আলোচনায় মাইনাস টু ফর্মুলা
প্রকাশিতঃ 11:29 pm | October 15, 2024
মো.শামসুল আলম খান, কালের আলো:
দেশের বিভিন্ন পর্যায়ে সংস্কারের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে শান্তিতে নোবেল জয়ী প্রধান উপদেষ্টা ড.মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। ইতোমধ্যে বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের পুরোদমে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে সংস্কার ও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দেশের পরিবর্তিত সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ‘সংশয়’ ও ‘সন্দেহ’ তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে। বিশেষ করে বিএনপির ও যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলো নেতাদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে বর্তমান সরকার সব বিষয় স্পষ্ট না করায় সন্দেহের ডালপালা রাজনৈতিক অঙ্গনে বিস্তৃত হচ্ছে। বিশেষ করে দিন দশেক আগে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ‘আবারও ওয়ান ইলেভেনের মতো মাইনাস টু ফর্মুলা বিএনপি দেখতে চায় না’ এমন মন্তব্যকে ঘিরে ফের রাজনৈতিক মহলে ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’ নিয়ে তুঙ্গে ওঠে আলোচনা-সমালোচনা।
- মাইনাস টু ফর্মুলাটি ২০০৭ সালের এক-এগারোর সরকার সামনে এনেছিল
- বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্যের পর নতুন করে কানাঘুষা
- মাইনাস টু হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিলেন প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব
তবে এ প্রসঙ্গে মুখ খুলেছে অন্তর্বর্তী সরকার। তাঁরা স্পষ্ট করেছে নিজেদের অবস্থান। মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার সাফ সাফ জানিয়ে দেন মাইনাস টু হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। তিনি বলেন, ‘আমাদের সরকার মাইনাস টু কী জিনিস এটা জানে না। মাইনাস টু নিয়ে সরকারের কোনও পর্যায়ে কোনও ধরনের আলোচনা হয়নি। ভবিষ্যতেও হওয়ার সম্ভাবনা নেই।’
জানা যায়, দেশের রাজনীতিতে মাইনাস টু ফর্মুলাটি ২০০৭ সালের এক-এগারোর সরকার সামনে এনেছিল। ওই সময় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে বাদ দেওয়ার পক্ষে দল দুটির কিছু নেতা সক্রিয় হয়েছিলেন। ওই নেতারা সংস্কারপন্থি হিসেবে পরিচিত পান দেশের রাজনীতিতে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরে বিষয়টি নিয়ে আবারও কানাঘুষা শুরু হয়। এ বিষয়ে সম্প্রতি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তার দল বিরাজনীতিকরণে বিশ্বাস করে না এবং আবার ‘মাইনাস টু’ দেখতে চান না।
সূত্র মতে, অন্তর্বর্তী সরকারকে সব রকমের সহযোগিতা ও যৌক্তিক সময় দেওয়ার কথা বলেছে বিএনপি। তবে এটি সর্বোচ্চ এক বছর হতে পারে। তাও নির্ভর করবে সরকারের কার্যক্রমের ওপর। তাদের মতে, দেশে বিভিন্ন পর্যায়ে সংস্কার প্রয়োজন। রাষ্ট্রের কাঠামোতে গুণগত পরিবর্তন না এলে পরবর্তী সরকারকে চাপে থাকতে হবে। ফলে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে সংস্কারের পক্ষে মত তাদের। তবে এক বছর পর নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের গাফিলতি দেখলে সোচ্চার হবে বিএনপি ও যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলো। চাপ তৈরি করতে বক্তব্য-বিবৃতি এমনকি নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে কর্মসূচিও দেওয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে বিএনপি ও সমমনাদের।
বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধারক বলেছেন, মূলত এই সংশয় ও সন্দেহের কারণ দুটি। একটি হচ্ছে এক-এগারোর সময়ের মতো এই সরকার ক্ষমতায় থেকে যেতে পারে এবং নিজেদের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা করতে পারে। সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে এই সরকার কাজ করলেও সেটি জাতির সামনে পুরোপুরি খোলাসা করেনি। সন্দেহ বা সংশয় জোরালো হয়েছে, সরকার ও সংশ্লিষ্টদের কিছু বক্তব্য এবং এক-এগারোর সময়কার কেউ কেউ বর্তমান সরকারে দায়িত্ব পাওয়ায়।
