খালেদা জিয়াকে ঘিরে উজ্জীবিত বিএনপি
প্রকাশিতঃ 10:28 pm | December 07, 2024
মো.শামসুল আলম খান, কালের আলো:
প্রায় এক যুগ পর গত ২১ নভেম্বর চলতি বছরের সশস্ত্র বাহিনী দিবসের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। এর মাধ্যমে দীর্ঘ ৬ বছর পর প্রকাশ্যে কোন অনুষ্ঠানে দেখা গিয়েছিল তিনবারের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে। সেদিনের সেই আয়োজনের ‘মধ্যমণি’ ছিলেন তিনিই। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পাশের আসনে বসে তিনি উপভোগ করেন সশস্ত্র বাহিনী দিবসের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিষয়টিকে গণতন্ত্র ফেরানোর আন্দোলনে ‘ইতিবাচক ভূমিকা’ রাখবে বলে মত দিয়েছিলেন। এরপর থেকেই প্রকাশ্যে বিভিন্ন কর্মসূচিতে বেগম জিয়ার দেখা মিলছে। এতে করে পুরোমাত্রায় উজ্জীবিত হয়ে ওঠেছে তাঁর দল বিএনপি।
দলীয় প্রধানকে বিভিন্ন কর্মসূচিতে দেখে তাদের মধ্যে সাহস ও আশার আলো সঞ্চার হয়েছে। বেড়েছে দলের নেতাকর্মীদের মনোবলও। দলীয় প্রধানকে ‘আপসহীন’ অ্যাখ্যা দিয়ে তারা বলছেন, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে খালেদা জিয়ার উপস্থিতি দেশ ও মানুষকে নতুন এক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখাচ্ছে। যে খালেদা জিয়া পথহারা মানুষকে গণতান্ত্রিক দেশের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, তার হাত ধরেই ফের গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরবে দেশ, এমন প্রত্যাশা দলটির নেতা-কর্মীদের।
সম্প্রতি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে পাকিস্তান ও চীনের রাষ্ট্রদূত বৈঠক করেছেন। স্বভাবতই অনুমেয় অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন দিলে এতে সম্ভাব্য বিজয়ী দলের তালিকায় বিএনপিকেই দেখা যাবে। ফলত কূটনৈতিকদের আগ্রহের তালিকায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাচ্ছেন সাবেক এই সরকারপ্রধান। বিশেষ করে, গত ৩ ডিসেম্বর পাকিস্তান হাইকমিশনার সাঈদ আহমেদ মারুফ এবং পরদিন ৪ ডিসেম্বর চীন রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেন। এই বৈঠক দুটিকে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত বলে দেখা হচ্ছে। পাকিস্তান ও চীন, উভয়ই ভারতবিরোধী। তারা বিএনপির ক্ষমতার প্রতি আগ্রহী হয়ে বাংলাদেশে তাদের সম্পর্ক শক্তিশালী করতে চায়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, নতুন বাংলাদেশে বিএনপিপ্রধানের সঙ্গে তাঁর বাসায় গিয়ে পাকিস্তান রাষ্ট্রদূতের বৈঠক আলাদা তাৎপর্য বহন করে। পাকিস্তান বিএনপির সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার জন্য আগ্রহী, যা বাণিজ্য এবং প্রতিরক্ষা খাতে সহায়তা প্রদান করতে পারে। রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনের খালেদা জিয়ার সঙ্গে আলোচনা মূলত অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং অবকাঠামো উন্নয়নকে কেন্দ্র করে ছিল, যা চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) এর সঙ্গে মিলে যায়। রাষ্ট্রদূত ওয়েন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের উত্তরাধিকারকে সম্মান জানিয়ে বাংলাদেশে চীনের প্রভাব বাড়ানোর লক্ষ্য স্থির করেছেন বলে প্রতীয়মান হয়। চীনের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়াকে বেইজিং সফরের আমন্ত্রণ জানানোও তারই প্রকাশ।
এছাড়া সম্প্রতি বেগম জিয়া মার্কিন ভিসা প্রসেসিংয়ের জন্য দূতাবাসে গিয়ে ফিঙ্গারপ্রিন্ট দেন এবং ভারপ্রাপ্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। গুলশানের বাসায় তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূতও। শারীরিক অসুস্থতা সত্ত্বেও খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে দেশের রাজনীতিতে ঐক্য ও গণতন্ত্রে ফেরার সুবাতাস বইছে বলে মনে করেন দলটির নেতাকর্মী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রতিষ্ঠিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শাহ মোহাম্মদ শাহাবুল আলম এই প্রতিবেদককে বলেন, দেশের রাজনীতিতে ‘আপসহীন’ নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বিএনপি তথা জাতীয়তাবাদী পরিবারের ভালোবাসা ও অহংকারের প্রতীক। আপসহীন নেত্রী হয়ে দেশবাসীর মনের গহীনে অনেক আগেই স্থান করে নিয়েছেন। ইনশাআল্লাহ তার পবিত্র হাতের ছোঁয়ায় বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে গণতান্ত্রিক ও আদর্শ রাষ্ট্র হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত হবে সেই আশা ও প্রত্যাশা রাখছি।’
বগুড়ার বাসিন্দা ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন গৃহবন্দি ছিলেন। এখন মুক্ত অবস্থায় রয়েছেন। তার চিকিৎসা দরকার। দেশনেত্রীর প্রকাশ্য উপস্থিতিতে আমরা দলীয় নেতাকর্মী এবং জনসাধারণ আশান্বিত হয়েছি। তিনি যে আপসহীন নেত্রী আবারও প্রমাণিত। দল ও দেশের হাল ধরবেন তিনি।’
‘খালেদা জিয়া এখন বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে আসীন’ উল্লেখ করে নোয়াখালীর বাসিন্দা ও বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-পল্লী উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ বলেন, ‘তার ধারে কাছে কোনো রাজনীতিবিদ নেই। এতদিন বিএনপি খালেদা জিয়াকে দেশনেত্রী সম্বোধন করতো, এখন সেটা গোটা দেশের মানুষ করে। খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেশনেত্রী শব্দটা সমর্থক হয়ে গেছে। তার এই অর্জন বহু ত্যাগ-তিতিক্ষার মধ্য দিয়ে। গণঅভ্যুত্থানের পর সম্প্রতি সেনাকুঞ্জে সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে রাজনীতিবিদ হিসেবে, গণতন্ত্রের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত রাজনীতিক বা ব্যক্তি হিসেবে, গোটা জাতি তাকে সম্মানিত করেছে।’
পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার বাসিন্দা বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের কর্মকর্তা মো. সালাউদ্দিন বলেন, ‘জাতির কাছে আপসহীন নেত্রী খালেদা জিয়ার গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়েছে। জাতি উৎফুল্ল, আবার ওনাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাই।’
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর মেঘের আড়ালে চাঁদ উঁকি দিলে যেমন লাগে, খালেদা জিয়ার প্রকাশ্যে উপস্থিতি মানুষের কাছে তেমন লাগছে। দেশের মানুষ তাদের প্রিয় নেত্রীকে যেভাবে দেখতে চায় সেভাবেই দেখছে।’
কালের আলো/এমএসএএকে/এমকে