দক্ষিণ সুদানে ‘বিপদের বন্ধু’ বাংলাদেশ নৌবাহিনী, বৈশ্বিক শান্তি-স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ নৌবাহিনী প্রধান
প্রকাশিতঃ 11:03 pm | January 13, 2025
বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:
বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে আফ্রিকার ভয়ঙ্কর এক দেশ দক্ষিণ সুদান। ২০১১ সালের ৯ জুলাই পূর্ব আফ্রিকার স্বাধীন দেশ হিসেবে জন্ম নেওয়া দেশটি শুরু থেকেই অভ্যন্তরীণ সংঘাত ও গৃহযুদ্ধে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। ভেঙে পড়ে অর্থনীতিও। অশান্ত দেশটিতে শান্তি ফেরাতে নিরলসভাবে কাজ করছে জাতিসংঘ। আর প্রতি মুহুর্তে চোরা বুলেট, বিদ্রোহীদের হঠাৎ হামলা কিংবা বন্যপ্রাণীর আক্রমণে মৃত্যুর ভয় উপেক্ষা করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। মিশনটিতে অসীম সাহসিকতা আর বীরত্বপূর্ণ অবদান রাখছে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা। ফলত দক্ষিণ সুদানের বাসিন্দাদের ‘বিপদের বন্ধু’ হয়ে ওঠেছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী।
শান্তি প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে মানবিক সাহায্য, রসদ, ওষুধ ও জ্বালানীসহ বিভিন্ন সামগ্রী পৌঁছে দিতে অপরিহার্য এক নাম বাংলাদেশ নৌবাহিনী ফোর্স মেরিন ইউনিট। নৌবাহিনীর সদস্যরা পেশাদারি মনোভাব, কর্তব্যপরায়ণতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে স্থাপন করেছে অনন্য এক নজির। নিজ বাহিনীর সদস্যদের বহুমাত্রিক কর্মযজ্ঞ পরিদর্শন করতে দক্ষিণ সুদান সফর করছেন বাংলাদেশ নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম নাজমুল হাসান। বৈশ্বিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ নৌবাহিনী দৃঢ় প্রতিজ্ঞ বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। দক্ষিণ সুদান সফরকালে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন ‘ইউনাইটেড নেশনস মিশন ইন সাউথ সুদান (আনমিস)’-এ নিয়োজিত ‘বাংলাদেশ ফোর্স মেরিন ইউনিট’ এর সদস্যদের তিনি এই প্রতিশ্রুতির কথা পুনরায় স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।
নৌবাহিনী নির্ভীকচিত্তে দায়িত্ব পালন করে প্রশংসা কুড়িয়েছে জাতিসংঘেরও
২০১৪ সালে গৃহযুদ্ধে যখন উত্তাল দক্ষিণ সুদান তখন জাতিসংঘের রসদবাহী নৌযানটি বিদ্রোহীদের হামলার মুখে পড়ে। এরপর জাতিসংঘ বিশেষায়িত একটি বাহিনীর অনুভব করে। তারপর থেকেই নীল নদ পাড়ি দিয়ে প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী, জ্বালানি, ওষুধপত্র ও মানবিক সাহায্য বহনকারী বার্জসমূহের নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করে চলেছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ফোর্স মেরিন ইউনিট। সফলতার সঙ্গেই হাজারো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে চলেছে বছরের পর বছর। একই সঙ্গে দক্ষিণ সুদানে লড়াইরত গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে শান্তি স্থাপন ও যোগাযোগ বাড়াতে কঠিন এবং বিপদজনক পরিস্থিতিতেও অদম্য বাংলাদেশ নৌবাহিনী। যেখানে কাজ করতে ভয় উন্নত বিভিন্ন দেশের সামরিক বাহিনী। কিন্তু সেখানে কর্মদক্ষতায় স্বল্পতম সময়ের মধ্যেই নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে তাঁরা। বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর হামলার ঝুঁকি ও বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কাছে হার না মেনে তাঁরা নির্ভীকচিত্তে দায়িত্ব পালন করে প্রশংসা কুড়িয়েছে জাতিসংঘেরও।
- নৌবাহিনী নির্ভীকচিত্তে দায়িত্ব পালন করে প্রশংসা কুড়িয়েছে জাতিসংঘেরও
- দক্ষিণ সুদানে উজ্জ্বল ও শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যত গড়তে বিশেষ ভূমিকায় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী
- দক্ষতা ও পেশাদারিত্ব প্রদর্শনের মাধ্যমে দেশের জন্য বয়ে আনছে গৌরব ও সম্মান
দক্ষিণ সুদানে উজ্জ্বল ও শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যত গড়তে বিশেষ ভূমিকায় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী
