বড়দিনের প্রার্থনায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা কামনা

প্রকাশিতঃ 1:18 pm | December 25, 2024

কালের আলো ডেস্ক:

খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ‘শুভ বড়দিন’  বুধবার (২৫ ডিসেম্বর)। এই ধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিষ্ট এই সময়ে জেরুজালেমে জন্মগ্রহণ করেন। খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীরা এ দিনটিকে ‘শুভ বড়দিন’ হিসেবে উদযাপন করে থাকেন। খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মানুষরা বিশ্বাস করেন, সৃষ্টি-কর্তার মহিমা প্রচারের মাধ্যমে মানবজাতিকে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত করতেই প্রভু যিশুর পৃথিবীতে আগমন ঘটেছিল। এই দিন উপলক্ষে দেশের সব গির্জায় হয়েছে প্রার্থনা। বিশ্ব শান্তি কামনা করা হয় এই প্রার্থনায়।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশের খ্রিষ্টান ধর্মানুসারীরাও এ দিন যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও আচারাদি, আনন্দ-উৎসব এবং প্রার্থনার মধ্য দিয়ে ‘শুভ বড়দিন’ উদযাপন করছেন। এ উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গির্জাগুলোকে সাজানো হয়েছে নতুন-আঙ্গিকে। এছাড়াও মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা থেকে বিভিন্ন গির্জা এবং তারকা-হোটেলগুলোতে ব্যবস্থা করা হয়েছে আলোক সজ্জার। পাশাপাশি এদিন রাত সাড়ে ৭টা থেকে প্রার্থনার মধ্যে দিয়ে শুরু হয়েছে বড় দিনের আনুষ্ঠানিকতা।

বড়দিন উপলক্ষে দেশের সব গির্জায় অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রার্থনা। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৭টা থেকে রাত ১০টা এবং পরদিন বুধবার সকাল সাড়ে ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া কীর্তন, ভক্তিমূলক গানের মাধ্যমে যিশুকে স্মরণ করেন ভক্তরা।

রাজধানীর তেজগাঁও জপমালা রানি গির্জার পাল-পুরোহিত ফাদার জয়ন্ত এস. গমেজ প্রার্থনায় বলেন, পুরো বিশ্ব আজ যিশুকে বরণ করে নিচ্ছে পবিত্র খ্রিষ্টযাগের মধ্যে দিয়ে। আজকের এই দিনটি আমাদের জন্য আনন্দের, পুণ্যের। কারণ আজকেই ঈশ্বরের কাছ থেকে মানবজাতি পেয়েছে তার মুক্তিদাতাকে। ঈশ্বরকে আমরা আজকের এই দিনে কৃতজ্ঞতা জানাই আমাদেরকে দয়া করার জন্য। তিনি আমাদেরকে মুক্তির নিশ্চয়তা বিধান করলেন তার পুত্রের মধ্যে দিয়ে।

তিনি আরও বলেন, আজকে সেই জন্মের দিন, বড় দিন। আজকে আমরা সারা বিশ্বের জন্য প্রার্থনা করি। তার জন্মস্থানে যুদ্ধ চলছে এবং রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ চলছে। আমাদের বাংলাদেশের পরিবর্তিত অবস্থার মধ্যে দিয়েও আমরা চেষ্টা করছি একটা সুন্দর দেশ ও জাতি গড়ে তোলার জন্য। তাই আমাদের এখন প্রয়োজন শান্তি অবস্থা ও স্থিতিশীলতা। আজকে আমরা ঈশ্বরের কাছে সেই প্রার্থনাই জানাবো, যেন আমরা শান্তি পেতে পারি।

বড়দিন উপলক্ষে বুধবার সরকারি ছুটি। অপরদিকে দিনটি উপলক্ষে অনেক খ্রিষ্টান পরিবারে কেক তৈরি করা হবে, থাকবে বিশেষ খাবারের আয়োজন। এছাড়াও দেশের অনেক অঞ্চলে আয়োজন করা হয়েছে কীর্তনের পাশাপাশি ধর্মীয় গানের। খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের অনেকেই আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার জন্য বড়দিনকে বেছে নেন। পরিবারের সদস্যদের সাথে আনন্দ ভাগ করে নিতে অনেকেই রাজধানী ছেড়ে গেছেন গ্রামের বাড়িতে।

রাজধানীর তারকা হোটেলগুলোতে আলোকসজ্জার পাশাপাশি হোটেলের ভিতরে কৃত্রিমভাবে স্থাপন করা হয়েছে ক্রিসমাস ট্রি ও শান্তাক্লজ। বড়দিন উদযাপনে রয়েছে নানা আয়োজন।

খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের সবার কাছে একটি পুণ্যময় দিন হিসেবে পরিচিত বড় দিন। যিশু খ্রিষ্টের জন্ম কবে হয়েছিল, এ নিয়ে স্পষ্ট করে উল্লেখ নেই পবিত্র বাইবেলে। খ্রিষ্ট ধর্মের প্রবর্তকের জন্ম হয়েছিল অলৌকিকভাবে। আর তাকে স্মরণ করতে গির্জায় প্রার্থনার আহ্বান করার জন্য বাজানো হয় ঘণ্টাধ্বনি। যিশু খ্রিষ্টের অনুসারীরা মনে করেন- এই ঘণ্টাধ্বনি শুভ সংবাদের বার্তা পৌঁছায়।

খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস অনুযায়ী, যিশু খ্রিষ্ট পৃথিবীতে মানুষের রূপ গ্রহণ করে জন্মগ্রহণ করেন। পৃথিবীর সব পাপ থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে, মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ককে আরও সুসংহত করতেই যিশুর আগমন। যিশুর আগমনের এই ক্ষণ স্মরণ করতেই তাঁর অনুসারীরা বিশ্বব্যাপী ধর্মীয় ও সামাজিকভাবে বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে ২৫ ডিসেম্বর বড়দিন পালন করে থাকে। তাদের বিশ্বাস ডিসেম্বরেরই কোনও এক সময় যিশুর জন্ম।

কালের আলো/ডিএইচ/কেএ