সংস্কারের মাধ্যমে জনবান্ধব পুলিশ উপহারের মিশনে নতুন আইজিপি

প্রকাশিতঃ 1:56 pm | December 05, 2024

কালের আলো রিপোর্ট:

পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণের পর প্রথম সংবাদ সম্মেলন। বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় পুলিশ সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্কারের মাধ্যমে জনবান্ধব পুলিশ উপহার দিতে নিজের মিশনের কথা জানিয়েছেন বাহারুল আলম। তিনি বলেছেন, ‘এ দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা আমার প্রধান দায়িত্ব। পুলিশের মনোবল ও আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে কাজ চলছে। জনগণের সঙ্গে বিনয়ী ব্যবহার করতে হবে। সংস্কারের মাধ্যমে পুলিশকে জনবান্ধব করতে হবে।’

সামনে নির্বাচন হলে পুলিশ নিরাপত্তা দিতে প্রস্তুত কীনা, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া পুলিশ সদস্যদের সনাক্ত কতদূরসহ ইত্যাকার নানা বিষয়ে খোলামেলা প্রশ্নের জবাব দেন আইজিপি। তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, ‘৫ আগস্টের পরে কেউ যদি ইচ্ছাকৃত বা উদ্দেশ্যমূলক মিথ্যা মামলা করে থাকেন, জেনেশুনে জীবিত মানুষকে মৃত বলে মিথ্যা মামলা করে থাকেন, তাহলে আইন-বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ২১১ ধারা অনুযায়ী বিচারের মুখোমুখি হতে হবে সেই বাদীকে। এটাই আমাদের অনুসরণ করা উচিত। আমরা সেটাই চেষ্টা করব।’

সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত আইজি (প্রশাসন) মোঃ আলমগীর আলম, অতিরিক্ত আইজি (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) মোঃ আকরাম হোসেন, অতিরিক্ত আইজি (এইচআর) আবু নাছের মোহাম্মদ খালেদ. ডিআইজি (অপারেশনস) মোঃ রেজাউল করিম ও ডিআইজি (কনফিডেন্সিয়াল) মোঃ কামরুল আহসান উপস্থিত ছিলেন।

ছাত্র-জনতার বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া পুলিশ সদস্যদের শনাক্তে কাজ চলছে
পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে দায়িত্ব পালন করা পুলিশ বাহিনীর কর্মকর্তা ও সদস্যদের শনাক্তে কাজ চলছে। এটা করতেই হবে, পুলিশ বাহিনীর জন্যই করতে হবে।

ছাত্র-জনতার বিপক্ষে কতজন পুলিশ কর্মকর্তা বা সদস্য জড়িত ছিল? তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে কি না জানতে চাইলে পুলিশ মহাপরিদর্শক বলেন, এটা তো তদন্ত সাপেক্ষ। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তীতে অনেক মামলা হয়েছে। অনেক পুলিশ কর্মকর্তা গ্রেপ্তার হয়েছেন। অনেকে নির্দোষ কিন্তু আসামি হয়েছেন। আবার অনেকে দোষী কিন্তু শনাক্ত হয়নি বলে তাদেরও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না।

আইজিপি বলেন, ২ লাখ ১৩ হাজার পুলিশের কতজন বিপক্ষে ছিল তা খুঁজে বের করা সত্যিই কঠিন। তবে এটা করবই। এটা করতেই হবে। পুলিশ বাহিনীর জন্যই করতে হবে। পুলিশ মহাপরিদর্শক বলেন, সমাজকে একটি সুষ্ঠু পরিবেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। পুলিশ সদস্যদের সঠিক কার্যক্রমের মাধ্যমেই জনগণের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা চলছে। জুলাই-আগস্টে পুলিশের কিছু সদস্য বাড়াবাড়ি করেছেন, আইনভঙ্গ করেছেন এতে কোনো সন্দেহ নেই। ৫ আগস্টের পর পুলিশ অত্যন্ত চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে।

এসময় পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) সাবেক প্রধান মনিরুল ইসলাম এবং ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাবেক প্রধান হারুন অর রশীদসহ পুলিশের পলাতক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কোথায় আছেন তা এখনো শনাক্ত করা যায়নি বলে জানান পুলিশ মহাপরিদর্শক। বাহারুল আলম বলেন, এ দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা আমার প্রধান দায়িত্ব। পুলিশের মনোবল ও আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে কাজ চলছে। জনগণের সঙ্গে বিনয়ী ব্যবহার করতে হবে। সংস্কারের মাধ্যমে পুলিশকে জনবান্ধব করতে হবে।

