ভেবেছিলাম ভারত এখন আর সীমান্তে অবৈধ সুবিধা নেবে না: জাহাঙ্গীর আলম
প্রকাশিতঃ 5:06 pm | January 12, 2025
নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে সীমান্তের শূন্যরেখা বরাবর কাঁটাতারের বেড়া স্থাপনসহ ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফের সমস্যামূলক কাজের ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ভেবেছিলাম ভারত এতদিন (সীমান্তে) যে অবৈধ সুবিধা নিয়েছে সেটা আর নেবে না।
তিনি বলেন, গেল পাঁচই আগস্টের পর তারা (ভারত) ওখানে কিছু করেনি। যে কারণে আমরা ভেবেছিলাম তারা আর কিছু করবে না। ভেবেছিলাম তারা এতদিন যে অবৈধ সুবিধা নিয়েছে, সেটা আর নেবে না।
রোববার (১২ জানুয়ারি) সচিবালয়ে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা একথা বলেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের সীমানা নির্ধারণ ও উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সঙ্গে আমাদের এ পর্যন্ত মোট চারটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এসবের মধ্যে একটি ছিল ১৯৭৫ সালের ১৫০ গজের মধ্যে কেউ কোনো প্রতিরক্ষা সামর্থ্য কিংবা ডিফেন্স পটেনশিয়ালিটি আছে, এসব জিনিস কেউ রাখতে পারবে না। এছাড়া শূন্যরেখা থেকে ১৫০ গজের মধ্যে কোনো উন্নয়নমূলক কাজ করতে গেলে একে অপরের থেকে সম্মতি নিতে হবে। কোনো সম্মতি ছাড়া তারা এ কাজটি করতে পারবেন না।
তিনি বলেন, ভারত কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ ও তাদের মধ্যে বিদ্যমান চার হাজার ১৫৬ কিলোমিটার সীমান্তের মধ্যে তিন হাজার ২৭১ কিলোমিটারে এরইমধ্যে কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছে। বাকি ৮৮৫ কিলোমিটার আছে। বিগত সরকারের আমলের ২০১০ সাল থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে কতগুলো অসম কাজ, যেগুলো ভারতের করা ঠিক হয়নি, কিন্তু তখনকার সরকার তাদের কতগুলো সুযোগ দিয়েছিল। এসব সুযোগের মধ্যে ১৬০টি স্থানে তারা একই লেয়ারওয়ালা কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছে, তারপরে ৭৮টি স্থানে আরও ঝামেলা রয়েছে।
‘বর্তমানে চাঁপাইনবাবগঞ্জে সীমান্তে একটা, আরেকটা তিন বিঘা করিডরের ওখানে, আরেকটা নওগাঁর পত্নিতলার ওখানে, আরেকটা লালমনিরহাট। সম্প্রতি এসব স্থানে সমস্যা দেখা দিয়েছে। এরইমধ্যে বিএসএফ ও বিজিবির মধ্যে আলোচনা হয়েছে। বিজিবি শক্ত অবস্থান নেওয়ায় তারা এই জায়গায় কাজ বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, কিছু কিছু জায়গায় আগের সরকার লিখিত দিয়ে গেছে যে এটা এটা তারা করতে পারবেন, যেগুলো তাদের দেওয়া উচিত হয়নি। এরমধ্যে বড় সমস্যা দেখা দিয়েছে, তিনবিঘা করিডরের ওখানে।’
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ১৯৭৪ সালে যে বেরুবারি চুক্তি হয়েছিল, তখন ওটা দিয়ে দিয়েছি, আমাদের পার্লামেন্টেও সেটা প্রস্তুত ছিল। আর ভারত আমাদের এই প্যাসেজটা দেওয়ার কথা ছিল, ওখানে যাওয়ার করিডরটা। ওটা সারাজীবনের জন্য আমাদেরই থাকবে। আমরা দিয়ে দিলেও তারা পার্লামেন্টে সেটা অনুমোদন করেনি, জায়গাটা আমাদের দেয়নি। আগে তারা এক ঘণ্টা খুলতো, একটা ঘণ্টা বন্ধ করত, তারপরে ছয় ঘণ্টা খুলত, ছয় ঘণ্টা বন্ধ থাকত, রাতে পুরোটাই বন্ধ থাকত।
