উন্নতির সোপানে ‘কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্স’, দেশ গঠনে প্রশংসনীয় ভূমিকা অব্যাহত রাখার আশাবাদ সেনাপ্রধানের
প্রকাশিতঃ 9:08 pm | December 12, 2024
বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:
ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় ক্রমশ উন্নতির সোপানে আরোহণ করে চলছে ‘কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্স’। সেনাবাহিনীর উন্নয়নের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে দেশগঠনমুলক কর্মকাণ্ডেও। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্স এর ইতিহাস ঐতিহ্যময়। শহীদ ক্যাপ্টেন মুহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের আত্মত্যাগের গৌরবে গৌরবান্বিত হয়ে স্বাধীনতার পর কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্সের যাত্রা শুরু হয়। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অকাতরে নিজেদের জীবন বিলিয়ে দেওয়া ৮৮ জন ছিলেন কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্স এর সদস্য। প্রতিটি সদস্যের নিরলস পরিশ্রম ও অক্লান্ত প্রচেষ্টায় এই কোর আজ সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত।
সততা, সত্যনিষ্ঠা ও কর্তব্যবোধে ব্রতী হয়ে উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশ গঠনে কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্সের প্রশংসনীয় ভূমিকা অব্যাহত থাকবে বলে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তিনি মনে করেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই কোর আপন মহিমা, স্বকীয়তা ও বৈশিষ্ট্যে ইতোমধ্যেই নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছে।দেশ ও জাতি গঠনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বিশেষ করে কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্স গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। দেশের উন্নয়নে নিরলসভাবে অংশগ্রহণ করছে।
বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) নাটোরের কাদিরাবাদ সেনানিবাসস্থ ইঞ্জিনিয়ার সেন্টার এন্ড স্কুল অব মিলিটারী ইঞ্জিনিয়ারিং (ইসিএসএমই) এ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্স এর চলতি বছরের বাৎসরিক অধিনায়ক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি দেশ ও জাতি গঠনে কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্সের গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্য তুলে ধরার পাশাপাশি দেশমাতৃকার সেবায় বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের ভূয়সী প্রশংসা করেন। সেনাপ্রধান ইসিএসএমই’তে এসে পৌঁছলে আর্মি ট্রেনিং এন্ড ডকট্রিন কমান্ডের (আর্টডক) জিওসি লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো.মাইনুর রহমান ও সেনাবাহিনীর মিলিটারি ইঞ্জিনিয়ার সার্ভিসেস (এমইএস) এর ইঞ্জিনিয়ার ইন চীফ মেজর জেনারেল মুঃ হাসান-উজ-জামান এবং ইঞ্জিনিয়ার সেন্টার এন্ড স্কুল অব মিলিটারী ইঞ্জিনিয়ারিং এর কমান্ড্যান্ট ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো.মনোয়ারুল ইসলাম সরদার তাকে স্বাগত জানান।
আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এই বাৎসরিক অধিনায়ক সম্মেলনে উপস্থিত কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্সের অধিনায়ক ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন। তিনি এই কোরের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, গবেষণা, পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে মতবিনিময় করেন। একই সঙ্গে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্সের সেনানীসহ সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করেন।
জানা যায়, কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্স’র ইতিহাস সমৃদ্ধ। স্বাধীন দেশে স্যাপার্সের কোন বিদ্যমান ইউনিট ছিল না, কোন সেন্টার বা রেকর্ড ছিল না। পাকিস্তানিদের কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে বেশিরভাগ কর্মকর্তা ও সৈনিকদের অন্তরীণ করে রাখা হয়েছিল। ১৯৭১ সালের ২২ ডিসেম্বর সেনাবাহিনী কমান্ড প্রদত্ত একটি সমনে স্যাপার্স কর্মকর্তারা ঢাকায় একত্রিত হন। এরই ধারাবাহিকতায় সর্বপ্রথম ১ ফিল্ড ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়ন গঠন করা হয়। পরবর্তীতে এই ব্যাটালিডনের ফিল্ড কোম্পানীসমূহকে একটি পূর্ণাঙ্গ ব্যাটালিয়নে রূপান্তর করা হয়। এছাড়াও সদরঘাটের এইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট কোম্পানিকে ঢেলে সাজিয়ে ‘রিভার সাপোর্ট ইউনিট’ নামে পুন:র্গঠন করা হয়।
কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্স একটি কারিগরি, সরঞ্জামাদি নির্ভর এবং বহুমুখী প্রতিভা সম্পন্ন কোর, যার সহায়তা যুদ্ধক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেশের পার্বত্য অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠায় বীরত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে তাদের। পার্বত্য চট্টগ্রামে সন্ত্রাস দমন অভিযানে জীবন উৎসর্গ করা ১৭০ জন বীর শহীদদের মধ্যে ১৯ জন ছিলেন কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্স এর সদস্য। এবারের এই বাৎসরিক অধিনায়ক সম্মেলনের মাধ্যমে ইঞ্জিনিয়ার্স কোর’র অগ্রযাত্রাকে আরও বেগবান ও আধুনিকায়নে সমৃদ্ধ করতে নিজের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ারও প্রত্যয়দীপ্ত উচ্চারণ করেছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।
অনুষ্ঠানে আর্মি ট্রেনিং এন্ড ডকট্রিন কমান্ডের (আর্টডক) জিওসি লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো.মাইনুর রহমান ও সেনাবাহিনীর মিলিটারি ইঞ্জিনিয়ার সার্ভিসেস (এমইএস) এর ইঞ্জিনিয়ার ইন চীফ মেজর জেনারেল মুঃ হাসান-উজ-জামানসহ সেনাসদরের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তা, ইঞ্জিনিয়ার সেন্টার এন্ড স্কুল অব মিলিটারী ইঞ্জিনিয়ারিং এর কমান্ড্যান্ট ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো.মনোয়ারুল ইসলাম সরদার, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সকল ইঞ্জিনিয়ার ব্রিগেডের কমান্ডাররা ও ইঞ্জিনিয়ার ইউনিটসমূহের অধিনায়করা উপস্থিত ছিলেন।
কালের আলো/এমএএএমকে