ছাদখোলা বাসে সাবিনা-তহুরাদের স্বপ্নিল যাত্রা
প্রকাশিতঃ 11:08 pm | October 31, 2024
ক্রীড়া প্রতিবেদক, কালের আলো:
বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) বিকেল। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করলো সাবিনা-মনিকারা। সড়কের দুই পাশে তাদের অভিবাদন জানালেন সবাই। নির্দিষ্ট রুট দিয়ে বাফুফে ভবনে আসতে তিন ঘণ্টা সময় লাগলো। এই সময়ের পুরোটাই মেয়েরা নানাভাবে মেতে ছিল। এয়ারপোর্টে ছাদখোলা বাস ছাড়ার আগে সমর্থকরা ফ্লেয়ারের মাধ্যমে রঙিন ধোঁয়া উড়িয়েছে। বাফুফে ভবনে এসেও একই চিত্র। সমর্থকরা অন্ধকার ভেদ করে ধোঁয়া উড়িয়ে সাবিনাদের বরণ করে নেন।
এর আগে ঢাকায় বিমানবন্দরে নেমে জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে আসেন বাংলাদেশ জাতীয় নারী দলের কোচ, অধিনায়কসহ অন্যরা। কথা বলতে এসে তাদের উচ্ছ্বাস ছিল দেখার মতো। জাতীয় দলের সাবিনা খাতুন টানা দ্বিতীয়বারের মতো অধিনায়ক হয়ে শিরোপা জিতেছেন। নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে এসে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘প্রথমেই ধন্যবাদ দিতে চাই দেশের মানুষকে, যারা এই জয়ের জন্য অধীর আগ্রহে ছিলেন। সকলকে খুশি করতে পেরে দলের ও বাফুফের সবাই অনেক আনন্দিত। সর্বপ্রথম ধন্যবাদ দিতে চাই সাবেক প্রেসিডেন্ট কাজী সালাউদ্দিন স্যার ও উইমেন্স কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ এবং বর্তমান প্রেসিডেন্ট তাবিথ আওয়াল স্যার ও নতুন কমিটিকে। সকলের দোয়া ও সমর্থনে আজ এই সফলতা এসেছে।’
- বাফুফে ভবনে পৌঁছতে তিন ঘণ্টা
- নগরবাসীর সঙ্গে জয় উৎসব
- ছাদখোলা বাসে বিজয় প্যারেড
- পটপরিবর্তনের ছোঁয়া সাফজয়ীদের বাসেও
- এক কোটি টাকা পুরস্কার দিলেন ক্রীড়া উপদেষ্টা
নেপালকে তাদের মাটিতেই হারিয়ে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল টানা দ্বিতীয়বার সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ফুটবলে দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট জেতা নারী দলকে বরণ করতে ছাদখোলা বাসে সংবর্ধনার ব্যবস্থা করে বাফুফে। দুপুরে ট্রফি নিয়ে দেশের মাটিতে পা রাখার পর সংবাদ সম্মেলন শেষে শুরু হয় ছাদখোলা বাসে সাবিনা-ঋতুপর্ণাদের বিজয় প্যারেড। এই বাসে করে বাফুফে ভবনে যান মেয়েরা। পথে নগরবাসীর সঙ্গে জয় উৎসব করেন সাফজয়ীরা।
বাসে উৎসবের আমেজে অধিনায়ক সাবিনা খাতুনের কাঁধে জড়ানো বাংলাদেশের পতাকা। তহুরা আক্তার একাধিকবার ক্যামেরার সামনে ওড়ালেন বাংলাদেশের পতাকা। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ট্রফি সবার সামনে। বাসটি বিমানবন্দর, এক্সপ্রেসওয়ে, এফডিসি, সাত রাস্তার মোড়, মগবাজার ফ্লাইওভার, কাকরাইল, পল্টন, নটরডেম কলেজ, শাপলা চত্বর হয়ে বাফুফে ভবনে যায়। ছাদখোলা বাসে উঠেই দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়ে নিজের ফেসবুকে সানজিদা লিখেন, ‘ছাদখোলা বাসে। স্বপ্নিল যাত্রা। ধন্যবাদ দেশবাসী।’
ছাদখোলা বাসের গতবারের থেকে এবারের চিত্র কিছুটা আলাদা। দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে সাফজয়ীদের বাসেও। চ্যাম্পিয়নদের ছবি দিয়ে বাস সাজানো হয়। গতবার সাফ চ্যাম্পিয়নদের জন্য বাসের ব্যবস্থা করেছিল ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। তাতে বাসে ফুটবলারদের পাশাপাশি ছিল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের ছবি। তাতে সমালোচনা হয়েছিল অনেক। এবার দ্বিতীয় শিরোপা জিতে দেশে ফিরে এসে সাবিনারা ব্যতিক্রম দৃশ্য দেখলো। বিমানবন্দরে বাফুফের নির্বাহী কমিটির কর্মকর্তারা ফুল ও মিষ্টি মুখ করান। এরপর সংবাদ সম্মেলন থেকে ছাদখোলা বাসে তাদের আর দেখা যায়নি। বাফুফের নতুন সভাপতি তাবিথ আউয়াল এসে আগের প্রথা বন্ধ করে দিয়েছেন। শুধু সাফজয়ী দলকেই প্রাধান্য দিতে বলা হয়েছিল। আদতে হয়েছেও তাই। নারী ফুটবলার ও কোচ এবং টিম ম্যানেজমেন্টের ছাড়া অন্য কোনও কর্মকর্তাদের দেখা মিলেনি বাসে।
ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এদিন বিকাল সোয়া পাঁচটায় আসেন বাফুফে ভবনে। সাবিনারা আসার পর বাফুফের তৃতীয় তলায় কনফারেন্স রুমে যান উপদেষ্টা। সেখানে খেলোয়াড়দের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন তিনি। তার সঙ্গে ছিলেন মন্ত্রণালয় ও এনএসসির কর্মকর্তারা। ক্রীড়া উপদেষ্টা ফুল ফিয়ে সাফ জয়ীদের বরণ করে নেন। পরে সাবিনাদের হাতে এক কোটি টাকার চেক তুলে দিয়ে নানা আশাব্যঞ্জক কথাও শোনালেন। ক্রীড়া উপদেষ্টা শুরুতে বলেছেন, ‘বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে টানা দ্বিতীয়বারের মতো নেপালকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। দেশে ফেরার পর তাদের সংবর্ধনা জানাতে আমি বাফুফেতে এসেছি এবং আপনারা জানেন আমাদের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গেই বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের সঙ্গে দেখা করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন। আগামী শনিবার বেলা ১১টায় তিনি তার বাসভবনে নারী ফুটবল দলকে দাওয়াত করেছেন। মেয়েরা সেদিন স্যারের সঙ্গে দেখা করবেন।’
এক কোটি টাকা পুরস্কার তুলে দিয়ে আসিফ বলেছেন, ‘নারী ফুটবল দলের এই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অর্জন এবং জাতিকে এমন সুন্দর একটা বিজয় উপহার দেওয়ার জন্য আমরা যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে নারী ফুটবল দলকে এক কোটি টাকা পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা করেছি এবং একই সঙ্গে আমাদের বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও একটা পুরস্কার (২০ লাখ টাকা) ঘোষণা করেছে তাদের জন্য।’
নেপালে ফাইনালে বাংলাদেশ ২-১ গোলে জিতে ট্রফি জয় করেছে। ফাইনালের কথা তুলে ধরে ক্রীড়া উপদেষ্টা বললেন, ‘নেপালের স্টেডিয়ামের সমর্থকরা তাদের দলকে সমর্থন জানিয়ে যে চিৎকার করছিল, সেটার বিরুদ্ধেও তারা দারুণ আত্মবিশ্বাস দেখিয়ে বিজয় ছিনিয়ে আনায় তাদের আবারও অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। দেশবাসী যেভাবে তাদের বরণ করে নিয়েছে, তার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।’
বৈষম্য নিয়ে পরিষ্কার বার্তা দিলেন আসিফ, ‘আপনারা জানেন বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল ও বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের মধ্যে কিছু বৈষম্য ও সুযোগ সুবিধার ব্যাপারে কিছু অভিযোগ আছে। আমরা সেগুলো জেনেছি এবং সেই বিষয়গুলো সমাধানের জন্য ইতোমধ্যে বাফুফের সঙ্গে কথা বলেছি। বিসিবির সঙ্গেও কথা বলছি। এই বিষয়গুলো আমরা দ্রুতই সমাধান করতে পারবো বলে আশা রাখছি। আগামী দিনে বাংলাদেশের নারীরা যেভাবে আন্তর্জাতিক অর্জন ছিনিয়ে আনছে, আশা করি আরও বড় কোনও টুর্নামেন্ট, আরও বড় কোনও শিরোপা তারা ছিনিয়ে আনবে বলে আমরা আশাবাদী। এবং এ ব্যাপারে যে কোনও ধরনের সহায়তা ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে করার জন্য সর্বোচ্চ সদিচ্ছা আছে এবং সামনের দিনে আমরা এগুলো করবো।’
কালের আলো/এমএএএমকে