নির্বাচন নিয়ে কেটেছে অস্বস্তি
প্রকাশিতঃ 9:18 pm | December 17, 2024
কালের আলো রিপোর্ট:
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের একটি সম্ভাব্য সময়সীমা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড.মুহাম্মদ ইউনূস। এর ফলে নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা দূর হয়েছে। কাটতে শুরু করেছে অস্বস্তিও। তাঁর এই বক্তব্যে মোটামুটি আশান্বিত হয়েছেন প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি। স্বাগত জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। তবে কেউ কেউ আবার স্পষ্ট পথনকশা না হওয়া পর্যন্ত আশস্ত হতে পারছেন না। বিএনপি বলছে, সুনির্দিষ্ট করে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা হলেই তারা পুরোপুরি আশান্বিত হতে পারবেন।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সোমবার (ডিসেম্বর ১৬) সকালে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছেন, ২০২৫ সালের শেষ দিক থেকে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। এ প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সব প্রধান সংস্কারগুলো সম্পন্ন করে নির্বাচন আয়োজন করার ব্যাপারে বারবার আপনাদের কাছে আবেদন জানিয়ে এসেছি। তবে রাজনৈতিক ঐকমত্যের কারণে আমাদের যদি, আবার বলছি যদি, অল্প কিছু সংস্কার করে ভোটার তালিকা নির্ভুলভাবে তৈরি করার ভিত্তিতে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হয় তাহলে ২০২৫ সালের শেষের দিকে নির্বাচন অনুষ্ঠান হয়তো সম্ভব হবে।
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, আর যদি এর সঙ্গে নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে এবং জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রত্যাশিত মাত্রার সংস্কার যোগ করি তাহলে অন্তত আরও ছয় মাস অতিরিক্ত সময় লাগতে পারে। মোটাদাগে বলা যায়, ২০২৫ সালের শেষ দিক থেকে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করা যায়।
প্রধান উপদেষ্টার নির্বাচন সম্পর্কিত বক্তব্যের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু প্রথমেই প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের ইচ্ছা পোষণ করেছেন। এই ধরনের সম্ভাব্য তারিখের কথা এর আগেও বেশ কয়েকজন উপদেষ্টা বিভিন্ন পর্যায়ে বলেছেন। তবে নির্দিষ্ট করে যেদিন নির্বাচনী রোডম্যাপের ঘোষণা দেওয়া হবে, সেদিন জাতি আরও বেশি আশান্বিত হতে পারবে। নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা হলে যারা নির্বাচন করবেন তাদের জন্য ভালো হয়।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের সম্ভাব্য যে তারিখ ঘোষণা করেছেন, তা একেবারে খারাপ না। তবে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা শেষে একটি নির্দিষ্ট তারিখ হওয়া জরুরি। নির্বাচনী রোডম্যাপও ঘোষণা হওয়া দরকার। প্রয়োজনীয় কিছু সংস্কার শেষে যত দ্রুত নির্বাচন হবে ততই জাতির জন্য মঙ্গল। অবশিষ্ট সংস্কার নির্বাচিত সরকার করলেই তা গ্রহণযোগ্য হবে।
প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের আগের দিন রোববার (১৫ ডিসেম্বর) বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছিলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের আর কত মাস কিংবা কত সময় প্রয়োজন, তা জানার অধিকার জনগণের রয়েছে। অস্পষ্টতা কাটিয়ে অচিরেই নির্বাচনী রোডম্যাপে যাত্রা শুরু করবে বাংলাদেশ। রোডম্যাপের কথা শুনলেই যদি উপদেষ্টাদের চেহারায় অস্বস্তির ছাপ ফুটে ওঠে, তা অবশ্যই গণআকাক্সক্ষা বিরোধী।
এই বক্তব্যের ১৬ ঘণ্টার মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার নির্বাচনের সম্ভাব্য দিনক্ষণকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি। তবে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের ধারণা দিয়েছেন। কিন্তু বিএনপি ধারণা নয়, নির্দিষ্ট রোডম্যাপ চায়।
বিএনপি দ্রুত নির্বাচন চাইলেও জামায়াত সংস্কারে জোর দিচ্ছিল। প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, জাতির প্রত্যাশা ছিল প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে ৯ থেকে ১০ মাসের মধ্যে নির্বাচন হবে। তবে এই ঘোষণা নির্বাচনের দিকে যাত্রার আলামত। অন্তর্বর্তী সরকারকে যাত্রাপথে কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে। তা না হলে হয়তো আগেই রোডম্যাপ দিতে পারত।
প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণাকে পথনির্দেশিকা বলে মনে করেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেন, এই অর্থে ভালো। সংস্কারের কাজের জন্য প্রধান উপদেষ্টা সময় নির্ধারণ করছেন, তা ইতিবাচক। প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় ঐকমত্যের জন্য যে কমিটি গঠনের কথা বলছেন, তা ভালো ধারণা। কথাবার্তা বলবেন। কিন্তু কতদিন সময় লাগবে, কে জানে। আলোচনায় সময় নির্ধারিত হবে।
এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জুর বলেন, প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা ইতিবাচক। কিন্তু সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া দিনক্ষণ রক্ষা কঠিন হবে। চরমোনাইর পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন অবশ্য ভোটের চেয়ে সংস্কারে গুরুত্ব দিচ্ছে। দলটির মহাসচিব ইউনূস আহমাদ বলেন, সরকার চেষ্টা করলে এক বছরের মধ্যে সংস্কার সম্ভব।
কালের আলো/এমকে/আরআই