার প্রদান অনুষ্ঠানেও সেনাপ্রধান এই বিষয়টি সবিশেষ গুরুত্ব দেন।

উপস্থাপন করেন সেনাবাহিনীকে আধুনিক ও উন্নত করার লক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দূরদৃষ্টিসম্পন্ন প্রতিরক্ষা নীতির অনুসরণে ২০২১ সালের রূপকল্পের ধারাবাহিকতায় সরকারের ফোর্সেস গোল-২০৩০’র আলোকে সেনাবাহিনীর সাংগঠনিক কাঠামো বিন্যাস ও পরিবর্তনের পাশাপাশি আধুনিকায়নের প্রকরণের কথাও।

উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় সেনাবাহিনীর ফোর্সেস গোল ২০৩০-এর বাস্তবায়ন এগিয়েছে অনেক দূর। গত বছরের নভেম্বরেও সাভার সেনানিবাসের সিএমপিসিঅ্যান্ডএসের প্যারেড গ্রাউন্ডে অ্যাডহক ১১ বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টকে (মেকানাইজড) রেজিমেন্টাল কালার প্রদান অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান বলেছিলেন, ‘সেনাবাহিনীতে নিয়মিত, ডিভিশন সাপোর্ট, মেকানাইজড ও প্যারা- এই চার প্রকারের পদাতিক ব্যাটালিয়ন প্রচলিত রয়েছে। এছাড়া গত ৮ থেকে ৯ বছরে সমরাস্ত্রসহ আরও নতুন তিনটি ডিভিশন সংযোজন হওয়া বিরল ঘটনা।’

জানা যায়, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের টানা তিন মেয়াদে সেনাবাহিনীর অবকাঠামোগত পরিবর্তনের পাশাপাশি সক্ষমতা বহুলাংশে বেড়েছে। সেনাবাহিনীতে আর্মড ব্রিগেড, কম্পোজিট ব্রিগেড, প্যারা কমান্ডো ব্রিগেড ও পদাতিক ডিভিশন, ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশন প্রতিষ্ঠাসহ অত্যাধুনিক অস্ত্রসস্ত্র ও সরঞ্জামাদিতে সজ্জিত করা হয়েছে।

বাহিনীকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করতে করা হয়েছে আধুনিক যানবাহন, হেলিকপ্টার, সমরাস্ত্র ও সরঞ্জামাদি সংযোজন। এটি গর্বিত সেনাবাহিনীর সমরশক্তি ও চলাচল ক্ষমতাকে অনেক গুণে বাড়িয়েছে।

সেনাসদ্যদের জীবনমান উন্নত করতে সরকারের আন্তরিকতা তুলে ধরে বঙ্গবন্ধু কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার দয়ারামপুরে অবস্থিত কাদিরাবাদ সেনানিবাসে পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ‘সৈনিকদের উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাসহ তাদের বাসস্থান, মেস, এসএম ব্যারাক নির্মাণ, বেতন-রেশন বৃদ্ধিসহ অনান্য সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়েছে।’

সেদিন বঙ্গকন্যা আরো জানিয়েছিলেন, কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্সে ইঞ্জিনিয়ার কন্সট্রাকশন ব্রিগেড ও ডিভ ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যাটালিয়ন গঠন করা হয়েছে। এছাড়া আরই ব্যাটালিয়ন, ইঞ্জিনিয়ার কন্সট্রাকশন ব্যাটালিয়ন গঠনের প্রক্রিয়াও।

কথার বদলে কাজে বিশ্বাসী আজিজ আহমেদ সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিয়েই সেনাবাহিনীর উন্নয়নের লক্ষে বাস্তবমুখী নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেন। সেনাবাহিনীর সমরশক্তি ও চলাচল সক্ষমতা বাড়াতে নিবিষ্টমনে কাজ করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিণত হয়েছে আধুনিক, কার্যকর ও যুগোপযোগী বাহিনীতে।

পারস্পরিক আস্থা-বিশ্বাস, সহমর্মিতা, ভ্রাতৃত্ববোধ, কর্তব্যপরায়ণতা, দায়িত্ববোধ ও সর্বোপরি শৃঙ্খলা বজায় রেখে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন বাহিনীর সদস্যরা। দেশের পতাকাকে সমুন্নত রেখে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় অর্পিত দায়িত্ব পালনে সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রেখেছেন। বেড়েছে তথ্য প্রযুক্তির প্রয়োগ। আধুনিক অস্ত্র ও সরঞ্জাম দিয়ে শক্তিশালী করা হচ্ছে বাহিনীকে।

বুধবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রামে সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেছেন, ‘সম্প্রতি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সংযোজিত হয়েছে তিনটি আর্টিলারি ব্রিগেড, একটি এয়ার ডিফেন্স আর্টিলারি ব্রিগেড, তিনটি ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারি ব্রিগেড, দু’টি এয়ার ডিফেন্স আর্টিলারি রেজিমেন্ট এবং একটি ডিভিশন লোকেটিং ব্যাটারি আর্টিলারি ও একটি মর্টার রেজিমেন্ট।

এদিন ১০ পদাতিক ডিভিশনের নবগঠিত মর্টার রেজিমেন্টের জন্য ২০ ওয়ার টুয়েন্টি মিলিমিটার আধুনিক মর্টার কেনার কথা জানিয়ে তিনি জানান, ২০ ওয়ার টুয়েন্টি মিলিমিটার আধুনিক মর্টার কেনার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

বর্তমান সরকারের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে আধুনিকায়ন করার লক্ষে রেজিমেন্ট অব আর্টিলারির জন্য ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৮টি লং রেইঞ্জ এমএল আর এস (টাইপ বি), ২০টি ওয়ান ফিফটি ফাইভ গান সিস্টেম কেনার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

এসব অস্ত্র ও সরঞ্জামাদি সংযোজনের ফলে প্রকারান্তরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সামরিক সক্ষমতা বাড়বে এবং বিপুল সংখ্যক কর্মকর্তা, জেসিও এবং সৈনিকরা বৈদেশিক প্রশিক্ষণ লাভের সুযোগ লাভ করবেন।

সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ আরো জানান, আকাশ প্রতিরক্ষায় এয়ার ডিফেন্স শাখার এসএম ৯০ এয়ার মিসাইল সিস্টেমের প্রশিক্ষনের সুবিধার্থে চীন থেকে একটি যুদ্ধ সিমুলেটর এ বছর দেশে আসবে।

কালের আলো/এএ