তিনি বলেন, রাজারবাগে যেসব পুলিশ সদস্য বিদ্রোহ করেছিল গণঅভ্যুত্থান পরবর্তীতে তাদের যেমন দাবি, তেমনি আমাদের প্রত্যেকের দাবি, পুলিশকে রাজনীতি থেকে রাজনৈতিক ব্যবহার থেকে মুক্ত করতে হবে। এটা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা, পরামর্শ সুপারিশ গেছে সংস্কার কমিশনের কাছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য পুলিশ বাহিনীকে যেন আর ব্যবহার করা না হয়। আর এটা সম্ভব এই সরকারের পক্ষেই।

বর্তমান পুলিশ কর্মকর্তারা কোনো রাজনৈতিক দলের হয়ে ব্যবহৃত হচ্ছে কি না? সামনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে তার নিরাপত্তায় পুলিশ প্রস্তুত কি না জানতে চাইলে আইজিপি বলেন, এখন বাহিনীকে সক্রিয় ও সদস্যদের মধ্যে কাজের স্পৃহা তৈরি করা হচ্ছে। সামনের সপ্তাহ থেকে বিভাগে বিভাগে সফর করব। ফোর্সের সদস্যদের হতাশা, চাওয়া-পাওয়ার কথাগুলো জানতে চাই। কারণ তাদের মধ্যেও অনেক ক্ষোভ আছে।

তিনি বলেন, আমরা নির্বাচনের স্টেপে যেতে পারিনি। আমি এতটুকু ব্লাঙ্ক চেক দিতে পারি যে, দেশে নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য পুলিশি সাহায্য করার মতো পূর্ণ ক্ষমতা আমাদের আছে। এর আগে কেয়ারটেকার সরকারের আমলে তিনটা নির্বাচন হয়েছে। সেখানে দেখেছেন আমরা পারি। সেই পুলিশের অনেকে এখনো আছেন, কিছু পরিবর্তন হয়েছে, নতুনরা এসেছে। আমি মনে করি পুলিশ খুব ভালোভাবে সক্ষম।

যেসব পুলিশ সদস্য আন্দোলনে মারা গেছেন তাদের পরিবারকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করা হচ্ছে। হত্যার ঘটনায় আইনের আশ্রয় পুলিশ নেবে কি না, আইনি আশ্রয় না নিলে পুলিশের মনোবলে ঘাটতি তৈরি হতে পারে কি না। জানতে চাইলে আইজিপি বলেন, আইন তো সবার জন্যই সমান। হত্যাকাণ্ড বা যে কোনো অপরাধ। আইনের আওতায় আদালতের বিচারের আওতায় আসা উচিত। আমরা সেভাবেই করব। সেভাবেই হয়ে আসছে।

আন্দোলনে শহীদদের পরিবারের কাছে ক্ষমা চাইলেন আইজিপি
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যারা নিহত হয়েছেন, সেই শহীদদের পরিবারের কাছে পুলিশের পক্ষে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়েছেন সংস্থাটির প্রধান আইজিপি বাহারুল আলম। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, যারা আহত হয়েছেন, তাদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি। এই আন্দোলনের সময় ফ্যাসিবাদী সরকারের সহায়তায় পুলিশের কতিপয় কর্মকর্তা আইন ভঙ্গ করেছেন ও বাড়াবাড়ি করেছেন।

আন্দোলনের সময় নিরপরাধ পুলিশ সদস্যও নিহত হয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি পুলিশ বাহিনীর পক্ষ থেকে প্রতিটি শহীদ পরিবারের কাছে আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করছি ও ক্ষমা প্রার্থনা করছি।’ যেসব পুলিশ সদস্য আন্দোলনে মারা গেছেন, তাদের পরিবারকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জানান আইজিপি।

হত্যার ঘটনায় আইনের আশ্রয় পুলিশ নেবে কিনা, না নিলে পুলিশের মনোবলে ঘাটতি তৈরি হতে পারে কি না জানতে চাইলে আইজিপি বলেন, আইন তো সবার জন্যই সমান। হত্যাকাণ্ড বা যে কোনও অপরাধ। আইনের আওতায় আদালতের বিচারের আওতায় আসা উচিত। আমরা সেভাবেই করবো। সেভাবেই হয়ে আসছে।

তিনি বলেন, ‘৫ আগস্টের পর পুলিশের সম্পদ ও জীবনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সরকারের সহায়তায় আমরা পুলিশের অপারেশনাল কার্যক্রমে গতিশীলতা নিয়ে আসার চেষ্টা করছি। দেশের জনগণের সমর্থন ও সহায়তা ছাড়া বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ দুরূহ। আমি সবিনয়ে সবার আন্তরিক সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।’

