সম্মিলিত প্রয়াসে সম্ভাবনাময় চা শিল্পকে এগিয়ে নিতে চান নতুন চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল শেখ সরওয়ার

প্রকাশিতঃ 8:00 pm | October 25, 2024

আব্দুল হামিদ, কালের আলো:

এক সময় চা উৎপাদনে পিছিয়ে ছিল বাংলাদেশ। গত কয়েক বছরে দেশে চা উৎপাদন বেড়েছে। সময়ের পরিক্রমায় উচ্চবিত্তের পাশাপাশি মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তরা চা পানে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। অলিগলির মোড় থেকে শুরু করে বিভিন্ন উৎসব কিংবা বাসা বাড়িতে চায়ের ব্যবহার বেড়েছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং মানুষের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের ফলে এখন সব শ্রেণিপেশার মানুষই চা পান করে। এখন এই শিল্পের বাজার ২০ হাজার কোটি টাকার ওপরে। উৎপাদনের প্রায় পুরোটাই ব্যবহার হয় দেশে।

  • বর্তমানে চা শিল্পের বাজার ২০ হাজার কোটি টাকার ওপরে
  • চা বোর্ডের উন্নয়ন পরিকল্পনা ও সার্বিক বিষয়ে বাণিজ্য সচিবের সঙ্গে আলোচনা
  • নতুন চেয়ারম্যানকে কর্মক্ষেত্রে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস সচিবের

সবার সম্মিলিত প্রয়াসে দেশের সম্ভাবনাময় চা শিল্পকে আরও এগিয়ে নিতে দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশ চা বোর্ডের নতুন চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন। চা শিল্পের ব্যাপক উন্নতিতে তিনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাং সেলিম উদ্দিনের আন্তরিক সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছেন। তিনি চা বোর্ডের উন্নয়ন পরিকল্পনা ও সার্বিক বিষয় নিয়ে বাণিজ্য সচিবের সঙ্গে আলোচনা করেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব তাকে কর্মক্ষেত্রে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) সচিবালয়ে তাদের দু’জনের সাক্ষাতকালে তাদের এসব বিষয় নিয়ে আলোচনার কথা নিশ্চিত করেছে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্র।

জানা যায়, ১৮৪ বছরের ইতিহাসে দেশে চা উৎপাদনে নতুন রেকর্ড গড়েছেন দেশীয় বাগান মালিকরা। এক বছরে ১০ কোটি ২৯ লাখ কেজি বেশি চা উৎপাদন হয়েছে। কয়েক বছর ধরে ১০ কোটি কেজি চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও এবারই প্রথম লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এমন সফলতা অর্জিত হয়েছে। ২০২৩ সালে দেশের বাগানগুলো থেকে চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০ কোটি ২০ লাখ কেজি। এখন এই শিল্পের বাজার ২০ হাজার কোটি টাকার ওপরে। উৎপাদনের প্রায় পুরোটাই ব্যবহার হয় দেশে। দেশের আর্থিক উন্নতি হওয়ার কারণে মানুষের জীবনযাত্রায়ও উন্নয়ন ঘটছে। ফলে বাড়ছে চায়ের চাহিদা।

এক সময় রপ্তানি পণ্যের তালিকায় চা ছিল। গত ৫৩ বছরে চা বাগান বেড়েছে, উৎপাদনও বেড়েছে তবে রপ্তানি সেভাবে বাড়েনি। এদিকটিতে চা বোর্ডের নতুন চেয়ারম্যান নজর দিবেন বলে আশা প্রকাশ করেন বাংলাদেশ টি এসোসিয়েশন। নতুন চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে দেশে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বাংলাদেশের চা বিদেশেও রপ্তানি হবে বলে স্বপ্ন বুনছেন তাঁরা। তাদের ভাষ্য হচ্ছে- সিলেটকে এক সময়ে চায়ের রাজধানী মনে হলেও সেই চা-বাগান এখন আর সিলেটেই সীমাবদ্ধ নেই। পাহাড় ছেড়ে চা-বাগান এখন নেমে আসছে সমতলে। বাংলাদেশের আবহাওয়া চা চাষের জন্য খুবই সহায়ক। এই খাতে নতুন নতুন উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসায় চায়ের সম্ভাবনাও ক্রমেই উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতরও হচ্ছে।

