হিমালয়সম বাধা ডিঙিয়ে দেশের স্থিতিশীলতা বজায়ে অগ্রণী সেনাপ্রধান, পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের অঙ্গীকার
প্রকাশিতঃ 9:45 pm | October 03, 2024
এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, অ্যাকটিং এডিটর:
ছাত্র-জনতার রক্তস্রোতের গণঅভ্যুত্থানে বিজয়ের পর এলোমেলো হয়ে পড়ে দেশের সামগ্রিক নিরাপত্তা কাঠামো। তৈরি হয় পুলিশবিহীন আইনশৃঙ্খলা শুন্যতা। সব থানা ও ফাঁড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান পুলিশ সদস্যরা। সেনাবাহিনী তথা সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাত্মক সহযোগিতায় সাম্প্রতিক সময়ে সেই পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেছে। তবে লোকবল ও মনোবল—দুই দিক থেকেই এখনও দুর্বল অবস্থায় রয়েছে পুলিশ বাহিনী। দেশের আইনশৃঙ্খলা ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার ক্ষেত্রে উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে প্রথমে সেনাবাহিনী ও পরে নৌবাহিনী এবং বিমান বাহিনীকে ম্যাজিষ্ট্রেসি পাওয়ার প্রদান করে সরকার।
আইনশৃঙ্খলার দিক থেকে সব রকমের নিরাপত্তা ঝুঁকি মোকাবিলায় পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে গভীর দৃষ্টি ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে দেশকে শান্ত ও স্বাভাবিক রাখতে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। শুধুমাত্র রুটিন কর্মকাণ্ডে নিজেকে ব্যস্ত না রেখে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ নির্ধারণ করে প্রতিনিয়ত ছুটছেন দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। দেশের চলমান নিরাপত্তা পরিস্থিতির ওপর আলোকপাত করে সেনাবাহিনীর কার্যক্রম সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা প্রদান করছেন নিজ বাহিনীর সদস্যদের। হিমালয়সম বাধা ডিঙিয়ে দেশের বিপ্লব-উত্তর পরিস্থিতিকে স্থিতিশীল রাখতে সঠিকভাবে প্রতিটি বিষয় সমন্বয়, তদারক ও নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্যকে সততা, সত্যনিষ্ঠা ও ন্যায়পরায়ণতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন। সুস্পষ্ট ভাষায় তিনি বলেছেন, ‘দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং যৌথ বাহিনীর অস্ত্র উদ্ধার কার্যক্রমের পাশাপাশি বিচারবহির্ভূত কর্মকাণ্ড রোধ, আইনের শাসন সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে নিরপেক্ষ ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করছে সেনাবাহিনী।’
সূত্র জানায়, সেনাপ্রধান ধারাবাহিকভাবে সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পদাতিক ডিভিশন ও এরিয়া পরিদর্শন করছেন। মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) তিনি সেনাবাহিনীর চট্টগ্রাম এরিয়া ও পাবর্ত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি রিজিয়নের নানিয়ারচর জোন সদর পরিদর্শন করেন। বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে উত্তাল পাবর্ত্য চট্টগ্রামে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, সাধারণ জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সহায়তা প্রদানসহ দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সদা প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা প্রদান করেন। দুর্গম পাহাড়ি সেনা ক্যাম্পে সেনাবাহিনী প্রধানের সফরের মধ্যে দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে মোতায়েনরত সেনাসদস্য এবং অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের মনোবল বেড়েছে বহুগুণে।
আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, গত বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সেনাপ্রধান ৩৩ পদাতিক ডিভিশন ও কুমিল্লা এরিয়া, বুধবার (০২ অক্টোবর) ১১ পদাতিক ডিভিশন ও বগুড়া এরিয়া এবং বৃহস্পতিবার (০৩ অক্টোবর) সেনাবাহিনীর ৬৬ পদাতিক ডিভিশন ও রংপুর এরিয়া পরিদর্শন করেন। এসব পরিদর্শনকালে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান কর্মরত সকল পদবির সেনাসদস্যদের উদ্দেশ্যে দরবার নিয়েছেন। ‘অফিসার্স অ্যাড্রেস’ গ্রহণের পাশাপাশি দিয়েছেন প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা।
জানা যায়, গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শান্তিতে নোবেলজয়ী ড.মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। কিন্তু তাদের কোনো রকম সময় না দিয়ে বিভিন্ন ইস্যুতে অস্থির করে রাখা; আনসার আন্দোলন, অন্যান্য ধর্মাম্বলীর ওপর আক্রমণের প্রহসন, দেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলীয় এলাকায় স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা, পোশাকশিল্পসহ অন্যান্য শিল্পে শ্রমিক আন্দোলন ও ভাঙচুরের প্রচেষ্টা, পার্বত্য জেলাসমূহে উপজাতি গোষ্ঠীগুলোকে উসকানির মাধ্যমে চরম অস্থিরতা সৃষ্টির প্রচেষ্টাসহ ইত্যাকার বিষয়ে কখনও একসঙ্গে এমন অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়নি দেশ। এমন পরিস্থিতিতে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়েছে সরকার। এতে করে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষায় হাতে হাত মিলিয়ে, কাঁধে কাঁধ রেখে ড.ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারকে সফল করতে অমিত দৃঢ়তা, নিরপেক্ষতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে চলেছে দেশপ্রেমী বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান নিজেও স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেছেন, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশ ও জনগণের আস্থার প্রতীক।’ ‘যাই হোক না কেন’ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে তিনি সমর্থন দিয়ে যাবেন বলে দৃঢ় প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন। কঠিন সব বাধার প্রাচীর ডিঙিয়ে জনগণের ভালোবাসা ও একাত্মতায় অনির্বাণ বাংলায় তিনি গেঁথেছেন সেই মর্মস্পর্শী সুর—‘মা তোর বদনখানি মলিন হলে, ও মা, আমি নয়নজলে ভাসি’।
বিশ্লেষকরা বলছেন, গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে—যেকোনো দেশেই বিপ্লব-উত্তর পরিস্থিতি সব সময় কিছুটা অস্থিতিশীল পর্যায়ের মধ্য দিয়ে যায়। সেদিক থেকে বিবেচনা করলে বলতে হয় যে বাংলাদেশের পরিস্থিতি অন্যান্য যেকোনো দেশের তুলনায় ভালো ছিল এবং আছে। সেনাবাহিনী তথা সশস্ত্র বাহিনীর আন্তরিক প্রচেষ্টায় অভ্যুত্থানের প্রায় দু’মাসের মাথায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেকটা উন্নতির দিকে রয়েছে। এরপরেও সব রকমের নিরাপত্তা ঝুঁকির উত্তরণের সোনাবাহিনীর সব রকমের প্রচেষ্টা জনমনে অনুপ্রেরণা সঞ্চার করেছে। আমরা আশাবাদী দেশের মানুষের ভালোবাসা ও সংহতিতে একতাবদ্ধ থেকে তাঁরা সফল হবেন। আক্ষরিক অর্থেই রূপান্তর ঘটবে বৈষম্যহীন রাষ্ট্র আর গণতান্ত্রিক সমাজের।
কালের আলো/এমএএএমকে