জীবিত মানুষকে মৃত বলে মিথ্যা মামলা করলে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে বাদীকেই
গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়া সূত্রে জানতে পারছি, যারা হত্যার শিকার হয়েছিলেন তাদের কেউ কেউ জীবিত ফিরে আসছেন। সেক্ষেত্রে দায়ের হওয়া হত্যা মামলাগুলোর তদন্ত কার্যক্রম কীভাবে পরিচালনা করবেন? এব্যাপারে আইজিপি বাহারুল আলম বলেন, ‘মামলায় বলা হয়েছে মারা গেছেন। কিন্তু এখন শোনা যাচ্ছে মারা যাননি। এক্ষেত্রে বাদী যদি না জেনে, না বুঝে মামলা করে থাকেন তাহলে সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি আছে। তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়েরের অভিযোগ আসবে না। সেই মামলায় শুধু ফাইনাল পুলিশ রিপোর্টই হবে। বাদীর বিরুদ্ধে ২১১ ধারায় প্রসিকিউশন হবে না। কিন্তু যদি ইচ্ছাকৃত বা উদ্দেশ্যমূলক মামলা করে থাকেন তাহলে আইনে বলা আছে যে, জেনেশুনে কেন জীবিত মানুষকে মৃত বলে মিথ্যা মামলা করলেন? এক্ষেত্রে ওই ২১১ ধারায় বিচারের মুখোমুখি হতে হবে বাদীকেই। এটাই আমাদের অনুসরণ করা উচিত। আমরা সেটাই চেষ্টা করব।’

আদালতের রায়ই তো চূড়ান্ত, আমরা যাই বলি না কেন
জঙ্গি কার্যক্রমে যারা জড়িত বলে বলা হয়েছিল তাদের অনেকে জামিন পেয়েছেন। তারা আসলে জঙ্গি কি-না, যেটি প্রমাণিত হয়নি সেটির সূত্র ধরে কীভাবে তাদের আখ্যা দেবেন? এ বিষয়ে আইজিপি বলেন, আদালত যদি কাউকে খালাস দিয়ে থাকে সেখানে তো আমাদের কিছু করার থাকে না। আদালতের রায়ই তো চূড়ান্ত, আমরা যাই বলি না কেন, শ্রদ্ধা করতে হবে।

জঙ্গি সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ আনসার আল ইসলামের নেতৃত্বদানকারী সেনাবাহিনী থেকে বহিষ্কৃত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক ওরফে মেজর জিয়া। পুলিশের খাতায় জিয়া মোস্ট ওয়ান্টেড। তাকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য পুলিশ সদর দপ্তর পুরস্কার ঘোষণা করেছিল। সেই জায়গায় আপনারা আছেন কিনা? তিনি কি এখনো ফেরারি, তিনি কি এখনো শীর্ষ জঙ্গি কিনা? তাকে ধরিয়ে দিলে পুরস্কার দেবেন কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে আইজিপির হয়ে উত্তর দেন পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (অপারেশন ও ক্রাইম) রেজাউল করিম। তিনি বলেন, তার লিগ্যাল স্ট্যাটাস আগের মতো। কারণ তিনি কোনো মামলা থেকে খালাস পাননি। তিনি যদি খালাস পান তাহলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর যদি তিনি কনভিকটেড হন তাহলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা। আপাতত এর বাইরে আর কোনো তথ্য নেই।

পুলিশ সদর দপ্তর তদন্ত করছে, যেসব পুলিশ কর্মকর্তার বিভিন্ন মামলায় ও ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়ে নাম এসেছে তারা কোথায়? তাদের বিষয়ে পদক্ষেপ কি হবে? তাদের দায় আপনারা পেয়েছেন কিনা? জানতে চাইলে আইজিপি বলেন, গণমাধ্যমে অনেকের নাম পেয়েছি। আমরা নিজেরাও তদন্ত করছি। আমরা তাদের অবস্থান বের করতে পারিনি। এটা চলমান প্রক্রিয়া। কে কোথায় আছেন সেটা স্পষ্ট নয়। দেশের ভেতরে থাকলে আইনের আওতায় আসবে যদি অবস্থান চিহ্নিত করতে পারি। আর যদি বাইরে থাকেন তাহলেও বিধিগত প্রক্রিয়া আছে।

তিনি বলেন, আমরা প্রযুক্তিগত সক্ষমতা অনুযায়ী চেষ্টা করছি। তাদের দায় এখনো প্রমাণিত হয়নি। সেটা তখনই বলা যাবে যখন মামলার তদন্ত শেষ হবে। তবে তাদের দায় তো ছিলই। তারা কেউই দায় এড়াতে পারবেন না। তারা তো সশরীরে থেকে পুলিশকে কমান্ড করেছেন। আইনি প্রক্রিয়া তো আছে। সব তথ্য প্রমাণ দিয়েই তাদের দায় নিরূপণ করা হবে। এবং আদালত তথ্যপ্রমাণই দেখেন।

