উড্ডয়ন ব্যবস্থার উন্নত করার চ্যালেঞ্জে ১৩ দেশের কর্মকর্তাদের সেমিনার, আধুনিক প্রযুক্তির সম্ভাবনা অন্বেষণে বার্তা নৌবাহিনী প্রধানের
প্রকাশিতঃ 9:18 pm | October 21, 2024
কালের আলো রিপোর্ট:
উড়োজাহাজকে বলা হয় বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ ভ্রমণ-বাহন এবং দ্রুত ছুটতে থাকা আধুনিক জীবনব্যবস্থার অন্যতম চালিকাশক্তি। ‘সম্মিলিত প্রয়াস’ নিরাপদ উড্ডয়নের অন্যতম চাবিকাঠি হিসেবে বিবেচিত। ফলত উড্ডয়ন নিরাপত্তার স্বার্থে নিজেদের অভিজ্ঞতা, পেশাদারত্ব এবং সহযোগিতার সংমিশ্রণের অনন্য এক সুযোগ তৈরি করেছে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) যৌথ ব্যবস্থাপনায় তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক উড্ডয়ন নিরাপত্তা সেমিনার। বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১৩টি দেশের বিমান বাহিনীর কর্মকর্তাদের নিয়ে আয়োজিত সেমিনারটি পারস্পরিক অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মধ্য দিয়ে জটিল পরিস্থিতিতে উড্ডয়ন নিরাপত্তা বজায় রাখা, পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন এবং উড্ডয়ন দুর্ঘটনা ঝুঁকি হ্রাস করে উন্নত করার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় রাখবে ইতিবাচক ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
সোমবার (২১ অক্টোবর) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও এ শুরু হওয়া আন্তর্জাতিক উড্ডয়ন নিরাপত্তা শীর্ষক সেমিনারটির উদ্বোধন করে বাংলাদেশ নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম নাজমুল হাসানও মনে করেন-‘এই সেমিনার কেবলমাত্র আধুনিক প্রযুক্তির সম্ভাবনাই অন্বেষণ করবে না বরং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ফলে সেগুলো কার্যকরভাবে বাস্তবায়নেও সহায়তা করবে।’ সেমিনারটি শেষ হবে আগামী বুধবার (২৩ অক্টোবর)। এটি অংশগ্রহণকারী দেশসমূহের মধ্যে উড্ডয়ন নিরাপত্তা ছাড়াও নানা বিষয়ে আরও বেশি যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা ও দেশের পর্যটনেও সম্ভাবনার নতুন দুয়ার উন্মোচিত করবে বলে অভিমত প্রকাশ করেন বক্তারা।
জানা যায়, স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশ বিমানবাহিনী ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ সমন্বিতভাবে কাজ করে নিরাপদ বিমান উড্ডয়ন-চলাচল-অবতরণ নিশ্চিত করে চলেছে। নিরাপদ উড্ডয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণেও বিশেষ যত্নবান তাঁরা। সরকারের নানামুখী পদক্ষেপ বিমান ভ্রমণকে আরও সহজতর করেছে এবং বিশ্বের অনেক দেশের সঙ্গে নতুন নতুন রুট সৃষ্টিতে সহায়তা করছে। বিমান উড্ডয়ন একটি উচ্চতর কারিগরি পেশা হওয়ায় এখানে পেশাগত দক্ষতার গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। উড্ডয়ন নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আপোসহীন মান অর্জনের লক্ষ্যে সর্বস্তরের জনবলের মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা হয়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের দক্ষতা একদিকে যেমন আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে তেমনি সংশ্লিষ্ট সংস্থার জন্যও বয়ে এনেছে সুনাম ও মর্যাদা। বাংলাদেশ বিমান বাহিনী গত বছর ২২ হাজার ৯২৯ নিরাপদ উড্ডয়ন ঘণ্টা অর্জন করেও রীতিমতো এক চমক তৈরি করেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৮ সাল থেকে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ও বেবিচক এর