বিনম্র শ্রদ্ধা-কৃতজ্ঞতায় আত্মদানকারী শহীদদের স্মরণ করলো নৌবাহিনী, শাশ্বত বিজয়ের দিনে জাহাজ-মিউজিয়াম ঘুরে দর্শনার্থীদের উচ্ছ্বাস

প্রকাশিতঃ 10:59 pm | December 16, 2024

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

রূপসা নদীর পাড়ে চিরঘুমে আচ্ছন্ন বাংলাদেশ নৌবাহিনীর গর্ব বীরশ্রেষ্ঠ শহিদ রুহুল আমিন। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন পলাশের প্রধান ইঞ্জিন রুমে আর্টিফিসার। একাত্তরের ১০ ডিসেম্বর খুলনার রূপসা নদীতে যুদ্ধজাহাজ পলাশে শত্রুপক্ষের বিমান হামলায় শহীদ হন তিনি। প্রথম বিমান হামলাতেই একইভাবে শহীদ হয়েছিলেন নৌযোদ্ধা শহিদ মহিবুল্লাহ। চাঁদপুরের এই সূর্য সন্তান বীর বিক্রম উপাধিতে ভূষিত হন। তাদের আত্মত্যাগের বিনিময়েই বাঙালির জীবনে এসেছে চির আরাধ্য স্বাধীনতা।

বাঙালির জীবনে আসা নতুন প্রভাতের গৌরবময় দিনটিতে কৃতজ্ঞচিত্তে তাদের স্মরণ করেছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) বাঁধভাঙা আনন্দের দিনে খুলনা অঞ্চলের আঞ্চলিক কমান্ডার কমডোর এ কে এম জাকির হোসেন স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মদানকারী বীরশ্রেষ্ঠ শহিদ রুহুল আমিন ও বীর বিক্রম শহিদ মহিবুল্লাহ্’র সমাধিস্থলে ‘গার্ড অব অনার’ ও পুস্পস্তবক অর্পণ করেন। শুধু এটিই নয়, যথাযোগ্য মর্যাদা ও বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে দিনমান বাংলাদেশ নৌবাহিনী দিবসটি পালন করেছে। বিনম্র শ্রদ্ধা ও গভীর কৃতজ্ঞতায় স্মরণ করেছে আত্মদানকারী বীর শহীদদের।

জানা যায়, মহান বিজয় দিবস কেবলই স্বাধীনতার স্মারক নয়, এটি বাঙালির জীবনে আত্মত্যাগ, বীরত্ব এবং জাতির সম্মিলিত চেতনার প্রতীক। লাল-সবুজের পতাকা উড়িয়ে উল্লাস করার ৫৪তম বিজয়োৎসবে দিবসটি যথাযথভাবে পালনে নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম নাজমুল হাসান এর নির্দেশে বিস্তৃত কর্মসূচি গ্রহণ করে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। এদিন বাদ যোহর নৌ অঞ্চলসমূহের মসজিদে স্বাধীনতা যুদ্ধে শাহাদাত বরণকারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মার মাগফেরাত, দেশের শান্তি, সমৃদ্ধি ও উন্নতি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে প্রত্যুষে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি মো.সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা ড.মুহাম্মদ ইউনূস এর পুষ্পস্তবক অর্পণ অনুষ্ঠানে নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম নাজমুল হাসান উপস্থিত ছিলেন।

আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, মহান বিজয় দিবসে নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ ঢাকা সদর ঘাঁটে বানৌজা কুশিয়ারা, পাগলা নেভাল জেটি নারায়ণগঞ্জে বানৌজা সুরমা, চট্টগ্রাম নেভাল জেটিতে বানৌজা সমুদ্র অভিযান, বিআইডব্লিউটিএ লঞ্চ টার্মিনাল খুলনায় বানৌজা পদ্মা, দিগরাজ মোংলা নেভাল বার্থে বানৌজা তুরাগ, বিআইডব্লিউটিএ ঘাঁট বরিশাল এ বানৌজা মহিবুল্লাহ, এবং পায়রা বন্দর (সার্ভিস জেটি) পটুয়াখালীতে বানৌজা অপরাজেয় এদিন দুপুর ২টা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সর্বসাধারণের পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়। পাশাপাশি চট্টগ্রামের লাভলেইনে অবস্থিত মেরিটাইম মিউজিয়াম জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়।

অনেক প্রাপ্ত বয়স্করা নিজেদের সন্তানদের মুখে রং তুলিতে জাতীয় পতাকা এঁকে নৌবাহিনীর জাহাজ ও মিউজিয়াম দেখতে আসেন। কেউ কেউ ছোট শিশুকেও লাল-সবুজের পাঞ্জাবি ও শাড়ি পরিয়ে সঙ্গে নিয়ে আসেন। বিজয়ের আনন্দে মুখর হয়ে ওঠে প্রতিটি প্রবেশ পথ। এসব জাহাজ-মিউজিয়াম সরেজমিনে দেখতে পেরে তাঁরা সবাই একবাক্যে নিজেদের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। মুগ্ধতার কথা জানিয়ে একজন দর্শনার্থী বলেন, ‘প্রতি বছর বিজয়ের দিনে বাংলাদেশ নৌবাহিনী আমাদের এই সুযোগ করে দেয়। এর মাধ্যমে আমরা নতুন প্রজন্মের মাঝে ভিন্ন অনুভূতির জোগান দিতে পারি। বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ নামের এই ভূখণ্ড পৃথিবীর শেষ দিন অবধি টিকে থাকুক স্বমহিমায়, এমন প্রত্যাশা আমাদের।’

কালের আলো/এমএএএমকে