সারাদেশে বিভাগ অনুযায়ী আলাদা মেন্টরিং ও মনিটরিং কমিটি
আন্দোলনে এতোগুলো মানুষ মারা গেছে, বাংলাদেশের ইতিহাসে কেন এশিয়ার ইতিহাসেও এমন ঘটনা নেই উল্লেখ করে আইজিপি বাহারুল আলম বলেন, ‘এমন একটা ঘটনা ও পরিবর্তনের পরও আমাদেরও সক্ষমতায় কিছুটা ব্যতিক্রম ঘটেছে। সব জায়গায় সঠিক লোক দিয়ে আমরা শেষ করতে পারিনি। আমাদের পুনর্গঠনের কাজটা কিন্তু চলমান। বদলি হচ্ছে। তদন্ত করতে পারে সেরকম সক্ষম লোকদের বাছাই করে এই্ কাজে পুনরায় দায়িত্ব দেওয়া, সারাদেশে বিভাগ অনুযায়ী আলাদা মেন্টরিং ও মনিটরিং কমিটি করেছি। ঊর্ধ্বতন এবং অভিজ্ঞ, যারা বিপুল অভিজ্ঞতা নিয়ে অবসরে গেছেন তাদেরকেও আমরা সঙ্গে নিয়ে আটটা জায়গায় আলাদা মনিটরিং টিম করেছি। প্রতি থানায় মামলাগুলোর তদন্তকারী কর্মকর্তাকে গাইড ও মনিটরিং করার কাজ করবেন। যারা তদন্ত করছেন তাদের দক্ষতা আশানুরূপ নয়। আমার বিশ্বাস তদন্তের মানটা বাড়বে। আর যারা পালিয়েছেন তাদের আমরা লোকেট করতে পারবো।’

গণঅভ্যুত্থানে যেসব পুলিশ অন্যায় করেনি, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নয়
এদিকে, বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) বিকাল ৩টায় রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে পুলিশ অডিটোরিয়ামে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ আয়োজিত কল্যাণ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন আইজিপি বাহারুল আলম। এ সময় তিনি বলেন, ‘জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে যেসব পুলিশ সদস্য কোনও অন্যায় করেনি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না বলে পুলিশ সদস্যদের আশ্বস্ত করেছেন আইজিপি বাহারুল আলম। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন সংস্কার কমিশন গঠন করেছে, এর মধ্যে অন্যতম পুলিশ সংস্কার কমিশন। পুলিশ যাতে রাজনৈতিক দলের হাতিয়ার না হয়ে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে সে বিষয়ে সংস্কার কমিশন কাজ করছে। পুলিশের প্রতিটি সদস্যকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে।’

ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী এর সভাপতিত্বে সভায় ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অ্যাডমিন) ফারুক আহমেদ; অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস্) মো. ইসরাইল হাওলাদার; অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) রেজাউল করিম মল্লিক; অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্র্যাফিক) খোন্দকার নজমুল হাসান পিপিএম (বার); অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (লজিস্টিকস্, ফিন্যান্স অ্যান্ড প্রকিউরমেন্ট) হাসান মো. শওকত আলী; অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি) মো. মাসুদ করিম; যুগ্ম পুলিশ কমিশনাররা এবং উপ-পুলিশ কমিশনাররাসহ বিভিন্ন পদমর্যাদার পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় আইজিপি বাহারুল আলম বলেন, আইনশৃঙ্খলা স্থিতিশীল রাখতে পুলিশকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। এক্ষেত্রে পুলিশ সদস্যদের ভয়কে জয় করে সৎ সাহস নিয়ে দায়িত্ব পালন করে যেতে হবে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য বিভিন্ন ইউনিটে বদলি হয়েছে। নতুন ও পুরাতনদের মাঝে বিভাজন তৈরি করা না হয় তা ইউনিট প্রধানদের নিশ্চিত করতে হবে। সবাই মিলেমিশে একত্রে একটি টিম হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করে ডিএমপির গৌরব সমুন্নত রাখতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, ডিএমপি পুলিশের সবচেয়ে বড় ইউনিট। এই ইউনিটের কর্মকাণ্ডের ওপর পুলিশের ভাবমূর্তি অনেকাংশেই নির্ভর করে। তিনি বলেন, রাজারবাগ বাংলাদেশ পুলিশের জন্য একটি গৌরবময় স্থান। ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ গড়ে উঠেছিল রাজারবাগ থেকেই। এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত গৌরবের একটি বিষয়। এ সময় ডিএমপির বিভিন্ন পদমর্যাদার সদস্যরা তাদের সুনির্দিষ্ট কিছু সমস্যা ও চাহিদার কথা আইজিপির কাছে তুলে ধরেন। আইজিপি সকলের বক্তব্য মনোযোগ সহকারে শোনেন এবং সমস্যা সমাধানের বিষয়ে সকলকে আশ্বস্ত করেন।

কালের আলো/এমএএএমকে