দূষণে ‘বিপজ্জনক’ ঢাকার বায়ু

প্রকাশিতঃ 10:06 pm | December 10, 2024

রাইসুল ইসলাম খান, কালের আলো:

দূষণে বিপজ্জনক পর্যায়ে রয়েছে ঢাকার বায়ু। ফলে নির্মল বায়ুর অভাব তৈরি হয়েছে রাজধানীর জীবনে। শুষ্ক মৌসুম আসতেই আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠেছে রাজধানীর বায়ু। এতে করে চরম স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে, যা সব বয়সী মানুষের জন্য ক্ষতিকর। বিশেষ করে শিশু, অসুস্থ ব্যক্তি, প্রবীণ ও অন্তঃসত্ত্বাদের জন্য বায়ুদূষণ খুবই ক্ষতিকর। এমন অবস্থায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর।

মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) এক বিজ্ঞপ্তিতে পরিবেশ অধিদপ্তর জানায়, রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের এলাকার বায়ুমান বর্তমানে মাঝেমধ্যে অস্বাস্থ্যকর থেকে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পৌঁছাচ্ছে। এ অবস্থায় সবাইকে বাইরে গেলে মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হলো। একই সঙ্গে সংবেদনশীল ব্যক্তিকে অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।

জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে বায়ুদূষণে ভুগছে ঢাকা। এর বাতাসের গুণমান সাধারণত শীতকালে অস্বাস্থ্যকর হয়ে যায় এবং বর্ষাকালে কিছুটা উন্নত হয়। ২০১৯ সালের মার্চে পরিবেশ অধিদপ্তর ও বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ঢাকার বায়ুদূষণের তিনটি প্রধান উৎস হলো-ইটভাটা, যানবাহনের ধোঁয়া ও নির্মাণ সাইটের ধুলো।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) অনুসারে, বায়ুদূষণের ফলে স্ট্রোক, হৃদরোগ, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ, ফুসফুসের ক্যানসার এবং তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের কারণে মৃত্যুহার বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষ মারা যায়।

বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখারও অনুরোধ জানিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। বিজ্ঞপ্তিতে ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক ও সাধারণ মানুষকে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। সেগুলো হলো- কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো ও পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাতাসে প্রতি ঘনমিটারে দুই দশমিক পাঁচ মাইক্রোমিটার ব্যাসের বস্তুকণার পরিমাণ (পিপিএম) যদি শূন্য থেকে ৫০ এর মধ্যে থাকে, তাহলে ওই বাতাসকে বায়ু মানের সূচকে (একিউআই) ‘ভালো’ বলা যায়। এই মাত্রা ৫১-১০০ হলে বাতাসকে ‘মধ্যম’ মানের ও ১০১-১৫০ হলে ‘বিপদসীমায়’ আছে বলে ধরে নেওয়া হয়। আর পিপিএম ১৫১-২০০ হলে বাতাসকে ‘অস্বাস্থ্যকর’, ২০১-৩০০ হলে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ ও ৩০১-৫০০ হলে ‘বিপজ্জনক’ বলা হয়।

ঢাকায় অবস্থিত আমেরিকান দূতাবাস থেকে স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাপস বায়ুদূষণ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করেছে। তাতে দেখা যায়, ঢাকার গত ৭ বছরের (২০১৭ হতে ২০২৩) বায়ুমান সূচক (একিউআই) বিপজ্জনক পথে যাচ্ছে। গত ৭ বছরের জানুয়ারি মাসের ২০৯ দিনের মধ্যে ৩৫ দিন ‘বিপজ্জনক’ এবং ১৪৫ দিন ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ দিন ছিল। একই সময়ে ঢাকার মানুষের একদিনের জন্যও ভালো বায়ু সেবন করার সৌভাগ্য হয়নি। শতকরা ৯৯.০৪ ভাগ দিনই বায়ুমান পরিস্থিতি ‘অস্বাস্থ্যকর’ থেকে ‘বিপজ্জনক’ বা অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় ছিল। ক্যাপস আরও বলছে, গত সাত বছরে ঢাকার জানুয়ারি মাসের মধ্যে বায়ুর মানের দিক থেকে ২০২২ সালে ১৮ দিন খুবই অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় ছিল এবং ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসের ২১ দিনই ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ ছিল।

কালের আলো/আরআই/এমকে