চেয়ারম্যান-কমিশনারহীন দুদক

প্রকাশিতঃ 8:30 am | December 07, 2024

কালের আলো রিপোর্ট:

দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ এবং সাবেক কমিশনার জহুরুল হক ও আছিয়া খাতুন পদত্যাগ করেছেন গত ২৯ অক্টোবর। এরই মধ্যে পেরিয়ে গেছে এক মাস। কমিশন নিয়োগে সার্চ কমিটি হয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত চেয়ারম্যান ও কমিশনার পদে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। যদিও দুদক আইন-২০০৪ অনুসারে পদত্যাগ বা অপসারণের ৩০ দিনের মধ্যে নতুন চেয়ারম্যান ও কমিশনার নিয়োগের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

দুদকে নতুন নেতৃত্ব না আসায় একদিকে যেমন সরাসরি সেই আইনের ব্যত্যয় ঘটেছে। তেমনি কমিশন শূন্য থাকায় বিগত সরকারের শীর্ষ দুর্নীতিবাজ মন্ত্রী, এমপি, আমলা ও ব্যবসায়ীসহ আড়াই শতাধিক বিতর্কিত ব্যক্তির বিরুদ্ধে শুরু হওয়া অনুসন্ধান-তদন্ত কাজে স্থবিরতা নেমে এসেছে। চিহ্নিত ওইসব ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগ রয়েছে। অনেকের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান কিংবা তদন্ত শুরু হলেও শুধু কমিশন না থাকায় তাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের ক্রোক ও অবরুদ্ধ করা, মামলা করা, আসামি গ্রেপ্তার ও দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া যাচ্ছে না। ফলে কমিশন না থাকার ফায়দা দুর্নীতিবাজরাই পাচ্ছেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি অভিযোগের পাহাড় জমা হলেও নতুন অনুসন্ধান পুরোপুরি বন্ধ। ফলে দুদকের স্থবিরতা চলছে বলেই মনে করছেন সংস্থাটির কর্মকর্তারা।

এ বিষয়ে একমত পোষণ করে দুদকের সাবেক মহাপরিচালক ও সাবেক জেলা জজ মো. মঈদুল ইসলাম একটি গণমাধ্যমকে বলেন, কমিশন গঠিত না হওয়ায় আইনের ব্যত্যয় অবশ্যই হয়েছে। আইনে বলা হয়েছে ৩০ দিন, সেটা পদত্যাগপত্র গৃহীত হওয়ার পরবর্তী ৩০ দিন ধরলেও সে সময় অতিক্রম করেছে। যদিও কেউ কেউ ৩০ কার্যদিবস হিসেবে গণনা করতে চায়। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে চেয়ারম্যান-কমিশনাররা না থাকলে দুদকের কোনো কার্যক্রমই হয় না। অনুসন্ধান ও তদন্ত থেকে শুরু করে সব সিদ্ধান্তই কমিশন বৈঠকের মাধ্যমে হয়ে থাকে। সেই অর্থে দুদকের কাজ একরকম বন্ধই বলা চলে। নতুন কোনো কাজ হচ্ছে না। এসব বিষয় গুরুত্ব দিয়ে যত দ্রুত সম্ভব নিয়োগ দেওয়া উচিত।

কমিশন নিয়োগ নিয়ে আইনে কী বলা হয়েছে?

দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ১০ ও ১১ ধারায় চেয়ারম্যানসহ কমিশনারের পদত্যাগ ও তাদের সাময়িক শূন্যতা পূরণে করণীয় সম্পর্কে বলা হয়েছে-

১০ (১) ধারায় বলা হয়েছে কোনো কমিশনার রাষ্ট্রপতি বরাবর এক মাসের লিখিত নোটিশ প্রেরণপূর্বক স্বীয় পদত্যাগ করতে পারবেন। তবে শর্ত থাকে যে, চেয়ারম্যান ব্যতীত অন্যান্য পদত্যাগকারী কমিশনাররা উক্ত নোটিশের একটি অনুলিপি চেয়ারম্যান বরাবর অবগতির জন্য প্রেরণ করবেন।

উপধারা (২) এর অধীন পদত্যাগ সত্ত্বেও পদত্যাগ পত্র আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত না হওয়া পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি, প্রয়োজনবোধে পদত্যাগকারী কমিশনারকে তার দায়িত্ব পালনের জন্য অনুরোধ করতে পারিবেন। অপসারণের বিষয়ে বলা হয়েছে (৩) উপধারায়। যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারক যেরূপ কারণ ও পদ্ধতিতে অপসারিত হতে পারেন, সেরূপ কারণ ও পদ্ধতি ব্যতীত কোনো কমিশনারকে অপসারণ করা যাবে না।

চেয়ারম্যান ও কমিশনার পদে সাময়িক শূন্যতার বিষয়ে বলা হয়েছে ১১ ধারায়। ওই ধারা অনুসারে কোনো কমিশনার মৃত্যুবরণ বা স্বীয় পদত্যাগ করিলে বা অপসারিত হলে, রাষ্ট্রপতি উক্ত পদ শূন্য হওয়ার ত্রিশ দিনের মধ্যে, এই আইনের বিধান সাপেক্ষে, কোনো উপযুক্ত ব্যক্তিকে শূন্যপদে নিয়োগ দান করবেন।

কালের আলো/এমএসএএকে/এমকে