জাহাজ কেনার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ বিএসসি এমডি

প্রকাশিতঃ 11:27 pm | November 27, 2024

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

৬টি জাহাজ কিনতে গৃহীত ঋণ পরিশোধে প্রথম কিস্তি বাবদ প্রায় ৪৭৫ কোটি ২৫ লাখ টাকার চেক প্রধান উপদেষ্টা ড.মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে হস্তান্তর করে চমক দেখিয়েছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি)। জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখতে নতুন জাহাজ কেনার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত এই সংস্থাটি। নিজেদের স্বপ্নকে আক্ষরিকতায় স্বার্থক রূপ দিতে চান বিএসসি এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কমডোর মাহমুদুল মালেক।

তিনি বলেছেন, ‘জাহাজ অর্জনই আমাদের মূল টার্গেট। কারণ এই মুহূর্তে শিপিং ব্যবসা খুব লাভজনক। ম্যানেজম্যান্টও তাদের সক্ষমতার পর্যায়ে পৌঁছেছে। সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে শিপ পরিচালনার মাধ্যমে আমরা জাতীয় অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখতে সক্ষম হবো  বলে মনে করি।’

বুধবার (২৭ নভেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রামে সংস্থাটির কনফারেন্স রুমে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ফুরফুরে মেজাজেই এসব কথা বলেন তিনি। বিএসসি এমডি কমডোর মাহমুদুল মালেক আরও বলেন, ‘আমাদের পরিকল্পনার অগ্রগণ্যতা রয়েছে।  এরমধ্যে টপ প্রাইয়োরিটি হলো জাহাজ অর্জন করা। আমাদের এখন যে পাঁচটি জাহাজ অপারেট করছি, এগুলো আমরা বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে নেওয়া। বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে চায়না এক্সিম ব্যাংকের একটা এগ্রিম্যান্ট হয়েছিল ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে। সেখানে এটি ১ হাজার ৪৫৭ কোটি টাকার প্রকল্প ছিল। আমরা সেটার ইন্টারেস্টসহ আসল ২ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা পরিশোধ করবো। এরই অংশ হিসেবে আমাদের মুনফা থেকে আমরা গতকাল (মঙ্গলবার) ৪৭৫ কোটি ২৫ লাখ ১৩ হাজার ৩৪০ টাকা মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তর করেছি। এটিকে বলা যায় টোকোন অব এক্সিবেশন।’

চায়না সরকারের সঙ্গে জাহাজ কেনার চুক্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জিটুজি ভিত্তিতে চায়নার সাথে আমাদের আরও চারটি জাহাজ কন্সট্রাকশনের প্রায় শেষ পর্যায়ে। আমাদের প্রাথমিক কর্মাশিয়াল যে এগ্রিম্যান্ট, সেটা হয়ে গেছে। লোন এগ্রিম্যান্ট কিছুটা বিলম্বিত হয়েছে। গত সপ্তাহে চায়না সিলকা ও এক্সিম ব্যাংকের প্রতিনিধি আসছিলো। ইআরডি ও আমাদের সচিবের (নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়) সঙ্গেও মিটিং হয়েছে। আমরা যতদূর জানি, রেজাল্ট ইজ পজেটিভ। যদি এ মাসের মধ্যে বা আগামী মাসের আমরা অনুমোদনটা পাই, আমরা জাহাজ কেনার প্রক্রিয়া শুরু করতে পারবো। এখানে দুইটি হলো ট্যাংকার এবং দুইটি মাদার বাল্ক।’

জাহাজ বাড়ানো প্রসঙ্গে কমডোর মাহমুদুল মালেক বলেন, ‘নিজস্ব অর্থায়নে যে দুটি জাহাজ কিনছি, সেটি নিয়ে আমাদের ইনিশিয়াল ডিসিশন হচ্ছে আমরা বাল্ক ক্যারিয়ার কিনবো। যেগুলোর সাইজ হবে ৫৫ হাজার থেকে ৬৬ হাজার টনের। ওয়ার্ল্ড মাকের্টে এ জাহাজগুলো এমপ্লয়ম্যান্টের যথেষ্ট সুযোগ আছে। এছাড়া কোরিয়ান প্রজেক্টও আমাদের সামনে আছে এবং চায়না থেকে আরও চারটি জাহাজ তৈরির অফার পেয়েছি। সবগুলো মিলে এ সময় বিএসসির অত্যন্ত সুবাতাস বইছে।’

জাহাজ কেনার পরিকল্পনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের টার্গেটের লক্ষ্যে তিনটি অপশন আমরা ডেভেলপ করেছি। এরমধ্যে একটি হলো- জাহাজ তৈরি করার। সেটা এক্সিকিউশনে দুই বছর থেকে তিন বছর সময় লাগবে। আরেকটি হলো- কনস্ট্রাকশনে থাকা কোনো জাহাজ থাকে সেটা আমরা কিনবো। এছাড়া চালু থাকা পাঁচ বছরের কমে কোনো জাহাজ পেলে সেটিও আমরা ক্রয় করবো। আমরা যদি এ ধরনের কোনো সুযোগ পাই, তাহলে কেনার পর সরাসরি এমপ্লয়মেন্টে চলে যাবে। ব্যবসায় যোগ দিতে পারবে। এ তিনটি অপশন সামনে রেখে আগাচ্ছি, ওয়ার্ল্ড মার্র্কেটে কোনটি কি অবস্থায় আছে সেটা দেখা। কোনোভাবে যেন আমরা কোনো একটি জায়গায় লক হয়ে না যাই, সেজন্য তিনটি অপশন রাখা হয়েছে।’

ইস্টার্ন রিফাইনারির জন্য ভাড়া করা জাহাজ ‘ডিগনিটি’ নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের দুইটি জাহাজে দূর্ঘটনা হওয়ার পরপরই আমরা একটি জাহাজ পাই। এবং সেটাকে এমপ্লয়মেন্ট করি। ওটি দিয়ে আমরা জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করি। জ্যোতি ও সৌরভে আমরা যে প্রফিট করতাম, সেটির সঙ্গে মার্জ করে কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরও বেশি প্রফিট রেখে জাহাজটির সঙ্গে এগ্রিম্যান্ট করি। এসপিএম (সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং) চালু না হওয়া পর্যন্ত আমরা সেটি চালু রাখতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। ভালো ব্যাপারটা হলো- ফরেন এসেট আমরা আর ব্যবহার করছি না। ন্যাশনাল এসেট ব্যবহার করছি।’

কালের আলো/এমকে/আরআই