নির্বাচনে সেনাবাহিনীর ভূমিকায় ‘প্রশংসা’ প্রধানমন্ত্রী’র, ‘তুষ্ট’ সেনাপ্রধানও

প্রকাশিতঃ 10:01 am | March 08, 2019

বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো :

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করেছে দেশের স্বাধীনতা-সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। এর ফলে টানা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন মহান স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা।

দেশের গণতান্ত্রিক ধারা সমুন্নত রাখতে সেনাবাহিনী নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করায় উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন ‘হ্যাট্টিক’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নির্বাচনের চারদিনের মাথায় সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদও অর্পিত দায়িত্ব শতভাগ আস্থা ও বিশ্বাসের সঙ্গে দেশপ্রেমিক এই বাহিনী পালন করায় নিজের সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছিলেন।

আরো পড়ুন:
সেনাবাহিনীতে উচ্চাসনে নারীরা, অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপনে প্রশংসিত সেনাপ্রধান

একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটারদের নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি করতে মুন্সীয়ানার পরিচয় রেখে ‘তুষ্ট’ সেনাপ্রধান সেদিন বলেছিলেন, ‘সেনাবাহিনী নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করায় মানুষ আশ্বস্ত হয়ে ভোট দিয়েছে। আমি সেদিন (নির্বাচনের আগের দিন) যে অঙ্গীকারটা করেছিলাম আপনাদেরকে নিরাপত্তা দিবো। আপনারা নির্ভয়ে ভোট দিতে যান। আপনাদের আশেপাশে আমরা থাকবো। আমরা সেই কথা রেখেছি।’

সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ নিজের প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা, দূরদর্শিতা ও প্রায়োগিক সিদ্ধান্তের সঠিকতার জন্য স্বনামে খ্যাত। দীর্ঘ বর্ণাঢ্য চাকরি জীবনে বার বার নিজের দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের নজির স্থাপন করেছেন বর্তমান এই চার তারকা জেনারেল।

২০১২ সালে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) দায়িত্ব নিয়ে এই বাহিনীটিকে ঘুরে দাঁড়াতে অনুঘটকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি। নিজের নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্ব নিয়ে দেশের প্রতি কমিটমেন্ট থেকে বিজিবিকে পুনর্গঠনে নেতৃত্ব দিয়ে একটি আধুনিক ও গতিশীল বাহিনীতে পরিণত করার উজ্জ্বল ইতিহাসের অধিকারীও জেনারেল আজিজ আহমেদ।

সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর নিজের একাগ্রতা ও দূরদর্শিতায় একটি জ্ঞানভিত্তিক ও পেশাদার বাহিনী হিসেবে অর্জিত সুনামের ধারবাহিকতা রক্ষায় নিবেদিতপ্রাণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। তিনি বরাবরই নিজ বাহিনীর সদস্যদের বলে আসছেন, ‘দেশমাতৃকার সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য অভ্যন্তরীণ কিংবা বাহ্যিক যেকোনো হুমকি মোকাবেলায় সদা প্রস্তুত থাকতে হবে।’

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যখন শিয়রে ঠিক তখন সাম্প্রদায়িক-জঙ্গিবাদ ও যুদ্ধাপরাধী শক্তির আস্ফালনে যখন মানুষ ভোট নিয়ে ভীত সন্ত্রস্ত ঠিক তখন হতাশার উপকূলে ‘আশার বাতিঘর’ হয়ে ওঠেন সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ।

নির্বাচনের আগের দিন শনিবার (২৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর আজিমপুর কমিউনিটি সেন্টারে সেনাবাহিনীর ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে সেনাপ্রধান বলেছিলেন, ‘আপনারা নির্ভয়ে ভোট দিতে যাবেন। আমরা আশেপাশেই থাকবো। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করবো, কেউ যেন কোনো অরাজকতা সৃষ্টি করতে না পারে।’

জেনারেল আজিজ আহমেদ নির্বাচনের সময় সেনা মোতায়েনকালে নিজ বাহিনীর সদস্যদের অমিত দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছিলেন, ‘এই সেনাবাহিনী মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সেনাবাহিনী। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত এবং এই সেনাবাহিনী জাতির শেষ ভরসার বাহিনী।’

