ওলামা-মাশায়েখদের ৯ দফায় শেষ হলো ইসলামি সম্মেলন
প্রকাশিতঃ 5:06 pm | November 05, 2024
নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
তাবলীগ, কওমি মাদরাসা ও দ্বীন রক্ষায় ৯ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশসহ দেশের তাবলীগ জামাতের শীর্ষ আলেমরা। এই ৯ দফা ঘোষণার মধ্য দিয়ে সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের এই ইসলামি সম্মেলন।
রাজধানীর (৫ নভেম্বর) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সব স্তরের আলেম-মাশায়েখদের উপস্থিতিতে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের নিয়ে ‘উলামা মাশায়েখ বাংলাদেশে’র ব্যানারে আয়োজিত ইসলামি মহাসম্মেলন থেকে এসব দাবি ঘোষণা করা হয়।
সম্মেলনে আলেমরা বলেন, দেশে কওমি মাদরাসাগুলো দারুল উলুম দেওবন্দের অনুকরণে শতাব্দীকাল ধরে দ্বীনি শিক্ষা-কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। আওয়ামী সরকারের আমলে বিভিন্ন পর্যায়ে প্রশাসন ও সরকারদলীয় লোকজন নানাভাবে এতে হয়রানি ও হস্তক্ষেপ করেছে। আমরা লক্ষ করছি, ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পরও কওমি মাদরাসাগুলোর ওপর ফ্যাসিস্ট সরকারের ঘাপটি মেরে থাকা একটি বিশেষ মহল সুকৌশলে হস্তক্ষেপের পাঁয়তারা করে চলছে। মহাসম্মেলন থেকে তারা এ ধরনের হয়রানি ও হস্তক্ষেপ থেকে বিরত থাকার জোর দাবি জানান।
মওলানা সাদের বিরুদ্ধে ‘কুরআন-সুন্নাহর অপব্যাখ্যা, নবী-রাসূল ও সাহাবায়ে কেরামের সমালোচনা এবং আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আক্বিদারিবোধী’ বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগ তোলেন ওলামা-মাশায়েখরা।
মওলানা সাদকে ‘স্বঘোষিত আমির’ অভিহিত করে তারা বলেন, দাওয়াত ও তাবলিগের এই মকবুল মেহনত যুগ যুগ ধরে হজরত মাওলানা ইলিয়াস (রহ.), হজরত মাওলানা ইউসুফ (রহ.) ও হজরত মাওলানা এনামুল হাসানের (রহ.) উসুলের ওপর পরিচালিত হয়ে আসছে। কিন্তু মাওলানা সাদ তাবলিগ জামাতের স্বীকৃত উসুল তথা নীতিমালা উপেক্ষা করে নিজস্ব মতের ভিত্তিতে পরিচালনা করার অপপ্রয়াস চালান। এ কারণে দারুল উলুম দেওবন্দসহ উপমহাদেশের প্রখ্যাত উলামায়ে কেরাম তার গুমরাহিপূর্ণ বক্তব্য ও অবস্থানের ব্যাপারে উম্মাহকে সতর্ক করেছেন। তাই এর আগে বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমান সাদ সাহেবকে বাংলাদেশে আসতে বাধা দিয়েছেন। সম্মেলন থেকে বর্তমান সরকারের কাছে মওলানা সাদকে বাংলাদেশে আসতে না দেওয়ার দাবি জানানো হয়।
আলেম-মাশায়েখদের ৯ দফা দাবিগুলো হলো—
কওমি মাদরাসাগুলোর ওপর থেকে ‘ঘাঁপটি মেরে থাকা’ ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের অনুসারী মহলের সব ধরনের হয়রানি ও হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে;
সাধারণ শিক্ষা সিলেবাসের সব স্তরে ধর্মশিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে;
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মজলুম আলেম-ওলামা ও তৌহিদি জনতার বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে;
২০১৩ সালের শাপলা চত্বরে রাতের আঁধারে সারা দেশ থেকে আসা নবীপ্রেমিক নিরীহ ছাত্র-জনতা ও মুসল্লিদের ওপর বর্বরোচিত ও নৃশংস গণহত্যার দোষীদেরকে অবিলম্বে শাস্তির আওতায় এনে বিচার কার্যকর করতে হবে এরং সারা দেশের আলেম, মাদরাসার শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনতার ওপর দায়ের করা মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে;
২০১৮ সালের ১ ডিসেম্বর টঙ্গী ময়দানের জোড়ের প্রস্তুতিমূলক কাজে অংশ নেওয়া মাদরাসার নিরীহ ছাত্র-শিক্ষক ও সাধারণ তাবলিগি সাথী ভাইদের ওপর পুলিশের কিছু কর্মকর্তার সহযোগিতায় মওলানা সাদপন্থিদের নৃশংস হামলার ঘটনায় হামলাকারী ও তাদের সহযোগীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে;
কুরআন-সুন্নাহর অপব্যাখ্যা, নবী-রাসূল ও সাহাবায়ে কেরামের সমালোচনা ও আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আক্বিদাবিরোধী বক্তব্য দেওয়া ‘স্বঘোষিত আমির’ মাওলানা সাদ কন্ধলভীকে কোনো অবস্থাতেই বাংলাদেশে আসতে দেওয়া যাবে না;
উলামায়ে কেরামের তত্ত্বাবধানে শুরারি নেজামে পরিচালিত বিশ্ব ইজতেমা এক পর্বে আয়োজন করা কঠিন হওয়ায় ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রথম পর্ব ও ৭ থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দ্বিতীয় পর্বে ইজতেমা আয়োজন করা হবে;
কাকরাইল মসজিদ ও টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমার ময়দানের যাবতীয় কার্যক্রম উলামায়ে কেরামের তত্ত্বাবধানে শুরারি নেজামে পরিচালিত হবে, সেখানে সাদপন্থিদের কোনো কার্যক্রম চালাতে দেওয়া হবে না; এবং
সরকারকে ইসলাম ও মুসলমানদের দুশমন অভিশপ্ত কাদিয়ানিদের অবিলম্বে
অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে এবং সেই সঙ্গে কাদিয়ানিদের ইসলামি পরিভাষা ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে হবে।
কালের আলো/এমএএইচ