উষ্ণতার সীমা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রথম বছর ২০২৪
প্রকাশিতঃ 6:50 pm | January 10, 2025
আন্তর্জাতিক ডেস্ক, কালের আলো:
বিশ্বে প্রথমবারের মতো প্রাক-শিল্প যুগের তুলনায় গড় তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যাওয়ার রেকর্ড হয়েছে ২০২৪ সালে। শুক্রবার জলবায়ু বিজ্ঞানীরা এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন বলে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের জলবায়ু পরিবর্তন-বিষয়ক সংস্থা কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস (সিথ্রিএস) তাপমাত্রার নতুন এই মাইলফলকে পৌঁছানোর তথ্য নিশ্চিত করেছে। সংস্থাটি বলেছে, জলবায়ুর পরিবর্তন বিশ্বের তাপমাত্রাকে এমন স্তরে ঠেলে দিচ্ছে; আধুনিক যুগের মানুষ আগে কখনও যার মুখোমুখি হয়নি।
সিথ্রিএসের পরিচালক কার্লো বুওনটেম্পো বলেন, জলবায়ুর এই গতিপথ অবিশ্বাস্য। রেকর্ড রাখা শুরুর পর থেকে কীভাবে ২০২৪ সালের প্রত্যেকটি মাস প্রাক-শিল্প যুগের তুলনায় সবচেয়ে উষ্ণ বা দ্বিতীয় সর্বাধিক উষ্ণ ছিল তা তুলে ধরেছে গত বছরের রেকর্ড।
সিথ্রিএস বলেছে, ২০২৪ সালে বিশ্বের গড় তাপমাত্রা ১৮৫০ থেকে ১৯০০ সালের তুলনায় ১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। এই তাপমাত্রা ২০২৩ সালের শূন্য দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের তুলনায় অনেক বেশি। মানুষ বড় আকারে কার্বন নিঃসরণকারী জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো শুরু করার আগের সময়কালকে ‘‘প্রাক-শিল্প যুগ’’ ধরা হয়।
বিশ্বের উষ্ণতম বছরের রেকর্ড রাখা শুরু হওয়ার পর থেকে গত বছর ছিল বিশ্বের সবচেয়ে উষ্ণতম বছর। আর গত দশ বছরের প্রতিটি বছরই সবচেয়ে উষ্ণ বছর হওয়ার রেকর্ড গড়েছে।
যুক্তরাজ্যের আবহাওয়া অফিসও ২০২৪ সালের বৈশ্বিক তাপমাত্রা প্রাক-শিল্প যুগের তুলনায় গড় ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে বলে নিশ্চিত করেছে। মার্কিন বিজ্ঞানীরাও শুক্রবার ২০২৪ সালের জলবায়ু সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করবেন বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তির আওতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার আরও ভয়াবহ ও ব্যয়বহুল জলবায়ু বিপর্যয় এড়াতে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যাওয়া ঠেকানোর বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছিল। সেই চুক্তির মূল শর্ত ছিল যে ২০৩০ সাল পর্যন্ত সদস্যরাষ্ট্রগুলো প্রতি বছর কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ কমিয়ে আনবে এবং বিশ্বের তাপমাত্রা কোনোভাবেই ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি বাড়তে দেওয়া যাবে না।
তবে বাস্তবে ঘটেছে তার বিপরীত। গত এক দশকের প্রায় প্রতি বছরই বেড়েছে নিঃসৃত কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার অব্যাহত রাখার পাশাপাশি ব্যাপকমাত্রায় বনজঙ্গল ধ্বংসও এজন্য অনেকাংশে দায়ী।
বিশ্বজুড়ে কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণে সবচেয়ে এগিয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, চীন। গ্লোবাল কার্বন বাজেট রিপোর্টের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রের কার্বন নিঃসরণ কমেছে দশমিক ৬ শতাংশ এবং ইউরোপের কমেছে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ।
তবে নিঃসরণ বেড়েছে চীন এবং ভারতের। চীনের কার্বন ডাই অক্সাইডের নিঃসরণ বেড়েছে দশমিক ২ শতাংশ এবং ভারতের বেড়েছে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ।
সূত্র: রয়টার্স, এএফপি।
কালের আলো/এমডিএইচ