‘২০১০ সালের চুক্তি করা হয়েছিল, তখন বলা হয়েছিল, এটা পুরোটা সমসময় খোলা থাকবে, আমরা ব্যবহার করতে পারবো। কিন্তু এটির বদলে একটি বিরাট ঝামেলা করা হয়েছে। অঙ্গরপোত ও দহগ্রামের জিরো লাইন থেকে যে ১৫০ গজ দূরে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার কথা, সেটা তারা করতে পারবে। এজন্য এখানে বড় ধরনের একটা সমস্যা হয়েছে।’
‘আর বিজিবির সঙ্গে আমাদের জনগণ শক্ত অবস্থান নেওয়ায় অন্যান্য জায়গা থেকে তারা কাজ বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। এ জন্য আমি বিজিবি ও বাংলাদেশের জনগণকে অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। পাশাপাশি সাংবাদিকদেরও ধন্যবাদ জানাই, তারা কাজটি ভালোভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।’
বর্তমানে সীমান্তে ভারতীয়দের কাজ বন্ধ রয়েছে বলেও জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। বলেন, তিন বিঘা করিডর, নওগাঁর পত্নিতলা, লালমনিরহাট সীমান্ত—যে কয়েকটি জায়গায় তারা কাজ শুরু করেছিল, সবগুলোই বন্ধ রয়েছে।
তিনি বলেন, গেল পাঁচই আগস্টের পর তারা ওখানে কিছু করেনি, যে কারণে আমরা ভেবেছিলাম তারা আর কিছু করবে না। ভেবেছি, তারা এতদিন যে অবৈধ সুবিধা নিয়েছে, সেটা আর নেবে না।
‘আগামী মাসে ডিজি পর্যায়ের একটা বৈঠক আছে, সেখানে আলোচনা হবে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে যাতে এটা বন্ধ করা যায়’—যোগ করেন উপদেষ্টা।
তাদের এই কাজগুলো করতে দেবেন কি না— জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, তাদের এই কাজগুলো আমরা করতে দেব না। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে তিনবিঘা করিডরের ভেতরে যে দহগ্রাম ও আঙ্গোরপোত ওদের পুরো পেটের মধ্যে। চারদিকে ওরা, মাঝখানে আমরা। কেবল আমাদের সরু একটা পথ আছে। কৌশলে এ বিষয়গুলো দেখতে হবে।
অসম চুক্তিগুলে বাদ দেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ জন্যই ফেব্রুয়ারিতে আলোচনা হবে। আর আমরা একটি চিঠি দেব, যাতে অসম চুক্তিগুলো বাদ দেওয়া যায়।
এতে সমস্যার সমাধান হবে কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, অবশ্যই সমস্যার সমাধান হবে। সমস্যা একটি শব্দ, সমাধানও একটি শব্দ।
সাতক্ষীরার কাকডাঙ্গা গ্রামে মাঝে সোনাই নদীতে তারা নাইটভিশন ক্যামেরা বসিয়েছে। সুরক্ষা বেড়া দিয়েছে। এ বিষয়ে আপনাদের জানানো হয়েছে কি না, প্রশ্নে তিনি বলেন, সাতক্ষীরার ক্ষেত্রে নদীর মাঝপথে সীমান্ত, ওদের পাড়ে একটা ঝামেলা করেছে। কোনো কোনো অনেক দূরে কাঁটাতারের স্থাপনের সুযোগ থাকলেও তারা করেনি। আবার কোথাও উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন নাইটভিশন ক্যামেরা বসিয়েছে। যদিও তাদের এলাকায় বসিয়েছে, কিন্তু সেটা উচিত হয়নি।
কালের আলো/এএএন/কেএ