ধান চাল সংগ্রহে ধীরগতি কাটছে না
প্রকাশিতঃ 9:57 am | January 16, 2025
নিউজ ডেস্ক, কালের আলো:
চলতি আমন মৌসুমে ধান ও চাল সংগ্রহ অভিযানে ধীরগতি রয়েছে। বাজারে ধান-চালের দাম সরকারি দামের চেয়ে বেশি হওয়ায় সরকারের সংগ্রহের যে লক্ষ্যমাত্রা তা পূরণে সংশয় দেখা দিয়েছে। যদিও খাদ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, খাদ্যে কোনো সমস্যাই হবে না, লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ হবে। খাদ্য মন্ত্রণালয় ও খাদ্য অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, চলতি বছর আমন মৌসুমে সরকার ১০ লাখ টন ধান ও চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। এর মধ্যে সাড়ে ৫ লাখ টন সিদ্ধ চাল, ১ লাখ টন আতপ চাল এবং সাড়ে ৩ লাখ টন ধান ক্রয়ের সিদ্ধান্ত রয়েছে। গত ১৭ নভেম্বর থেকে ধান ও সিদ্ধ চাল সংগ্রহ করে সরকার, যা চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। আর আতপ চাল ১০ মার্চ পর্যন্ত সংগ্রহ করা হবে। ধান চাল সংগ্রহ অভিযান শুরুর দুই মাস হলেও চাল সংগ্রহ হয়েছে অর্ধেকের মতো আর ধান সামান্যই বটে।
তবে খাদ্য সচিব মো. মাসুদুল হাসান বলেন, একটু ধীর গতি দেখা গেলেও আমরা খাদ্য সংগ্রহ নিয়ে কোনো আশঙ্কা করছি না। চালের সংগ্রহ ভালো বাকিটাও হয়ে যাবে। ধানের ক্ষেত্রে কৃষক দাম পাচ্ছে সেটাও ভালো খবর। আমরা একটু বেশি লক্ষ্যমাত্রাও রাখি যেন সমস্যা না হয়। সব মিলে কোনো সমস্যা হবে না। খাদ্য বিভাগের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইতোমধ্যে সিদ্ধ চাল সংগ্রহ হয়েছে ৩ লাখ ১০ হাজার টন, আতপ চাল ৩৫ হাজার টনের একটু বেশি এবং ধান সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ৮ হাজার টন। অর্ধেকের বেশি সময় চলে গেছে। এখনো অনেক চাল সংগ্রহ হয়নি। ধান সংগ্রহের হারও তলানিতে। ফলে মৌসুমের শেষ দিকে এসে ধান-চাল আর পাওয়াও যায় না। ফলে বড় একটা সংশয় থাকছেই। যদিও সরকার চাল আমদানি করে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে।
তবে খাদ্য অধিদপ্তরের সংগ্রহ বিভাগের পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, আমাদের চালের সংগ্রহ ইতোমধ্যেই অর্ধেক হয়েছে। এখনো এক মাসের বেশি সময় আছে সমস্যা হবে না। ধান সংগ্রহ সম্পর্কে এই কর্মকর্তা বলেন, আমাদের ধান কেনার যে টার্গেট দেওয়া হয় তা মূলত কৃষকদের সাপোর্ট দেওয়ার জন্য। যেহেতু এবার কৃষক বাজারেই বেশি দাম পাচ্ছে। আর আমাদের চাল নিয়েও কোনো দুশ্চিন্তা নাই। এখন চাল রাখার জায়গা নাই। সরকারি প্রাইভেট সেক্টরেও চাল আমদানি হচ্ছে। সুতরাং খাদ্যে কোনো সমস্যা নেই।
জানা গেছে, সরকারি মূল্য বাজারদরের চেয়ে গড়ে প্রায় ৭-৮ টাকা কম। দামের এত বেশি পার্থক্যের কারণে অনেক মিল মালিক সরকারকে চাল দিতে চান না। এসব কারণেও ধান ও চাল সংগ্রহ অভিযান ধীর গতিতে চলছে। বাংলাদেশ অটো হাস্কিং মিল অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা জানান, বাজারে প্রতি কেজি চাল বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। বেশি দামে কিনে লোকসান দিয়ে সরকারকে ধান ও চাল কি কেউ দেবে?
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, চাল সংগ্রহে সরকার সচেষ্ট রয়েছে। এটি তদারকিও করা হচ্ছে। আর পরিস্থিতি মোকাবিলায় ইতোমধ্যেই সরকারিভাবে ৬ লাখ টন এবং বেসরকারিভাবে ১৬ লাখ টন অর্থাৎ মোট ২২ লাখ টন চাল আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সরকার দেশের হতদরিদ্র, নিম্নআয়ের মানুষের জন্য ভর্তুকি মূল্যে খাদ্য সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজার থেকে খাদ্যশস্য আমদানি করে। এ ছাড়া সরকার বিভিন্ন বাহিনীর রেশন, ওএমএস, ওএমএস ট্রাক সেল, বিডব্লিউবি, টিসিবি, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি, ফেয়ারপ্রাইস কর্মসূচির মাধ্যমে খাদ্য সরবরাহ স্বাভাবিক রাখে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই নামমাত্র মূল্যে খাদ্যশস্য বিক্রি করে সরকার। এজন্য খাদ্য সংগ্রহ সবসময় মজবুত রাখতে হয় সরকারকে।
কালের আলো/এএএন/কেএ