বিজয়ের গৌরবে উজ্জীবিত বিজিবি, ইস্পাত কঠিন দৃঢ়তায় এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়

প্রকাশিতঃ 8:26 pm | December 16, 2024

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

বাঙালির জাতীয় জীবনে সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল ও বিজয়ের দিন। বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে লাল-সবুজের বিজয় নিশান। দেশকে শত্রুমুক্ত করে বিজয় ছিনিয়ে এনে বীরের জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার অবিস্মরণীয় দিনে সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) উৎসবের রঙ লেগেছিল সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) প্রতিটি সদস্যের ভুবনে। শোক আর রক্তের ঋণ শোধ করার গর্ব নিয়ে উজ্জীবিত বিজিবি দিবসটি উদযাপন করে অন্য রকম অনুভূতি নিয়ে। ত্রিশ লাখ শহীদকে বিনম্র চিত্তে জানিয়ে দেয়-‘আমরা তোমাদের ভুলবো না।’

আবার আপন সত্তাকে খুঁজে পাওয়ার দিনে, জীবন দিয়ে যুদ্ধ করে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার মর্যাদা সমুন্নত রাখতে বিজিবি সদর দপ্তরসহ বাহিনীর সকল রিজিয়ন, প্রতিষ্ঠান, সেক্টর ও ইউনিটসমূহে শ্রদ্ধাবনতচিত্তে গভীর শোক-শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় স্মরণ করা হয় বাঙালি জাতির সূর্য সন্তানদের। ইস্পাত কঠিন দৃঢ়তা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ও উচ্চারিত হয়েছে বাহিনীটির মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী এর নেতৃত্বাধীন সুসংগঠিত, চৌকস, সুশৃঙ্খল ও পেশাদার দেশপ্রেমিক বাহিনীটির প্রতিটি সদস্যের কন্ঠে কন্ঠে।

বিজিবি সদর দপ্তর জানায়, দিবসের কর্মসূচি অনুযায়ী সকালে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে বিজিবি সদর দপ্তরসহ অন্যান্য সকল ইউনিটে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। প্রত্যুষে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি মো.সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা ড.মুহাম্মদ ইউনূস এর পুষ্পস্তবক অর্পণ অনুষ্ঠানে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন। পরে সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে বিজিবি মহাপরিচালক মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পিলখানাস্থ ‘সীমান্ত গৌরব’-এ পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় বিজিবি’র একটি সুসজ্জিত চৌকস দল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ‘গার্ড অব অনার’ প্রদান করে।

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে পিলখানাসহ সারাদেশে বিজিবি’র সকল ইউনিটে প্রীতিভোজের আয়োজন করা হয়। পিলখানায় আয়োজিত প্রীতিভোজ অনুষ্ঠানে বিজিবি মহাপরিচালক প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এ সময় বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, ‘আজকের এই দিনটিতে দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম ও ত্রিশ লক্ষ শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছিল বাংলাদেশের কাক্সিক্ষত স্বাধীনতা। আর এই স্বাধীনতা অর্জনে এই বাহিনীর অবদান ছিল অনবদ্য ও অবিস্মরণীয়। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে এই বাহিনীর ২জন বীরশ্রেষ্ঠসহ ৮১৭ জন অকুতোভয় বীরযোদ্ধা শাহাদত বরণ করেছিল যা এই বাহিনীর জন্য অত্যন্ত সম্মান ও গৌরবের।’

বিজিবি সদর দপ্তর আরও জানায়, বিজয় দিবসে বিজিবি’র সকল ইউনিটের মসজিদে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সুস্বাস্থ্য, জাতির শান্তি ও সমৃদ্ধি এবং বাহিনীর উত্তরোত্তর অগ্রগতি ও একাত্মতা কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। দিবসের অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে বিজিবি সদর দপ্তরসহ সারাদেশে বিজিবি’র বিভিন্ন স্থাপনায় বর্ণিল আলোকসজ্জা করা হয় এবং সকল ইউনিটের গেইট ও গেইট সংলগ্ন সড়কের আশেপাশের এলাকা ও স্থাপনাসমূহে জাতীয় পতাকা, বিভিন্ন ব্যানার ও ফেস্টুনে সজ্জিত করা হয়। এছাড়া বিজিবি সদস্য ও তাদের পরিবারবর্গ এবং বিজিবি’র স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য বিজিবি সিনেমা হলে বিনামূল্যে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পিলখানাস্থ বিজিবি সদর দপ্তরের জাদুঘর ও চিড়িয়াখানা বিনা টিকেটে প্রদর্শনীর জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়। বিকেলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকায় (আণবিক শক্তি কমিশন এর বিপরীত পার্শ্বে) বিজিবি বাদকদল বাদ্য পরিবেশন করে।

কালের আলো/এমএসএএকে/এমকে