বাংলাদেশ চা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী দেশে এখন ১৬৭টি বাগানে চা উৎপাদিত হচ্ছে যার মধ্যে বৃহত্তর সিলেটেই ১৩৫টি চা-বাগান। এছাড়াও মৌলভীবাজারে ৯১, হবিগঞ্জে ২৫ ও সিলেটে ১৯টি। এছাড়া চট্টগ্রামে ২২, পঞ্চগড় জেলায় ৭ রাঙ্গামাটিতে ২ এবং ঠাকুরগাঁওয়ে ১টি চা-বাগান রয়েছে। দেশের বড় বড় শিল্প গ্রুপগুলো চা-বাগানের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছে।

এক নজরে নতুন চা বোর্ড চেয়ারম্যানের বর্ণাঢ্য কর্মজীবন
বাংলাদেশ চা বোর্ডের নতুন চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন ১৯৯১ সালের ২০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি থেকে ২৫তম দীর্ঘমেয়াদি কোর্সের সঙ্গে পদাতিক কোরে কমিশন লাভ করেন। পেশাগত জীবনে তিনি কমান্ড, স্টাফ ও প্রশিক্ষক হিসেবে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। স্টাফ অফিসার হিসেবে ব্যানব্যাট-১/১৪’র অ্যাডজুটান্ট, ৬৫ পদাতিক ব্রিগেডের ব্রিগেড মেজর, ৫৬ ইস্ট বেঙ্গলের উপ-অধিনায়ক ও অধিনায়ক এবং সেনাসদর এম এস শাখায় সহকারী এমএসের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সেনাবাহিনীর বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতিস্বরুপ সেনা উৎকর্ষ পদকেও ভূষিত হয়েছেন।

এছাড়া মেজর জেনারেল সরওয়ার ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট প্রশিক্ষণ ব্যাটালিয়নের ব্যাটালিয়ন কমান্ডার, সদর দপ্তর ৪৪ পদাতিক ব্রিগেড এবং সদর দপ্তর ৭১ মেকানাইজড ব্রিগেডের কমান্ডার, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের পরিচালক, আর্মি সিকিউরিটি ইউনিট ও স্কুল অব ইনফ্যান্ট্রি অ্যান্ড ট্যাকটিকসের কমান্ড্যান্ট এবং সদর দপ্তর লজিস্টিক এরিয়া ও সদর দপ্তর ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও এরিয়া কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রশিক্ষক হিসেবে তিনি স্কুল অব ইনফ্যান্ট্রি অ্যান্ড ট্যাকটিকসের প্রশিক্ষক শ্রেণি-বি এবং বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে প্লাটুন কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

মিরপুরের ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন করেছেন মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন। মিরপুরের ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এনডিসি করেন তিনি। বৈদেশিক প্রশিক্ষণের মধ্যে মালয়েশিয়া থেকে কোম্পানি কমান্ডার রণকৌশল কোর্স, আর্মস ফোর্সেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ, সৌদি আরব হতে গ্রাজুয়েশন, কানাডিয়ান ফোর্সেস কলেজ থেকে কানাডিয়ান সিকিউরিটি প্রোগ্রাম ও যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল ডাইরেক্টর ইন্টেলিজেন্স কোর্সও করেছেন তিনি। চৌকস এই সেনা কর্মকর্তা বাংলাদেশ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ইন ডিফেন্স স্টাডিজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইবিএ ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তিনি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী হিসেবে ব্যানব্যাট-৭’র সঙ্গে ইরাক ও কুয়েত এবং ব্যানব্যাট-১/১৪’র সঙ্গে আইভরিকোস্টে প্লানিং অফিসার হিসেবে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তর সফল দায়িত্ব পালন করেছেন।

কালের আলো/এমএএইচ/এমএএএমকে