স্বাতন্ত্র্য মহিমায় ভাস্বর কোর অব সিগন্যালস; গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্য ও দেশমাতৃকার সেবায় অবদানের স্বীকৃতি সেনাপ্রধানের
প্রকাশিতঃ 9:25 pm | November 13, 2024
কালের আলো রিপোর্ট:
৫৩ বছরের ল্যান্ডমার্ক স্পর্শ করেছে কোর অব সিগন্যালস। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গৌরবময় ঐতিহ্য এই কোর’র অগ্রগতিও ঈর্ষণীয়। যুদ্ধের ময়দানে যোগাযোগ ব্যবস্থার গুরুত্ব অনস্বীকার্য হওয়ায় দেশপ্রেমী এই বাহিনীটির একটি গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য অংশ হিসেবে কোর অব সিগন্যালস স্বাতন্ত্র্য মহিমায় ভাস্বর করেছে নিজেদের। প্রতিনিয়ত অর্পিত দায়িত্ব পালন করে চলেছে সফলতা ও নিষ্ঠার সঙ্গেই। ‘দ্রুত ও নিশ্চিত’- এই মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত থেকে কোরটিতে ক্রমশ যুক্ত হয়েছে উন্নত প্রযুক্তির যোগাযোগ সরঞ্জামাদি। রণ যোগাযোগ ব্যবস্থাকে করেছে সমৃদ্ধ-স্বনির্ভর। স্বাধীনতার পর দেশ গঠন ও দেশমাতৃকার সেবাতেও তাদের অবদান এবার গুরুত্বের সঙ্গেই উচ্চারিত হয়েছে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এর কণ্ঠেও।
কোর অব সিগন্যালস্ এর গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্য এবং দেশমাতৃকার সেবায় অবদানের কথা তিনি তুলে ধরেছেন। বুধবার (১৩ নভেম্বর) যশোর সেনানিবাসের সিগন্যালস্ ট্রেনিং সেন্টার এন্ড স্কুলে (এসটিসিএন্ডএস) কোর অব সিগন্যালস এর বাৎসরিক অধিনায়ক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সেনাপ্রধান আধুনিক যোগাযোগ, যোগাযোগ নিরাপত্তা, তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়ন ও গবেষণার উপর গুরুত্বারোপ করে সিগন্যাল কোরের সব সদস্যদের একবিংশ শতাব্দীর কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সর্বদা প্রস্তুত থাকতে দিকনির্দেশনা প্রদান করেছেন।
এর আগে সেনাপ্রধান সিগন্যালস্ ট্রেনিং সেন্টার এন্ড স্কুলে এসে পৌঁছলে আর্মি ট্রেনিং এন্ড ডকট্রিন কমান্ডের (আর্টডক) জিওসি লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো.মাইনুর রহমান, সেনা সদর দপ্তরের অ্যাডজুটেন্ট জেনারেল (এজি) মেজর জেনারেল মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান, মিলিটারি ইন্সটিটিউট অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি (এমআইএসটি) কমান্ড্যান্ট মেজর জেনারেল মো.নাসিম পারভেজ এবং ৫৫ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও যশোরের এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল জে এম ইমদাদুল ইসলাম তাকে অভ্যর্থনা জানান।
সামরিক বিশ্লেষকদের ভাষ্য মতে- আধুনিক যুদ্ধে রণকৌশলগত বিষয়ে উপযুক্ত সিগন্যাল যোগাযোগ ও কম্পিউটার প্রযুক্তির প্রয়োগ যুদ্ধক্ষেত্রে এনেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। এই পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিক প্রযুক্তি ও উন্নত যোগাযোগ সরঞ্জামাদির সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে নিরাপদ এবং নিরবিচ্ছন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রয়োগও বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ইতোমধ্যে সাটেলাইট হাব স্টেশন স্থাপন করে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকায়নে কাজ করছে। এটির মাধ্যমে সেনাবাহিনীর সামগ্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে একটি অনন্য মাত্রা যোগ হয়েছে।
- একবিংশ শতাব্দীর কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সর্বদা প্রস্তুত থাকতে দিকনির্দেশনা
- সেনাবাহিনীর গৌরবময় ঐতিহ্য এই কোর’র অগ্রগতি ঈর্ষণীয়
- প্রতিনিয়ত অর্পিত দায়িত্ব পালন করে চলেছে সফলতা ও নিষ্ঠার সঙ্গেই
- সমৃদ্ধ-স্বনির্ভর করেছে রণ যোগাযোগ ব্যবস্থাকেও
জানা যায়, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধেও কোর অব সিগন্যালস এর রয়েছে বীরত্বগাঁথা ইতিহাস। সীমিত জনবল ও সরঞ্জাম নিয়ে বিভিন্ন সেক্টরে সিগন্যাল যোগাযোগ রক্ষার পাশাপাশি সিগন্যাল কোরের বীর সেনানীরা সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে কোর অব সিগন্যালস এর ১ জন কর্মকর্তা, ৩ জন জেসিও এবং ৮২ জন অন্যান্য পদবীর সৈনিক শহীদ হন। মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে এ সকল অকুতোভয় বীর সেনানীরা দেশপ্রেম ও আত্মত্যাগের যে দুর্লভ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন সেটি সেনাবাহিনীর আগামীর পথ চলার অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে বলেও মনে করেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। ইতোমধ্যেই সিন্যালস কোরে তিনটি সিগন্যাল ব্যাটালিয়ন ও তিনটি স্ট্যাটিক সিগন্যাল কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। এছাড়া সংযোজন করা হয়েছে নতুন রেডিও রিলে সরঞ্জাম, ডিজিটাল এক্সচেঞ্জসহ অত্যাধুনিক সরঞ্জামাদি।
যুদ্ধের প্রচলিত মাত্রা জল, স্থল ও আকাশ ছাড়িয়ে এখন প্রসারিত হয়েছে ইলেক্ট্রনিক ও সাইবার স্পেসে। এসব কিছুর ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার দক্ষতাই আগামীতে যুদ্ধক্ষেত্রে কোনো প্রশিক্ষিত বাহিনীর সাফল্য নির্ভর করবে। আধুনিক যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কে সঠিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সিগন্যালস কোর আরও সামনে এগিয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন সেনাপ্রধান। তিনি মনে করেন, সিগন্যাল যোগাযোগ, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার, তথ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, সাইবার ও ইলেক্ট্রনিক যুদ্ধে শত্রুর ওপর আধিপত্য বিস্তারের মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিজয় অর্জনে সহায়তা করাই সিগন্যালস কোরের মূল লক্ষ্য। আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, কোর অব সিগন্যালসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে সেনাপ্রধান এই কোরের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, গবেষণা, পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোকপাত করেন।
আইএসপিআর আরও জানায়, পরে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান যশোর সেনানিবাসে ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট আর্মি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এই হাসপাতাল নির্মাণ সুদক্ষ চিকিৎসক তৈরীর পাশাপাশি সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্য এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে বলেও আশাবাদী তিনি।
কালের আলো/এমএএএমকে