রমজানে দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক রাখতে আগাম প্রস্তুতি
প্রকাশিতঃ 10:51 am | November 08, 2024
কালের আলো রিপোর্ট:
রমজান আসতে এখনও বাকি মাস চারেক। তবে রমজানে দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক রাখতে আগাম প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। ভোগ্যপণ্যের আমদানি ও মজুদ বাড়ানোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। পেঁয়াজ, ছোলা, ভোজ্যতেল, চিনি, ডাল ও আটার মতো নিত্যপণ্য রমজানের সময় সহনীয় দামে কিনতে পারবেন ভোক্তারা। নাগালের মধ্যে থাকবে দাম। ওই সময় স্বস্তি থাকবে নিত্যপণ্যের বাজারে। এ লক্ষ্যে পণ্য আমদানি, শুল্ক হ্রাসসহ নানা উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) বলছে, ব্যবসায়ীদের মানসিকতার পরিবর্তন না হলে কাজে আসবে না কোনো উদ্যোগই।
জানা যায়, রজমানকে সামনে রেখে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দফতর এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে। সম্প্রতি অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, আমারা নিশ্চিত করেছি চাল, চিনি, গমসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, যেমন রোজার জন্য ডাল ও খেজুরের বরাদ্দের সমস্যা হবে না। কোনো ব্যাপারেই যেন ভোগ্যপণ্য বা ভোক্তাদের কোনো সমস্যা না হয় সেজন্য এসব পণ্য আমদানিতে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
রমজান সামনে রেখে নিত্যপ্রয়োজনীয় ১১ ধরনের পণ্য আমদানি সহজ করে দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে বিশেষ সুবিধা দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চাল, গম, পেঁয়াজ, ডাল, ভোজ্যতেল, চিনি, ডিম, ছোলা, মটর, মসলা ও খেজুর আমদানির জন্য ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে নগদ মার্জিনের হার ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ন্যূনতম পর্যায়ে রাখার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া অভ্যন্তরীণ বাজারে এসব পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য ঋণপত্র খুলতে অগ্রাধিকার দেয়ার জন্যও পরামর্শ দেয়া হয়েছে। আর বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে বাজার নিয়ন্ত্রণে চাল, তেল, চিনি, পেঁয়াজ, আলু ও ডিম আমদানিতে শুল্ক ছাড় দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এর মধ্যে চাল ও পেঁয়াজ আমদানিতে শুল্ক-কর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়েছে।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, শুল্ক ছাড় বা প্রত্যাহারের পর কেবল ডিমের দাম কিছুটা কমলেও বাকি ৫ পণ্যে কোনও প্রভাব নেই বাজারে। কমার বদলে উল্টো বেড়ে গেছে দাম। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, শুল্ক ছাড়ের পরও গত এক মাসের ব্যবধানে চালের দাম ১.৯ থেকে ২.৭৮ শতাংশ, সয়াবিন তেল ৬.৫৪ শতাংশ, চিনি ০.৭৬ শতাংশ, দেশি পেঁয়াজ ২৭.২৭ শতাংশ, আমদানি করা পেঁয়াজ ৫.১৩ শতাংশ ও আলুর দাম বেড়েছে ২২.৭৩ শতাংশ। তবে প্রতি হালি ডিমের দাম কমছে ১৬.৯৫ শতাংশ।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধি এবং শুল্কছাড়ে কেনা অধিকাংশ পণ্য দেশে এসে না পৌঁছানোয় কমছে না দাম। তবে রোজার আগে এসব পণ্য চলে আসবে। তখন অসাধু ব্যবসায়ীরা কোনো কারসাজি না করলে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে দাম কমবে। বিপরীতে ভোক্তারা বলছেন, শুল্ক ছাড় ও পণ্য আমদানি করে কখনোই কমেনি দাম। কঠোর মনিটরিং ব্যবস্থা প্রয়োগ না করতে পারলে দাম রোজায় আরও বাড়বে। ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন ক্যাব বলছে, ব্যবসায়ীদের মানসিকতার পরিবর্তন না হলে কাজে আসবে না কোনো উদ্যোগই।
ক্যাব সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, বাজারে ঊর্ধ্বমুখী প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম। এটি গত সরকারের সময় থেকেই বাড়তি। সরকার পতনের পর মাঝে এক সপ্তাহ দাম কমলেও এখন আবার সেটি চড়া। কারণ সরকার পতনের সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসায়ীরা পোশাক বদলেছে, কিন্তু চরিত্র বদলায়নি। তারা আগের মতোই কারসাজি করে যাচ্ছে।
রোজায় পণ্যের দাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকার দাম কমানোর জন্য পণ্য আমদানি ও শুল্ক ছাড় দিচ্ছে। কিন্তু বাজারে পর্যাপ্ত মনিটরিং হচ্ছে না। প্রতিবারই এরকম হয়ে থাকে। সরকার নানা পদক্ষেপ নেয় দাম কমানোর, তবে মনিটরিংয়ের জায়গায় ঘাটতি থেকে যায়। বাজার নিয়ন্ত্রণে পণ্য আমদানি থেকে শুরু করে ভোক্তার হাতে পৌঁছানো পর্যন্ত মনিটরিং করতে হবে। না হলে সুফল মিলবে না।
কালের আলো/এমএএইচ/ইউএইচ