ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচনের রোডম্যাপ চায় বিএনপি

প্রকাশিতঃ 12:16 pm | November 23, 2024

মো.শামসুল আলম খান, কালের আলো:

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেই মনোযোগ দিয়েছে বিএনপি। বিশেষ করে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে দলটির মাঝে আস্থার দোলাচল রয়েছে। দল ক্ষমতায় আসবে এমন সম্ভাবনায় নির্বাচনকে বিলম্বিত করার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সরকার সংশ্লিষ্ট কারও কারও বক্তব্য তাদের শঙ্কা বাড়িয়েছে বহুগুণ। এসব বিষয় মাথায় রেখেই ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের রোডম্যাপের জন্য চাপ সৃষ্টি, জেলায় জেলায় জনসংযোগ আর দলের সাংগঠনিক শক্তি মজবুত করার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে তাঁরা। সবকিছুই সতর্কভাবে করার মধ্যে দিয়ে নির্বাচনের জন্য নিজেদের পুরোমাত্রায় প্রস্তুত করতে চায় দলটি।

জানা যায়, রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের পর বিএনপি এখন স্বস্তিতে রয়েছে। মামলা-হামলার কোন চাপ নেই। তবে নির্বাচন নিয়ে প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য নানা ষড়যন্ত্র দলটির শীর্ষ নেতৃত্বকে ভাবিয়ে তুলছে। ইতোমধ্যেই দলীয় নেতা-কর্মীদের সতর্ক করেছেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। জাতীয় নির্বাচনের আগেই সাংগঠনিকভাবে শক্তপোক্ত একটি অবস্থান নিশ্চিত করতে চায় দলটি। এরই ধারাবাহিকতায় সারা দেশে কর্মীসভা ও বর্ধিত সভা হচ্ছে। বিভিন্ন অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। সংগঠনের কোন নেতার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ এলেই কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান জাতীয় রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন আনতে উদ্যোগী ভূমিকা পালন করছেন। বক্তব্য-বিবৃতির মাধ্যমে নানা রকম দিকনির্দেশনা প্রদান করছেন। একইভাবে দলের সব স্তরে সাংগঠনিক কাজ গঠনমূলক ও কার্যকর করতেও গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিচ্ছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, চলমান পরিস্থিতিতে নির্বাচন নিয়ে রীতিমতো আশাহত হয়েছে বিএনপি। স্বয়ং দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এমন আশাহত হওয়ার কথা জানিয়েছেন। কারণ বিএনপি জানে নির্বাচন বিলম্বিত হলে বিএনপির ‘বর্তমান জনপ্রিয়তা’ এবং ‘পরিস্থিতির ওপর নিয়ন্ত্রণ’ একই ধরনের না-ও থাকতে পারে। সে কারণেই ‘নির্বাচন বিলম্বিত করার চেষ্টা’ তাদের কাছে ‘ষড়যন্ত্র’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

দলীয় সূত্র জানায়, বর্তমান সরকার ডিসেম্বর মাসের মধ্যে যৌক্তিক কোনো রোডম্যাপ ঘোষণা না করে তাহলে দলটি নির্বাচনের জন্য আন্দোলনের দিকেও যেতে পারে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ ও গতি প্রকৃতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। সেখানেই নির্বাচনের রোডম্যাপের জন্য সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে। তারা ডিসেম্বরের মধ্যেই রোডম্যাপ চায়। তা না হলে তারা সরকারের ওপর চাপ আরও বাড়িয়ে দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সূত্র মতে, নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচনের চাপ বৃদ্ধির পাশাপাশি কেন্দ্র থেকে তৃণমূল সংগঠনকে গুছিয়ে আনতে একইভাবে জোর দিয়েছে বিএনপি। ইতোমধ্যেই প্রতিটি নির্বাচনী আসনে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা সরব হয়ে ওঠেছেন। বিভিন্ন কৌশলে ও নানা রকমের জনসম্পৃক্ত কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে তারা মূলত নির্বাচনী প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। জনসংযোগ ও জনস্বার্থে কর্মসূচি পালনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বার্তা তাঁরা অনুসরণ করছেন। নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তারেক রহমানের স্পষ্ট নির্দেশনা, যে করেই হোক এলাকার জনগণের ভালোবাসা ও মন জয় করতে হবে। এ লক্ষ্যেই পূর্ণ মনোযোগ দিয়েছেন সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা।

অন্তর্বর্তী সরকার বারবার জানিয়েছে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অর্থাৎ সংস্কার প্রক্রিয়া শেষ না হলে কোন অবস্থাতেই নির্বাচন হবে না। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারাও এ বিষয়ে একমত হয়েছেন। তবে বিএনপি চাচ্ছে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকার নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু করুক। যাতে করে জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকারের কাছে তাঁরা ক্ষমতা হস্তান্তর করতে পারেন। নিরপেক্ষ নির্বাচনে জনগণের ভোটে যে-ই সরকার গঠন করুক না কেন মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগ নিশ্চিত করাটাই বিএনপির টার্গেট। এ লক্ষ্যে সারা দেশে জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট নানা রকমের কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নেমেছে বিএনপি। দলীয় নেতা-কর্মীদের যে করেই হোক সাধারণ মানুষের মন জয় ও ভালোবাসা অর্জনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে দলের পক্ষ থেকে।

গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিএনপির অনুকূলে আসার পর থেকেই দেশজুড়ে দল গঠনের কাজ শুরু করেছে দলটি। এরই মধ্যে অনেক জেলা ও মহানগরীর কমিটি বাতিল ও পুনর্গঠনও করা হচ্ছে। দল ও অঙ্গসংগঠনের প্রায় প্রতিটি ইউনিটকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। এসব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমেই নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে বিএনপি।

শুক্রবার (২২ নভেম্বর) বিকেলে খুলনার সম্প্রীতি সমাবেশে বিএনপির কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল বলেছেন, ‘এ সরকারের প্রতি আমাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। তবে নির্বাচন নিয়ে দুয়েকজন উপদেষ্টা টালবাহানা শুরু করেছে। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, দেশ এখন নির্বাচনের ট্রেনে উঠে পড়েছে, এ ট্রেন আর থামবে না। দেশের মানুষ নির্বাচিত সরকারকে দেখতে চায়।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান একটি গণমাধ্যমকে বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার ডিসেম্বর মাসের মধ্যে রোডম্যাপ ঘোষণা না করলে নির্বাচনের জন্য আন্দোলনে নামতে পারি। আমরা চাই একটি অবাধ-সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হোক। আর এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে দলের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

নির্বাচন ইস্যুতে বিএনপি নেতারা মনে করছেন, রাষ্ট্র কাঠামোর সংস্কার এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়া– দুটিই সমান্তরালভাবে চলা উচিত। এ জন্য সরকারকে অবিলম্বে একটি রোডম্যাপ দিয়ে সামনে এগোনো দরকার। যতদিন পর্যন্ত এই রোডম্যাপ দেওয়া না হবে, ততদিন পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নির্বাচন বিলম্বিত হওয়ার যে শঙ্কা রয়েছে, সেটা কাটবে না। তারা আরও বলছেন, একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলো অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা করে যাচ্ছে এবং এটি অব্যাহত থাকবে। তবে সরকারের সব কার্যক্রমের ফোকাস হওয়া উচিত নির্বাচন।

কালের আলো/এমএসএএকে/এমকে