সরকারি সেবা নিতে ১১ হাজার কোটি টাকা ঘুষ
প্রকাশিতঃ 5:12 pm | December 03, 2024
নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
সরকারি বিভিন্ন সংস্থা থেকে সেবা নিতে ২০২৩ সালে ঘুষ দিতে হয়েছে ১০ হাজার ৯০২ কোটি টাকা। এ ঘুষ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) দশমিক ২২ শতাংশ এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের ১.৪৩ শতাংশ।
মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) এ তথ্য জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশ (টিআইবি)। ধানমন্ডিতে সংস্থাটির কার্যালয়ে ‘সেবা খাতে দুর্নীতি: জাতীয় খানা জরিপ-২০২৩’ শীর্ষক জরিপ প্রকাশনা অনুষ্ঠানে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এ তথ্য তুলে ধরেন।
সরকারি সেবা নিতে যাওয়া ঘুষ ছাড়া সেরা মিলে না। এর মধ্যে ভূমিতে সবচেয়ে বেশি দুই হাজার ৫১৩ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। এরপর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ঘুষ লেনদেন হয়েছে বিচারিক সেবা খাতে দুই হাজার ৩৫৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা; তৃতীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাতে এক হাজার ৫৭০ কোটি টাকা; চতুর্থ পাসপোর্ট খাতে এক হাজার ৩৫৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা ঘুষ লেনদেন হয়েছে।
ঘুষ দিয়ে সেবা সেবা নিতে হয়-এমন অন্যান্য খাতগুলো হলো স্থানীয় সরকারে ঘুষ লেনদেন হয়ে ৮৪১ কোটি টাকা; বিআরটিএ-তে ৬৭৫ কোটি টাকা; বিদ্যুৎ খাতে ৩০৯ কোটি ছয় লাখ টাকা; সরকারি স্বাস্থ্যসেবা খাতে ২৩৫ কোটি টাকা; শিক্ষাখাতে এমপিও ভুক্তি কাজে ২১৪ কোটি টাকা; ব্যাংকিং খাতে ১২৮ কোটি সাত লাখ টাকা এবং সরকারি কৃষি বিষয়ক সেবা নিতে ৭৬ কোটি চার লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে।
টিআইবির জরিপে উঠে আসে, শহরাঞ্চলের মানুষের তুলনায়, গ্রামাঞ্চলে সেবা দিতে বেশি মানুষকে ঘুষ দিতে হয়। তবে শহরের মানুষকে টাকা অংকে বেশি ঘুষ দিতে হয়। সেবা নিতে গিয়ে কম আয়ের মানুষকে ঘুষ দিতে হওয়ার কারণে তাদের বার্ষিক আয়ের উপর চাপ পড়ে; এমন চিত্রই উঠে আসে টিআইবির জরিপে।
সরকারি সেবা নিতে গিয়ে ঘুষ দিতে হলেও মানুষ প্রতিষ্ঠানে অভিযোগ করে না। ড.ইফতেখারুজ্জামান বলেন, গত কয়েক বছর ধরে এসব খাতে দুর্নীতি বাড়লেও এবং তা সরকারের দৃষ্টিতে আনার পরও দুর্নীতির কোন উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়নি। আর পরিবর্তনের না হওয়ার মূলে রয়েছে দুর্নীতি দমনে প্রতিষ্ঠানে অভিযোগ করে প্রতিকার না পাওয়া, বরং তিরস্কৃত হওয়া; দুর্নীতিবাজদের সামাজিকভাবে সম্মানিত করা।
বিদ্যুৎ, গ্যাস ও বিমা খাতে সেবা নিতে গিয়ে ঘুষ দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু মানুষ অভিযোগ করে। তাদের অভিযোগর হার যথাক্রমে ১৮.৪ শতাংশ, ১৭.৬ শতাংশ ও ১৩.৪ শতাংশ।
অন্যদিকে সেবা নিতে গিয়ে ঘুষ দিলেও কম অভিযোগ করে- শিক্ষা খাতে ৪ শতাংশ, ব্যাংকিংয়ে ৩.৫ শতাংশ, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে ৩.৫ শতাংশ, কৃষিতে ২.৯ শতাংশ, এনিআইডিতে ২.৫ শতাংশ, ভূমিতে ২.৫ শতাংশ, বিআরটিএ-তে ২.১ শতাংশ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাতে ১.৮ শতাংশ, স্বাস্থ্য খাতে ১.৬ শতাংশ , এনজিও-তে ১.৬ শতাংশ, পাসপোর্টে ১.২ শতাংশ ও বিচারিক সেবা খাতে সেবা নিতে মাত্র ১ শতাংশ মানুষ অভিযোগ করে।
কালের আলো/ডিএইচ/কেএ