চট্টগ্রাম বন্দরের বে-টার্মিনালে আশার আলো, বিনিয়োগকারীদের নিরুৎসাহিত করতে চান না উপদেষ্টা
প্রকাশিতঃ 11:09 pm | October 08, 2024

ইয়াছিন আরাফাত, কালের আলো:
চট্টগ্রাম বন্দর সম্প্রসারণে নতুন ‘বে টার্মিনাল’ প্রকল্প অবশেষে গতি পেতে যাচ্ছে। এই প্রকল্প এলাকা চট্টগ্রাম বন্দরের বিদ্যমান টার্মিনাল এলাকার চেয়ে বড়। সম্প্রতি এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে প্রস্তাবিত বে টার্মিনালে ৪ হাজার একক কনটেইনারবাহী জাহাজ ভেড়ানো সম্ভব হবে। চট্টগ্রাম বন্দরের বে-টার্মিনালে বিনিয়োগ করার জন্য দেশি-বিদেশী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অপেক্ষা করছে বলে সুসংবাদ দিয়েছেন নৌপরিবহন, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেছেন, ‘বে-টার্মিনাল চালু হলে আমাদের আয় আরো বহুগুণে বেড়ে যাবে। তাই কোনভাবেই বিনিয়োগকারীদের নিরুৎসাহিত করা যাবে না।’
জানা যায়, বে টার্মিনালে মূলত জাহাজ থেকে কনটেইনার ও পণ্য ওঠানো-নামানো হবে। খোলা পণ্য সাগরে ওঠানো-নামানো গেলেও টার্মিনাল ছাড়া কনটেইনার ওঠানো-নামানো যায় না। রপ্তানি পণ্যের সিংহভাগ কনটেইনারে ভরে বিদেশে পাঠানো হয়। আবার শিল্পের কাঁচামালসহ মূল্যবান পণ্য কনটেইনারে করে আমদানি হয়। বর্তমানে কনটেইনার ওঠানো-নামানোর ৯৮ শতাংশই চট্টগ্রাম বন্দরের তিনটি টার্মিনালে হয়। নতুন করে পতেঙ্গা টার্মিনালেও কনটেইনার ওঠানো-নামানো শুরু হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরে এখন বছরে তিন মিলিয়ন বা ৩০ লাখ একক কনটেইনার পরিবহন হয়। বে টার্মিনাল পুরোপুরি চালু হলে এটি বন্দরের বিদ্যমান টার্মিনালের চেয়ে বেশি কনটেইনার পরিবহন করা যাবে বলে জানান বন্দরের কর্মকর্তারা।
দীর্ঘদিনের প্রত্যাশার ‘বে টার্মিনাল প্রকল্প নিয়ে আশার আলো দেখছেন বন্দর নগরীর বাসিন্দারা। মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) চট্টগ্রাম বন্দর, পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল ও বে-টার্মিনাল এবং লালদিয়ার চর পরিদর্শন করেন নৌপরিবহন, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘প্রতিনিয়ত আমাদের আমদানি রপ্তানি কার্যক্রম বেড়ে চলেছে। বহু বছর পরে এ কার্যক্রম বহুগুণে বেড়ে যাবে। বর্তমানে প্রতি কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং এর জন্য আমরা প্রায় ১৮ ডলার পাচ্ছি। হ্যান্ডলিং কার্যক্রম বাড়লে আয়ও বহুগুণ বেড়ে যাবে।’
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে গতি আসবে। বড় জাহাজ ভিড়তে পারবে। এতে সময় ও ব্যয় কমে আসবে। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে ১০ মিটার গভীরতা ও ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের বড় জাহাজ প্রবেশ করতে পারে না। বে টার্মিনালে ভিড়তে পারবে ১২ মিটার গভীরতা ও ২৮০ মিটার পর্যন্ত দৈর্ঘ্যের জাহাজ।
চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের ‘লাইফ লাইন’
পরিদর্শনকালে নৌপরিবহন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে অভিযোগ ছিলো জাহাজ আনলোড করে বন্দর ছেড়ে যেতে ১০ দিনের বেশি সময় লাগে। সেজন্য আজকে আমি একটা জাহাজ পরিদর্শন করেছি এবং ক্যাপ্টেনের সাথে কথা বলেছি। তাদের মতে ম্যানুয়ালি আনলোড করতে ৬ থেকে ৭ দিন সময় লাগে। যদিও এখন আগের তুলনায় লোড আনলোডের সময় অনেক কমে এসেছে। লোড আনলোডে যদি অটোমেশন আনতে পারি তবে এ সমস্যা সমাধান হবে। আমরা সে লক্ষ্যেই কাজ করছি।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের লাইফ লাইন। এখানে যে ধরনের অব্যবস্থাপনা ছিল তা দূর করা না গেলে আমাদের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য হুমকির মুখে পড়বে। সে জন্যই আমি চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শনে এসেছি। পোর্টের চেয়ারম্যান, মেম্বারসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে কথা বলেছি।
উপদেষ্টা বলেন, পোর্টের অব্যবস্থাপনার জন্য পোর্ট একা দায়ী নয়। এখানে এখনো ২০ বছরের পুরাতন কন্টেইনার, ১২ থেকে ১৪ বছরের গাড়ি পড়ে আছে। এভাবে চলতে থাকলে পোর্টের কার্যকারিতা বাড়ানো কোনভাবেই সম্ভব নয়। পড়ে থাকা কন্টেইনার বা গাড়ি নিলাম করার কাজ এনবিআরের। আমি নোট নিয়েছি, কিভাবে এসব সমস্যা দ্রুত সমাধান করা যায়। এ নিয়ে এনবিআরের চেয়াম্যানের সাথে কথা বলবো।
এসময় উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবঃ) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন যে কোন সেক্টরের অনিয়ম, দুর্নীতিসহ সকল অব্যবস্থাপনার কথা তুলে ধরতে গণমাধ্যম কর্মীদের প্রতি অনুরোধ জানান। এ সময় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামানসহ সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
কালের আলো/এমএএএমকে