খালেদা জিয়ার কোনো সংশ্লিষ্টতাই ছিল না: শুনানিতে আইনজীবীরা
প্রকাশিতঃ 9:54 pm | January 08, 2025
নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১০ বছরের সাজার বিরুদ্ধে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার করা আপিলের শুনানি তৃতীয় দিনে গড়িয়েছে। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চে বুধবার দ্বিতীয় দিনের শুনানি গ্রহণ করা হয়। বুধবার শুনানিতে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বলেন, এ মামলায় খালেদা জিয়ার কোনো ‘সংশ্লিষ্টতাই ছিল না’। কেবল রাজনৈতিক কারণে তাঁকেসহ পরিবারের সদস্যদের আসামি করা হয়েছে। পরে শুনানি মুলতবি করে আজ ফের শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।
আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, রুহুল কুদ্দুস কাজল, বদরুদ্দোজা বাদল, এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও কায়সার কামাল। অন্যদিকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আসিফ হাসান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আরশাদুর রউফ ও অনীক আর হক।
শুনানিতে রুহুল কুদ্দুস কাজল এ মামলায় খালেদা জিয়ার আপিল মঞ্জুরের পাশাপাশি যারা আপিল করেননি তাদেরও খালাস দেওয়ার আবেদন জানান। বদরুদ্দোজা বাদল বলেন, এ মামলার যাবতীয় ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত, যতদিন খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। কিন্তু ২০০৪ সালের দুর্নীতি দমন আইনে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। এ কারণে এই মামলার প্রক্রিয়াটা সঠিক ছিল না। তিনি আরও বলেন, ২০০৪ সালের দুর্নীতি দমন আইন যেহেতু আইনটি কার্যকরের পর থেকে প্রযোজ্য, সেহেতু এই মামলা এ আইনে হতে পারে না।
তবে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক এর বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, এটি ‘সাবস্টেন্টিভ ল’ নয়, ‘প্রসিজিয়ার্যা ল ল’। তাই দুদক আইনে অভিযোগ দায়েরে আইনের ব্যত্যয় হয়নি। খালেদা জিয়ার পক্ষে মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, এ মামলার বিবরণে কোথাও খালেদা জিয়ার কোনো স্বাক্ষর করার কথা উল্লেখ নেই। কায়সার কামাল বলেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের যে অর্থ আত্মসাতের কথা বলা হয়েছে, সেই অর্থ ব্যাংকে সুরক্ষিত আছে এবং ২ কোটি ৩৩ লাখ থেকে বেড়ে ৮/৯ কোটি টাকা হয়েছে।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। পাশাপাশি একই মামলায় খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানসহ মামলার অপর পাঁচ আসামির প্রত্যেককে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ ছয় আসামির প্রত্যেককে ২ কোটি ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। বাকি চার আসামি হলেন– সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, সাবেক এমপি ও ব্যবসায়ী কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ ও জিয়াউর রহমানের ভাগনে মমিনুর রহমান। এর মধ্যে পলাতক রয়েছেন তারেক রহমান, কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান।
এর পর বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে হাইকোর্টে আপিল করেন খালেদা জিয়া, সালিমুল হক কামাল এবং শরফুদ্দিন আহমেদ। পরে ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর হাইকোর্ট বেঞ্চ খালেদা জিয়ার সাজা বাড়িয়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেন। হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে লিভ-টু আপিল করেন খালেদা জিয়া। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দুই মামলায় খালেদা জিয়ার দণ্ড মওকুফ করেন রাষ্ট্রপতি। এর পরও গত নভেম্বরে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন তিনি। এর পর ১১ নভেম্বর সাজার রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার লিভ টু আপিল মঞ্জুর করেন আপিল বিভাগ। পাশাপাশি তাঁকে দেওয়া ১০ বছরের সাজা স্থগিত করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত সোমবার আপিলের শুনানি শুরু হয় আপিল বিভাগে।
কালের আলো/এসএকে