দেশকে মাদকমুক্ত করার অঙ্গীকার ডিজি জামাল উদ্দীনের

প্রকাশিতঃ 9:56 am | March 04, 2019

বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো :

যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে প্রতিষ্ঠার পর বার বার মুখ থুবড়ে পড়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানটি রীতিমতো ‘নিধিরাম সর্দার’ হিসেবেই এতোদিন পরিচিতি পাওয়ায় কোন মহাপরিচালকই (ডিজি) সফল হতে পারেননি নিজ দায়িত্বে। অবশ্য এক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন অধিদপ্তরটির ৩২ তম মহাপরিচালক (ডিজি) জামাল উদ্দীন আহমেদ।

দেশকে মাদকমুক্ত করার স্বপ্নের পথে নিজের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন তিনি। জনপ্রিয় গণমাধ্যম কালের আলো’র সঙ্গে আলাপেও দেশকে মাদকমুক্ত করার অঙ্গীকার করেছেন অধিদপ্তরটির সর্বোচ্চ এই কর্মকর্তা। গত বুধবার (৩০ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর সেগুনবাগিচাস্থল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের নিজ কক্ষে বসে এই অঙ্গীকারের কথা বলেন তিনি।

আরো পড়ুন:
‘ঠুঁটো জগন্নাথ’ অপবাদ কাটিয়ে উঠছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর

জানা যায়, অতীতে এই অধিদপ্তরের মহাপরিচালকরা শুধুমাত্র আসা যাওয়ার মধ্যেই নিজেদের ব্যস্ত রেখেছেন। আসা-যাওয়ার দোলাচলে কাজের কাজ কিছ্ইু করতে পারেননি। অধিদপ্তরটিকে সুনামের অধিকারী করতে যেমন পারেননি উল্টো পাহাড় অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ব্যর্থতার গ্লানিতে বরাবরই নিঁচু ছিলো মাথা।

বিশেষ করে দেড় বছর আগেও একেবারেই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছিল এই প্রতিষ্ঠানটি। মাদক বিরোধী অভিযানে মন না দেওয়ার পাশাপাশি মাদক সংক্রান্ত মামলার তদন্ত বন্ধ রাখা, মাদক ব্যবসায়ীদের ভূয়া তালিকা সংরক্ষণ করা এবং নিরাময়কেন্দ্র সম্পর্কেও তথ্য দিতে না পারায় অধিদপ্তরের তৎকালীন মহাপরিচালক (ডিজি) সালাহউদ্দিন মাহমুদের ওপর তোপ দেগেছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা ও সেবা বিভাগের ওই সময়কার সচিব ফরিদ উদ্দীন আহমেদ চৌধুরী।

কিন্তু সেইদিন বদলেছে। এখন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর মাদক বিরোধী অভিযানে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতার স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হয়েছেন। দায়িত্ব নিয়েই অধিদপ্তরটিকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন মহাপরিচালক (ডিজি) জামাল উদ্দীন আহমেদ নিজেও। অধিদপ্তরের পোশাক বিধিমালা সংশোধন, সিপাহী থেকে ইন্সপেক্টর পর্যন্ত পোশাক, সাংগঠনিক কাঠামো পুনর্বিন্যাস করেছেন।

মাদক ব্যবসা ও পাচারের কৌশলের সঙ্গে নিজেদের আপডেট করে অধিদপ্তরটির নিজস্ব গোয়েন্দা নেটওয়ার্ককেও শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছেন মহাপরিচালক। নিজের সময়ে অধিদপ্তরের সবচেয়ে বড় সাফল্য বলতে তিনি বলেছেন, দেশের মানুষকে মাদকের সম্পর্কে সচেতন করে তোলা।

সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারের আলোকে কর্মপরিকল্পনা নেওয়ার পর সেটা বাস্তবায়নেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন জামাল উদ্দীন। তিনি বলেন, অধিদপ্তরকে আরো শক্তিশালী করতে চাই। বিভিন্ন আধুনিক প্রযুক্তি সম্বলিত উপকরণ সংযোজন করে লোকবল বাড়াতে চাই।

আরো পড়ুন:
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের হাল নিয়ে কালের আলোতে ধারাবাহিক প্রতিবেদন

পোশাক বিধিমালা বাস্তবায়নের বিষয়ে মহাপরিচালক জামাল উদ্দীন আহমেদ কালের আলোকে বলেন, ‘ইন্সপেক্টর থেকে সিপাহী পর্যন্ত পোশাক হয়েছে। বাকীদের জন্য পোশাক বিধিমালা সংশোধন হলে বাস্তবায়ন হবে। তাহলে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের টপ টু বটম সবাই পোশাক পাবে।’

নিজের প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি ডিজি’র বার্তা কী হবে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমরা কখনোই মাদককে প্রশ্রয় দেবো না। আমার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে বলছি, সরকার আমাদের সব জোগান দিচ্ছে।

আরো পড়ুন:
বিভাগ পর্যায়ে ২০০ শয্যার নিরাময় কেন্দ্র ও দুই বিভাগে কেমিক্যাল ল্যাব করছে ডিএনসি

আমাদের সবার বেতন বেড়েছে। আন্তরিকভাবে দেশকে মাদকমুক্ত করার জন্য সবাইকে কাজ করতে হবে। নয়তো জাতির সঙ্গে বেঈমানী হয়ে যাবে।’

মাদকের বিরুদ্ধে নিজের জিরো টলারেন্স নীতির কথা উল্লেখ করে সুর আরো চড়া করে অধিদপ্তরের এই মহাপরিচালক এই বিষয়ে আরো বলেন, ‘মাদকসেবন, মাদক ব্যবসা বা মাদক ব্যবসায়ীদের সহযোগিতার মতো কোনো কাজে জড়ালে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরি থাকবে না।’

কালের আলো/এএ