বিএনপি নেতা নুরুল ইসলামের মুক্তির দাবিতে গাজীপুরে মহাসড়ক অবরোধ

প্রকাশিতঃ 4:04 pm | January 11, 2025

গাজীপুর প্রতিনিধি, কালের আলো:

যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক শিল্প বিষয়ক সম্পাদক, বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম সরকারের মুক্তির দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শনিবার (১১ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টার পর থেকে টঙ্গীর কলেজ গেট এলাকায় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে এসব কর্মসূচি পালন করেন। এসময় ওই মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়, যার ফলে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।

বিক্ষোভ মিছিলটি টঙ্গীর কলেজ গেট এলাকা থেকে শুরু হয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এর আগে প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন গাজীপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকার। নুরুল ইসলাম সরকারের মুক্তি সংগ্রাম পরিষদের আয়োজনে আরও বক্তব্য রাখেন গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ও শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় কার্যকরী সভাপতি আলহাজ সালাহ উদ্দিন সরকার, আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলায় ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে দীর্ঘ ১৩ বছর কারাভোগের পর সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে খালাস পাওয়া বিএনপি নেতা রাকিব উদ্দিন সরকার পাপ্পু, সাবেক ছাত্রদল নেতা আইয়ুব আলী, কারারুদ্ধ নুরুল ইসলাম সরকারের ছেলে সরকার শাহনুর ইসলাম রনি।

সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন গাজীপুর সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আফজাল হোসেন কায়সার, মহানগর বিএনপি নেতা বশির আহমেদ বাচ্চু, হুমায়ুন কবির রাজু, রাশেদুল ইসলাম কিরণ, ইসমাইল শিকদার বসু, শেখ মো. আলেক, নূর মোহাম্মদ, গাজীপুর মহানগর যুবদলের আহবায়ক সাজেদুল ইসলাম, মহানগর স্বেচ্ছাসেবকদলের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন শাহীন, সাবেক সভাপতি জসিম উদ্দিন ভাট, যুবদল নেতা সৌমিক সরকারসহ টঙ্গী ও গাজীপুর মহানগর বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী। এ কর্মসূচিতে টঙ্গীর সাধারণ মানুষও স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন।

২০০৪ সালের ৭ মে টঙ্গী নোয়াগাঁও স্কুল মাঠে স্বেচ্ছাসেবকলীগের এক সম্মেলনে কমিটি ঘোষণার পর পরই দলীয় সন্ত্রাসীদের গুলিতে খুন হন আহসান উল্লাহ মাস্টার। এ ঘটনায় আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছোট ভাই মতিউর রহমান মতি বাদী হয়ে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরো ১০/১২ জনকে আসামি করে সাবেক টঙ্গী থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় আওয়ামী লীগ দলীয় নেতাকর্মীদের আসামি করা হলেও তৎকালীন যুবদলের কেন্দ্রীয় শ্রম ও শিল্প বিষয়ক সম্পাদক নুরুল ইসলাম সরকারসহ বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের মোট ৫ জনকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আসামি করা হয় বলে বিএনপির অভিযোগ। আহসান উল্লাহ মাস্টার দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে খুন হন মর্মে তখন সরকার একটি প্রেসনোটও জারি করে।

পরবর্তীতে তদন্ত শেষে ওই বছরের ১০ জুলাই ৩০ জনের নামে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। ২০০৫ সালের ১৬ এপ্রিল বিচারিক আদালত নুরুল ইসলাম সরকারসহ ২২ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ছয় জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ ও দু’জনকে খালাস দেন। পরে বিচারিক আদালতের রায়ের বিষয়ে হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স আসে। পাশাপাশি আসামিদের পক্ষ থেকে জেল আপিল করা হয়। বাদী পক্ষের কালক্ষেপণ ও বার বার অনাস্থায় মোট ৮টি বেঞ্চ পরিবর্তনের পর ২০১৬ সালের ১৫ জুন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রায় ঘোষণা করে। রায়ে ছয় জনের ফাঁসি বহাল রাখা হয় এবং যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ১ জন ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১০ জন মোট ১১ জনকে খালাস এবং সাত জনের ফাঁসির সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন সাজা দেয়া হয়।

আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলায় নুরুল ইসলাম সরকারকে হুকুমের আসামি করা হলে তিনি উচ্চ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন জানান। উচ্চ আদালতের অন্তবর্তীকালীন জামিন শেষে তিনি নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করে স্থায়ী জামিনের আবেদন করেন। পরে আদালত তাকে জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠান। প্রায় ২০ বছর ধরে তিনি এ মামলায় কারাগারে আটক আছেন।

কালের আলো/এএএন/কেএ