রাশিয়া সফরে ইইউভুক্ত স্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিতঃ 11:35 am | December 23, 2024

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, কালের আলো:

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন স্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রী রবার্ট ফিকোকে নিজে দেশে বরণ করে নিয়েছেন। ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার রুশ আগ্রাসন শুরুর পর থেকে রবিবার (২২ ডিসেম্বর) ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) কোনও দেশের নেতা হিসেবে বিরল এই সফর করলেন ফিকো। মার্কিন বার্তাসংস্থা এপি এ খবর জানিয়েছে।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভের বরাতে দেশটির সংবাদমাধ্যম আরআইএ জানিয়েছে, রাশিয়ায় জরুরি কাজ নিয়েই গেছেন ফিকো। রবিবার সন্ধ্যায় পুতিনের সঙ্গে একান্ত বৈঠক করেছেন তিনি। পেসকভের বক্তব্য অনুযায়ী, বৈঠকে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি ও রাশিয়ার প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল।

বর্তমানে ইউক্রেনের মধ্য দিয়ে রাশিয়ার প্রাকৃতিক গ্যাস স্লোভাকিয়াসহ কিছু ইউরোপীয় দেশে সরবরাহ করা হচ্ছে। এই সরবরাহের জন্য পাঁচ বছরের একটি চুক্তি রয়েছে, যা যুদ্ধ শুরুর আগে সই হয়েছিল ও চলতি বছরের শেষে তার মেয়াদ পূর্ণ হতে যাচ্ছে। ব্রাসেলসে গত বৃহস্পতিবার ইইউ নেতাদের ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, কিয়েভ এই চুক্তি নবায়ন করতে চায় না।

এদিকে ফিকো দাবি করেছেন, জেলেনস্কির সিদ্ধান্ত তার দেশের স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর হবে।

রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ বন্ধের আশঙ্কায় গত মাসে আজারবাইজান থেকে প্রাকৃতিক গ্যাস ক্রয়ের জন্য একটি স্বল্পমেয়াদি চুক্তি করেছে স্লোভাকিয়া। এর পাশাপাশি, পোল্যান্ডের পাইপলাইনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির জন্য একটি চুক্তিও করেছে।

এছাড়া, অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি ও চেক প্রজাতন্ত্রের গ্যাস নেটওয়ার্কের মাধ্যমে জার্মানিসহ অন্যান্য সরবরাহকারীর কাছ থেকেও আমদানির সক্ষমতা রয়েছে স্লোভাকিয়ার।

ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরুর পর থেকে ইউরোপীয় নেতাদের পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ বা ফোনালাপ প্রায় হয় না বললেই চলে। তবে, যুদ্ধ শুরুর কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই পুতিনের সঙ্গে দেখা করেছিলেন অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলর কার্ল নেহামার। হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওরবান এ বছরের জুলাইয়ে রাশিয়া সফর করেন। তাদের এসব সফরের ব্যাপক সমালোচনা করেছেন কিয়েভ ও ইউরোপীয় নেতারা।

ইইউ নেতাদের মধ্যে পুতিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী। তিনি নিয়মিতভাবে ইউক্রেনকে সহায়তা ও রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপে ইইউর প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত করেছেন। যুদ্ধ বন্ধের পক্ষে কথা বললেও ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা বা ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার বিষয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেননি ওরবান।

রাশিয়ার যুদ্ধ নিয়ে ফিকোর দৃষ্টিভঙ্গি অধিকাংশ ইউরোপীয় নেতা থেকে আলাদা। গত বছর রুশপন্থি ও মার্কিন-বিরোধী প্ল্যাটফর্ম নিয়ে তার দল পার্লামেন্ট নির্বাচনে জয়লাভ করে তিনি ক্ষমতায় ফিরে আসেন। এরপর থেকেই তিনি স্লোভাকিয়া থেকে ইউক্রেনে সামরিক সহায়তা বন্ধ করেছেন, রাশিয়ার ওপর ইইউর নিষেধাজ্ঞার সমালোচনা করেছেন ও ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদে বাধা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনেও উপস্থিত হয়েছিলেন ফিকো। অক্টোবরে রসিয়া ওয়ান চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, পশ্চিমাদের সমর্থন ইউক্রেনের যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করেছে।

আগামী মে মাসে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি জার্মানির পরাজয়ের ৮০তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে মস্কোর সামরিক কুচকাওয়াজে অংশ নেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছেন ফিকো। প্রতি বছর অনুষ্ঠিত এই ‘বিজয় দিবস’ উদ্‌যাপনকে ঘিরে সামরিক সক্ষমতা প্রদর্শনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষ হিসেবে ব্যবহার করে রাশিয়া। চলতি বছরের কুচকাওয়াওয়াজে ইউক্রেনে যুদ্ধরত রুশ সেনাদের ‘বীর’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন পুতিন।

কালের আলো/ডিএইচ/কেএ