স্বাধীনতার পর এই প্রথম কোন রকম রক্তারক্তি ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবেই অনুষ্ঠিত হয়েছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সারা দেশে নির্বাচনী নিরাপত্তায় নিয়োজিত ৫০ হাজার সেনা সদস্য মোতায়েন থাকায় কোন রকম ভয়ভীতি ছাড়াই ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পেরেছেন সাধারণ ভোটাররা।

নির্বাচনের তিনদিন পর গত ০৩ জানুয়ারি রাজধানীর পূর্বাচলে জলসিড়ি আবাসন প্রকল্প এলাকায় তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের সেনাপ্রধান বলেছিলেন, ‘নির্বাচন উপলক্ষে সেনাবাহিনী প্রতিদিন অন্তত এক হাজারের বেশি টহল কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে তারা গিয়েছে।

জনগণকে নির্ভয়ে ভোট দেওয়ার ব্যাপারে আশ্বস্ত করা হয়েছে। এ জন্য ভোটারের সমাগমও বেশি হয়েছে। সেই হিসেবে মনে করি যেভাবে সেনাবাহিনী দায়িত্ব পালন করেছে, তাতে তাদের প্রতি জনআস্থা ও ভরসা আরো বৃদ্ধি পাবে। কেউ বলতে পারবে না সেনাবাহিনী কারও পক্ষ নিয়েছে।’

তিনি ওইদিন আরো বলেন, ‘এবারের নির্বাচনে সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব, আনসার, সিভিল প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থা একটি টিম হিসেবে কাজ করেছে। সবার লক্ষ্য ছিল অংশগ্রহণমূলক শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। সেই প্রত্যাশার ব্যত্যয় হয়নি। সেনাপ্রধান হিসেবে আমি সন্তুষ্ট। এমন কিছু সেনাবাহিনী করেনি যাতে বাহিনীর ঐতিহ্য নষ্ট হয়। সেনাবাহিনী নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করায় মানুষ আশ্বস্ত হয়ে ভোট দিয়েছে।’

একাদশ সংসদ নির্বাচনে অভাবনীয় বিজয়ের পর গত রোববার (০৩ মার্চ) রাজশাহী সেনানিবাসের বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টের ৭, ৮, ৯ ও ১০ ব্যাটালিয়নকে জাতীয় পতাকা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বঙ্গকন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘সেনাবাহিনী নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে দেশের গণতান্ত্রিক ধারা সমুন্নত রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এজন্য আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই।

সেনাবাহিনীর প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘জনগণের সেবা করার জন্য আপনাদের সার্বক্ষণিক সহযোগিতা পেয়েছি। বর্তমান সরকারের রাষ্ট্র পরিচালনায় যখনই প্রয়োজন হবে, তখনই সেনাবাহিনী জনগণের পাশে এসে দাঁড়াবে- এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এদেশের সম্পদ; দেশের মানুষের ভরসা ও বিশ্বাসের মূর্ত প্রতীক। তাই পেশাদারিত্বের কাঙ্খিত মান অর্জনে আপনাদের সবাইকে দক্ষ, সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে সৎ ও মঙ্গলময় জীবনের অধিকারী হতে হবে।’

সেনাবাহিনীর বিভিন্ন অবদান উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেনাবাহিনী তার মূল কার্যক্রমের পাশাপাশি সব সময় জাতির গঠনমূলক কর্মকাণ্ডে নিজেদের নিয়োজিত করেছে। দীর্ঘ প্রত্যাশিত পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ তদারকি, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক প্রকল্প, ফেনী জেলায় মহিপাল ফ্লাইওভার নির্মাণসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব তাদের ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে।

বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা এবং বিভিন্ন বৈদেশিক মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা আত্মত্যাগ, কর্তব্যনিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্য বয়ে আনছেন সম্মান ও মর্যাদা। এটা বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে উজ্জল করেছে।’

কালের আলো/এমএইচএ/এএ