শীত লাগে কেন?
প্রকাশিতঃ 3:38 pm | December 15, 2024
লাইফস্টাইল ডেস্ক, কালের আলো:
মানুষের মনে কখন যে কোন প্রশ্ন উঁকি দেয় তা বোঝা দায়। এই ধরুন শীতের সন্ধ্যায় গায়ে হিমেল বাতাস লাগছে। কিছুটা কাঁপুনি সৃষ্টি হচ্ছে শরীরে। এমন সময় আপনার মনে প্রশ্ন জাগল, মানুষের শীত লাগে কেন?
শীত অনুভূত হওয়ার পেছনে কিন্তু বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা রয়েছে। চলুন তা এই প্রতিবেদনে জানা যাক-
মানবদেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৯৮.৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট (প্রায় ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস)। সাধারণত আমাদের দেহের তাপমাত্রা সারাদিন ৯৭ থেকে ৯৯ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত ওঠানামা করতে পারে। কারো জ্বর হলে তা ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইটেও পৌঁছাতে পারে। এটি অস্বাভাবিক নয়।
দেহের স্বাভাবিক কাজকর্ম ঠিক রাখতে শরীরের ভেতরে সর্বক্ষণ তাপ তৈরি হতে থাকে। সেই হিসেবে মানবদেহকে তাপ তৈরির মেশিনও বলা যায়। গবেষণা অনুযায়ী, একজন মানুষের দেহে যে পরিমাণ তাপ উৎপন্ন হয়, তা একটি ১০০ ওয়াটের বৈদ্যুতিক বাল্বের উৎপাদিত তাপের সমান।
এই তাপের পরিমাণ দেহের বিভিন্ন ধরনের কাজের ওপর নির্ভর করে। কোনো কাজ না করে চুপচাপ বসে থাকলে বা ঘুমালে শরীরে উৎপন্ন তাপের পরিমাণ হয় ৫০ ওয়াট বাল্বের সমান। আবার হালকা কাজকর্ম করলে প্রায় ২০০ ওয়াট বাল্বের সমান তাপ উৎপন্ন হয়। কেউ যদি ভারী কাজ করে (যেমন সিঁড়ি দিয়ে ওঠা-নামা) তাহলে তার দেহে উৎপন্ন হতে পারে প্রায় ১ হাজার ওয়াট বাল্বের সমান তাপ।
এই তাপের কারণে দেহের তাপমাত্রা ওঠানামা করে। সাধারণত চারপাশের পরিবেশের তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস (৭৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট) থাকলে, তা দেহের জন্য আরামদায়ক। তাপমাত্রা এর চেয়ে কমলে শরীরে ঠান্ডার অনুভূতি জাগে।
দেহের তাপমাত্রা চারপাশের পরিবেশের চেয়ে বেশি হলে ঠান্ডা অনুভূত হয়। আবার পরিবেশের চেয়ে শরীরের তাপ কম হলে গরম লাগে। এ কারণেই জ্বর হলে আমাদের শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়, আমরা ঠান্ডা অনুভব করি। আবার জ্বর যখন কমে যায় তখন গা গরম হয়ে ঘেমে ওঠে।
কেবল তাপমাত্রার ওঠানামা নয়, আরও কিছু কারণেও শীত লাগতে পারে। এগুলো হলো-
রক্তস্বল্পতা
রক্তের নিজস্ব উষ্ণতা রয়েছে। তাই দেহে রক্তের পরিমাণ কমে গেলে অনেকে হাতে-পায়ে বেশি শীত বোধ করেন। এছাড়া রক্তশূন্যতা হলে মাথা ঘোরানো, শারীরিক দুর্বলতা, অতিরিক্ত ক্লান্তি, অল্পতেই হাঁপিয়ে যাওয়া ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়। একজন ব্যক্তির শরীরজুড়ে অক্সিজেন সঞ্চালন এবং বহন করার পর্যাপ্ত লোহিত রক্তকণিকা না থাকলে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। আর অক্সিজেনের আপেক্ষিক অভাবই ঠান্ডা লাগার কারণ হতে পারে।
হাইপোথাইরয়েডিজম
থাইরয়েড হলো গলার মাঝামাঝি একটি ছোট গ্রন্থি যা হরমোন তৈরি করে শরীরের বিপাক নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। এই হরমোনের স্বল্পতা এবং ধীর বিপাকের কারণে শীত অনুভূত হয়। এর অন্যান্য লক্ষণ হলো শুষ্ক ত্বক, চুল পাতলা হয়ে যাওয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, দীর্ঘস্থায়ী ও ঘন ঘন পিরিয়ড এবং অকারণে ওজন বৃদ্ধি ইত্যাদি দেখা দেয়।
কম ওজন
অতিরিক্ত কম ওজন দেহের প্রয়োজনীয় চর্বির ঘাটতি নির্দেশ করে। সেকারণে শরীর ঠাণ্ডা হয়ে যেতে পারে। চিকিৎসকের মতে, পর্যাপ্ত পুষ্টির ঘাটতি দেহের বিপাক হ্রাস করে। ফলে পর্যাপ্ত তাপ উৎপাদন হয় না। আর তাপের অভাবেই শীত অনুভূত হয়।
উদ্বেগ
সাধারণ না হলেও অনেকে উদ্বিগ্ন অবস্থায় শীত অনুভব করেন। কিছু নিয়ে মাত্রাতিরিক্ত চিন্তা করলে হৃদগতির বৃদ্ধি, ঘাম হওয়া, বমিভাব ইত্যাদি শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। প্যানিক অ্যাটাক হলে অনেকের শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়।
কালের আলো/ডিএইচ/কেএ