ঘুরে দাঁড়িয়েছে ডিইডব্লিউ, আরও আধুনিক ও যুগোপযোগী করতে নৌবাহিনী প্রধানের নির্দেশে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা
প্রকাশিতঃ 10:36 pm | November 02, 2024
বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:
নানা কারণে ২০০২ সালে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল দেশের প্রথম ডকইয়ার্ড, নারায়ণগঞ্জের ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেড (ডিইডব্লিউ)। ২০০৬ সালে বাংলাদেশ নৌবাহিনী দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র ১৮ বছরে দেশের সবচেয়ে লাভজনক ডকইয়ার্ডগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে এটি। ভারতীয় উপমহাদেশে জাহাজ নির্মাণশিল্পের অন্যতম প্রাচীন এই প্রতিষ্ঠানটিকে আরও আধুনিক ও যুগোপযোগী করতে এবার গ্রহণ করা হয়েছে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০২৪-২০২৮)। ডিইডব্লিউ এর চেয়ারম্যান নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম নাজমুল হাসান এর নির্দেশে গ্রহণ করা এই পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে ডকইয়ার্ড এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস্ লিমিটেড একটি ডিজিটাল ও অটোমেশন সুবিধা সম্পন্ন অত্যাধুনিক ও ‘গ্রীন’ শিপইয়ার্ডে রূপান্তরিত হবে।
শনিবার (২ নভেম্বর) নারায়ণগঞ্জের ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেড (ডিইডব্লিউ) এর ‘বোর্ড অব ডিরেক্টর’দের (বিওডি) ৫৫তম সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম নাজমুল হাসান। এই পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রনয়ণের ফলে দেশীয় প্রযুক্তি এবং জনশক্তি ব্যবহারের মধ্যমে আন্তর্জাতিক মানের জাহাজ নির্মাণ শিল্পে বাংলাদেশ আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
জানা যায়, প্রাচ্যের ডান্ডিখ্যাত নারায়ণগঞ্জের বাণিজ্যিক ঐতিহ্যের সঙ্গে ডিইডব্লিউ’র ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। ১৯২২ সালে ব্রিটিশ সরকার নারায়ণগঞ্জের সোনাকান্দা এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীতীরে ডকইয়ার্ডটি গড়ে তোলে। শুরুতে নামকরণ হয় নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ড। স্থানীয়ভাবে সোনাকান্দা ডকইয়ার্ড নামে পরিচিত। ১৯৫৬ সালে ডকইয়ার্ডটির নাম পাল্টে ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার ওয়ার্কস লিমিটেড করা হয়। বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরোনো এই ডকইয়ার্ড ২০২২ সালে শতবর্ষপূর্তি উদযাপন করে। ‘নিরাপত্তাই প্রথম’ স্লোগান নিয়ে কাজ করা ডিইডব্লিউ আন্তর্জাতিক মান রক্ষা করে সব ধরনের নৌযান তৈরি করছে। নারায়ণগঞ্জের ইতিহাস বইয়ের তথ্যমতে, ‘স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে কুয়েতে চারটি মালবাহী জাহাজ রপ্তানির মধ্য দিয়ে নারায়ণগঞ্জ থেকে জাহাজ রপ্তানি শুরু করেছিল শতবর্ষী ডিইডব্লিউ।’
আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন জাহাজ নির্মাণ এই কোম্পানিটি স্বাধীনতার পর ১৯৮৯ সালে আধুনিকায়ন করা হয়। কিন্তু নানাবিধ কারণে সরকারি প্রতিষ্ঠানটির উন্নয়ন বাধাপ্রাপ্ত হয়। ফলে ২০০২ সালে এটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ২০০৬ সালে বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে ডকইয়ার্ডটি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর দক্ষ নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠানটি ধীরে ধীরে অলাভজনক অবস্থা থেকে বর্তমানে দেশের একটি অন্যতম লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।
সূত্র জানায়, করোনা মহামারিতে পুরো জাহাজ নির্মাণশিল্প যেখানে মুখ থুবড়ে পড়ে তখন ডিইডব্লিউ ২০১৯-২০ অর্থবছরে আয় করে ১ হাজার ৬১১ কোটি টাকা। আর এসবই সম্ভব হয়েছে নৌবাহিনীর দক্ষ ব্যবস্থাপনার বদৌলতেই। কাজের মানের কারণে প্রতিষ্ঠানটি আইএসও সনদসহ আন্তর্জাতিক একাধিক সনদ অর্জন করেছে। প্রতিষ্ঠানের গতানুগতিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ না করে নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম নাজমুল হাসান এর নির্দেশে বাস্তবসম্মত এবং চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে স্থাপনা ও শ্রমিকের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করেছে। একসময়ে ধ্বংসপ্রাপ্ত এই ডকইয়ার্ডটি বাংলাদেশ নৌবাহিনীর অধীনে পরিচালিত হওয়ার পর থেকে পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়িয়ে চমক তৈরি করেছে।
আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, শনিবার (২ নভেম্বর) নারায়ণগঞ্জের ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেড (ডিইডব্লিউ) এর ‘বোর্ড অব ডিরেক্টর’দের (বিওডি) ৫৫তম সভায় বিওডি’র সভাপতি সহকারী নৌবাহিনী প্রধান (ম্যাটেরিয়াল) রিয়ার এডমিরাল খন্দকার আক্তার হোসেন এবং সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় প্রতিষ্ঠানটির পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০২৪-২০২৮) গৃহীত হয়েছে। ইয়ার্ডের আগামী ৫ বছরের উন্নয়ন পরিকল্পনায় গৃহীত পদক্ষেপগুলো হচ্ছে- অপারেশনাল সক্ষমতা বৃদ্ধি, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, মানবসম্পদ উন্নয়ন, অত্যাধুনিক শিপইয়ার্ডে রূপান্তর, ব্যবসা সম্প্রসারণ সংক্রান্ত পরিকল্পনা, গ্রীণ শিপইয়ার্ড বিনির্মাণ, ব্যয় হ্রাসের পরিকল্পনা, টেকনোলজি ট্রান্সফারের পরিকল্পনা এবং বাজেট পর্যালোচনা ও পরিকল্পনা বাস্তবায়ন।
কালের আলো/এমএএএম