জুলাইয়ের বিপ্লবী কন্যাদের সঙ্গে অন্যরকম একদিন প্রধান উপদেষ্টার

প্রকাশিতঃ 9:56 pm | December 10, 2024

মো.শামসুল আলম খান, কালের আলো:

প্রতিবাদী নারীকণ্ঠ ত্বরান্বিত করেছিল জুলাই বিপ্লব। নজিরবিহীন এক গণঅভ্যুত্থানে তাঁরা পালন করে প্রভাবকের ভূমিকা। শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে নানা বয়সী নারীদের ব্যাপক অংশগ্রহণ ছিল তখন। জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণঅভ্যুত্থানে সাহস করে আন্দোলনে অংশ নেওয়া নারীদের সঙ্গে এবার মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) অন্যরকম একদিন কাটালেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড.মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বিপ্লবী কন্যাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও নানা দাবির কথা মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন। স্বয়ং প্রধান উপদেষ্টা নিজেই বলেছেন, ‘আজ তোমাদের সাক্ষাৎ পেয়েছি, এটা আমার জন্য ঐতিহাসিক দিন।’ তিনি নারী শিক্ষার্থীদের নিজেদের ও দেশের সুন্দর ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে উৎসাহ-উদ্দীপনাও দিয়েছেন।

রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সময়ের সাহসী নারীদের সাক্ষাতের এ আয়োজন করে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়। অনুষ্ঠানের নাম দেওয়া হয় ‘জুলাইয়ের কন্যারা… আমরা তোমাদের হারিয়ে যেতে দেব না’। অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা ড.মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আজ অনেক উচ্ছ্বাসের দিন, ক্ষোভের দিন, ইমোশনের দিন। আজ সব একসঙ্গে প্রকাশ করার দিন। উচ্ছ্বাস আছে বলেই তো আমরা এখানে আছি। উচ্ছ্বাস-ক্ষোভ না থাকলে আমরা তো মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকতে পারতাম না। এগুলো আছে থাকবে। যখনই দরকার তখন প্রকাশ করব। যখন যেখানে যতটুকু দরকার ততটুকু প্রকাশ করব। সেই শক্তি যেন আমাদের থাকে।’

জুলাই বিপ্লবী নারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘তোমরা বাংলাদেশকে আজ যে পর্যায়ে নিয়ে গেছ সেটি ঐতিহাসিক ঘটনা। এই ঐতিহাসিক ঘটনার যারা নায়িকা তাদেরকে আমি মনেপ্রাণে ধন্যবাদ জানাই।’ প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘জুলাই মাসে বাংলাদেশে যেটা হয়ে গেল এটার নজির পৃথিবীর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। পৃথিবীতে বহু অভ্যুত্থান হয়েছে কিন্তু এটা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন রকমের। এটা ছিল তোমাদের নিজের হাতে গড়া একটা জিনিস। এখানে কোনো বড় নেতা এসে হুকুম দেয়নি। তোমরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে করেছ।’

তিনি আরও বলেন,‘স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়-কর্মজীবী মেয়ে এমনকি বাসায় থাকে যে যেখানে পারে সেখান থেকে এসে এ আন্দোলনে যোগ দিয়েছে এবং সমানভাবে এগিয়ে এসেছে। এটা বাংলাদেশকে একেবারে পরিবর্তন করে দিয়েছে। ফলে ৫ আগস্টের আগের বাংলাদেশ আর নেই। এটা নতুন বাংলাদেশ। নতুন এই বাংলাদেশ আমরা গড়ব। দেশ বদলানোর যে প্রতিজ্ঞা তোমরা নিয়েছ সেটা ধরে রাখবা।’ জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রীরা অনুষ্ঠানে অংশ নেন। এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মজীবী নারীরাও আয়োজনে অংশ নেন।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে জুলাইয়ে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু এই আন্দোলন দমনে তৎকালীন শেখ হাসিনার সরকার আগ্নেয়াস্ত্রের বাড়াবাড়ি রকমের ব্যবহার করে বলে অভিযোগ ওঠে। জুলাইয়ের মাঝমাঝিতে কয়েক শ’ ছাত্র-জনতার প্রাণ ঝরে। পরে সেই আন্দোলন সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নেয়। এই আন্দোলন দমনে হাসিনার সরকার আরও কঠোর হয়। নির্বিচারে ছাত্র-জনতাকে হত্যার অভিযোগ ওঠে। পরে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট ওই সরকারের পতন ঘটে। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে পালিয়ে ভারতে চলে যান। ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেয় নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, সেই আন্দোলন সাত শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন এবং ১৯ হাজারেরও বেশি ছাত্র-জনতা আহত হয়েছেন। যদিও বেসরকারি হিসাবে প্রাণহানির সংখ্যা দেড় সহস্রাধিক।

কালের আলো/এমএসএএকে/এমকে