বলা হচ্ছে, নাগরিক কমিটির ব্যানারে অন্তর্বর্তী সরকার পরিচালিত হচ্ছে। এদের কেউ কেউ এক-এগারোর সময় মাইনাস টু ফর্মুলার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সরকারের মেয়াদ সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট সময় উল্লেখ না থাকা, নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির জন্য ৬ মাস বা কয়েক বছরও লাগতে পারে সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্তদের কারও কারও এমন বক্তব্য সংশ্লিষ্টদের কাছে ক্ষমতা প্রলম্বিত হওয়ার লক্ষণ মনে হচ্ছে।
১৯ অক্টোবর আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরকারের সংলাপ
রাষ্ট্র সংস্কারের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করছে অন্তর্বর্তী সরকার। গত ৫ অক্টোবর বিএনপি, জামায়াতসহ বেশ কয়েকটি দলের সঙ্গে সংলাপ হয়েছিল। দুর্গাপূজার কারণে গত শনিবার সংলাপ হয়নি বলে সূত্রে জানা গেছে। এরই অংশ হিসেবে আগামী ১৯ অক্টোবর (শনিবার) আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরকার সংলাপে অংশ নেবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব। শনিবার আমন্ত্রিত রাজনৈতিক দলগুলোর বিষয়ে তিনি বলেন, গণফোরাম, এলডিপি, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, ১২ দলীয় জোট, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল, লেবার পার্টি, বিজেপির সঙ্গে সংলাপ হবে। এ ছাড়া আরও দু-একটি রাজনৈতিক দলকে হয়তো এ দফায় কিংবা পরবর্তী সময়ে আমন্ত্রণ জানানো হবে। সেটা প্রক্রিয়াধীন আছে।
সংলাপে জাতীয় পার্টিকে আমন্ত্রণ জানানো হবে কিনাÑএমন প্রশ্নের জবাবে আজাদ মজুমদার বলেন, এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। অনেক রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এরইমধ্যে আলোচনা হয়েছে। অন্য আর কার (দল) সঙ্গে আলোচনা হবে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। উপদেষ্টা পরিষদ এটা নিয়ে কাজ করছে। পরবর্তী সময়ে আর কারও সঙ্গে আলোচনা করার সিদ্ধান্ত হলে সময়মতো জানিয়ে দেওয়া হবে।
দ্রব্যমূল্য সহনীয় করতে সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব। এর মধ্যে ডিমের শুল্ক ৩৩ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ কমিয়ে ১৩ শতাংশ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ভোজ্যতেলের আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ কমিয়ে আনা এবং উৎপাদন ও সরবরাহ পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দ্রব্যমূল্যের সিন্ডিকেট ভাঙা যাচ্ছে না কেন—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সিন্ডিকেট ভাঙা ও তাদের শনাক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কারা মূল্য কারসাজি করছে, মনোপলি পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে, এ বিষয়ে সরকারকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করলে সেই বিষয়ে সরকার অবশ্যই পদক্ষেপ নেবে। সরকারের পদক্ষেপে দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসবে বলে মনে করেন উপপ্রেস সচিব।
পরিবহন খাতের চাঁদাবাজির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আজাদ মজুমদার বলেন, পরিবহন ভাড়া কমানোর বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ভেবে দেখবে। আর পরিবহনের ভাড়ার সঙ্গে চাঁদাবাজিকে কাউন্ট করে এটি নির্ধারণ করা হয় না। চাঁদাবাজি অপরাধ। এটা নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্টরা নিশ্চয়ই ভেবে দেখবেন। কারা চাঁদা চায়, কেন চাঁদা চায়—এ বিষয়ে তারা কাজ করবেন। কিন্তু ভাড়ার সঙ্গে চাঁদার বিষয়টি সম্পৃক্ত নয়। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, সহকারী প্রেস সচিব, সুচিস্মিতা তিথি ও নাঈম আলী।
কালের আলো/এমএসএকে/এমএএএম