দক্ষিণ সুদান সফরকালে নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম নাজমুল হাসান জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন ‘ইউনাইটেড নেশনস মিশন ইন সাউথ সুদান (আনমিস)’-এ নিয়োজিত ‘বাংলাদেশ ফোর্স মেরিন ইউনিট’ এর সদস্যদের উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে বলেছেন, ‘২০১৫ সাল থেকে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ফোর্স মেরিন ইউনিট এই মিশনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছে। যা দক্ষিণ সুদানের জনগণের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতিকে তুলে ধরেছে।
নৌবাহিনীর সদস্যরা সুদানের প্রত্যন্ত এলাকায় নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী, জ্বালানী, ওষুধপত্র ও মানবিক সাহায্য বহনকারী বার্জসমূহের নিরাপদ চলাচলের নিশ্চয়তা বিধান করে। সেই সঙ্গে নৌপথে জলদস্যুতা পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ, অগ্নিনির্বাপণে স্থানীয় জনগণকে সহায়তা প্রদান এবং আহত সামরিক-অসামরিক ব্যক্তিদের উদ্ধার ও জরুরি চিকিৎসা সেবা প্রদানসহ ডুবুরি সহায়তা প্রদানের কাজ করছে।’
তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ সুদানে নিয়োজিত মেরিন ইউনিট ছাড়াও বাংলাদেশ নৌবাহিনীর অনেক কর্মকর্তা ও নাবিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে পর্যবেক্ষক, স্টাফ অফিসার এবং কন্টিনজেন্ট সদস্য হিসেবে গর্বের সঙ্গে কাজ করছেন। শান্তি, নিরাপত্তা, মানবিক মর্যাদা ও মূল্যবোধ সমুন্নত রাখতে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর গৃহীত কার্যক্রম দক্ষিণ সুদানের জন্য একটি উজ্জ্বল ও শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যত গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে।’
দক্ষতা ও পেশাদারিত্ব প্রদর্শনের মাধ্যমে দেশের জন্য বয়ে আনছে গৌরব ও সম্মান
বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় ১৯৯৩ সাল থেকে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর শান্তিরক্ষীরা উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন এবং অনন্য সুনাম অর্জন করেছেন বলে উল্লেখ করেন নৌবাহিনী প্রধান। এডমিরাল এম নাজমুল হাসান বলেন, ‘এরই ফলে ২০১০ সালে, লেবাননের ভূ-মধ্যসাগরে জাতিসংঘ মেরিটাইম টাস্ক ফোর্সের আওতায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর দুইটি যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর একটি যুদ্ধজাহাজ বানৌজা সংগ্রাম লেবাননে নিয়োজিত থেকে দক্ষতা ও পেশাদারিত্ব প্রদর্শনের মাধ্যমে দেশের জন্য গৌরব ও সম্মান বয়ে আনছে। নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে বাংলাদেশ নৌবাহিনী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের অধীনে আরও জাহাজ এবং বিশেষায়িত ইউনিট মোতায়েনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। জাতিসংঘের ম্যান্ডেট বাস্তবায়নে এবং বিশ্ব মানবতার উন্নয়নে অবদান রাখতে নৌবাহিনী সদা সচেষ্ট।’ তিনি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে কর্মরত সশস্ত্র বাহিনী এবং বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যদের অভিনন্দন জানান এবং তাদের সাফল্য কামনা করেন। একই সঙ্গে তিনি শান্তি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য দক্ষিণ সুদানের জনগণের প্রতি শুভকামনা জানান।
সোমবার (১৩ জানুয়ারি) রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, এর আগে দক্ষিণ সুদানে নিয়োজিত বাংলাদেশ নৌবাহিনী ফোর্স মেরিন ইউনিটের একটি চৌকস দল নৌবাহিনী প্রধানকে গার্ড অব অনার প্রদান করেন। তিনি গার্ড পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করেন। দক্ষিণ সুদানে অবস্থানকালে নৌবাহিনী প্রধান ইউনাইটেড নেশনস মিশন ইন সাউথ সুদানে নিয়োজিত সেক্রেটারি জেনারেল এর বিশেষ প্রতিনিধি (এসআরএসজি), সাউথ সুদানের চিফ অফ ডিফেন্স ফোর্স (সিডিএফ), ফোর্স কমান্ডার এবং পরিচালক মিশন সাপোর্ট (ডিএমএস) এর সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এছাড়া নৌবাহিনী প্রধান এই মিশনে নিয়োজিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং এবং কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (ব্যানসেক) পরিদর্শন ও সেখানে কর্মরত শান্তিরক্ষী সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
কালের আলো/এমএএএমকে