যৌথ ব্যবস্থাপনায় ঢাকায় আন্তর্জাতিক উড্ডয়ন নিরাপত্তা সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এবারের সপ্তম সেমিনারের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে-‘প্রমোটিং ফ্লাইট সেফটি বাই এমব্রেসিং টেকনোলোজিক্যাল অ্যাডভান্সমেন্ট’। আয়োজক বাংলাদেশ ছাড়াও বাহরাইন, ইন্দোনেশিয়া, মায়ানমার, রাশিয়া, কাতার, মালদ্বীপ, চীন, কেনিয়া, পাকিস্তান, সৌদি আরব, শ্রীলংঙ্কা, যুক্তরাষ্ট্র ও জিম্বাবুয়ের বিমান বাহিনীর কর্মকর্তারা সেমিনারে অংশগ্রহণ করছেন। সেমিনারটিতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ নৌবাহিনী, বাংলাদেশ পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, এমআইএসটিসহ বিভিন্ন সংস্থা ও বেশিরভাগ বেসরকারি এয়ারলাইন্সসমূহের প্রতিনিধিরা যোগ দিয়েছেন।
চিহ্নিত হবে বিমান উড্ডয়নের বিভিন্ন ঝুঁকি, বিশেষ ভূমিকা রাখবে উড্ডয়ন নিরাপত্তার মান উন্নয়নে
বাংলাদেশে সরকারি বিমান চলাচলকারী সংস্থা ছাড়াও অনেক বেসরকারি বিমান পরিচালনকারী সংস্থা রয়েছে। তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক উড্ডয়ন নিরাপত্তা সেমিনার সবার মাঝে এভিয়েশন সেফটি সম্পর্কিত ব্যবস্থাপনা এবং এর উন্নতিকল্পে সুস্পষ্ট ধারণা মিলবে আশা প্রকাশ করেন বক্তারা। সেমিনারে তাঁরা বলেন, বিমান উড্ডয়ন নিরাপত্তার বিষয়েও পেশাগত মান উন্নয়নের সুযোগ তৈরি করবে এই আন্তর্জাতিক সেমিনার। উড্ডয়ন নিরাপত্তা শুধু বিমান বাহিনীসমূহের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় বরং উড্ডয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যেকোন সংস্থা উড্ডয়ন নিরাপত্তা চর্চার মাধ্যমে উপকৃত হতে পারে। শুধু তাই নয়, এই সেমিনারে অংশগ্রহণকারীরা নিজেদের সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতার আলোকে বিমান উড্ডয়নের বিভিন্ন ঝুঁকি চিহ্নিত করে উড্ডয়ন নিরাপত্তার মান উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। যার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সকলেই উপকৃত হবেন।
বন্ধুপ্রতীম বিমান বাহিনীর অংশগ্রহণকারীদের আন্তরিক ধন্যবাদ নৌবাহিনী প্রধানের
আন্তর্জাতিক এই সেমিনার আয়োজনের জন্য বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বাংলাদেশ নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম নাজমুল হাসান। তিনি বন্ধুপ্রতীম বিমান বাহিনীর অংশগ্রহণকারীদের পাশাপাশি বাংলাদেশের পেশাদার বিমান চালকদেরও আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যেহেতু বিশ্ব প্রযুক্তির ক্ষেত্রে অসাধারণ গতি প্রত্যক্ষ করছে, তাই এই সেমিনারটি ক্রমবর্ধমান জটিল পরিস্থিতিতে উড্ডয়ন নিরাপত্তা বজায় রাখা এবং উন্নত করার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অবদান রাখবে। বিভিন্ন অধিবেশনে আলোচনা কেবল মাত্র অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সম্ভাবনাই অন্বেষণ করবে না বরং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ফলে সেগুলো কার্যকরভাবে বাস্তবায়নে সহায়তা করবে।’ তিনি প্রত্যাশা করেন প্রাণবন্ত অংশগ্রহণ এবং অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে সেমিনারটি সাফল্যমণ্ডিত হয়ে ওঠবে।
অনুষ্ঠানে সহকারী বিমান বাহিনী প্রধান (পরিকল্পনা) এয়ার ভাইস মার্শাল মো.শরীফ উদ্দীন সরকার, বেবিচক’র চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো.মঞ্জুর কবীর ভূইয়াসহ বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
কালের আলো/এমএএএমকে