সবার মতামতের ভিত্তিতেই জুলাই ঘোষণাপত্র করতে চান প্রধান উপদেষ্টা
প্রকাশিতঃ 6:00 pm | January 16, 2025
কালের আলো রিপোর্ট:
ঐক্যের মাঝেই অন্তর্বর্তী সরকারের জন্ম হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড.মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, ‘৫ আগস্টের পুরো অনুভূতিটাই ছিল একতার অনুভূতি। একতাতেই আমাদের জন্ম, একতাতে আমাদের শক্তি। সবার মতামতের ভিত্তিতেই জুলাই ঘোষণাপত্র করতে চাই।’ ১৬ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) রাজধানীর বেইলি রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জুলাই সনদ ঘোষণার বিষয়ে সর্বদলীয় ঐক্যের সভায় সূচনা বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সূচনা বক্তব্যে অধ্যাপক ড.মুহাম্মদ ইউনূস বৈঠকে অংশগ্রহণকারী সবার উদ্দেশ্যে বলেন, সবার সঙ্গে দেখা হলে, কথা হলে আমার কাছে খুব ভালো লাগে। মনে সাহস পাই। কারণটা পরিষ্কার। কারণ এ সরকারের জন্ম হয়েছে ঐক্যের মাঝখানে। ঐক্যর দ্বারা এটার সৃষ্টি।
তিনি বলেন, যখন আমরা নিজেরা নিজেরা কাজ করি, হঠাৎ দেখি একা পড়ে গেছি আশপাশে কেউ নেই, তখন একটু দুর্বল মনে করি। যখন আবার সবাই একসঙ্গে হন, তখন মনে সাহস পাই যে আমরা একতাবদ্ধভাবে আছি। সবাইকে দেখলে সরকারের মাঝে প্রাণসঞ্চার হয়।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সনদ ঘোষণার প্রেক্ষাপট বিস্তারিত তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, মাঝখানে একদিন ছাত্ররা এসে বললো তারা একটা প্রক্লেমেশন সনদ ঘোষণা করবে, আমাকেও সেখানে থাকতে হবে। আমি বুঝতে চাইলাম কী প্রক্লেমেশন দিচ্ছে। তারা বললো। তাদের কথা শুনে আমি বললাম যে এটা হবে না। এটা হবে না, আমার চাওয়াটাও হবে না, তোমাদেরও করা ঠিক হবে না।
কারণ তোমরা যদি ৫ আগস্টে ফিরে যেতে চাও, সেদিনের পরিপ্রেক্ষিতে যা হয়েছিল সেটাকে রিক্রিয়েট করতে হবে। একা এটা করা যাবে না। ওইদিনের পুরো অনুভূতিটাই ছিল একতার অনুভূতি। কেউ বলে নাই যে তুমি অমুক তুমি অমুক। তোমরা যদি করতে চাও, সবাইকে নিয়ে করতে হবে। এটা পরিষ্কার, এটা না করলে এটা ঠিক হবে না। যে একতা দিয়ে তোমরা ৫ আগস্ট সৃষ্টি করেছিলে সেটার অবমাননা হবে। ওই সময় শিক্ষার্থীরা আমার কথায় খুব একটা খুশি হয়নি। কিন্তু ক্রমে তারা বুঝলো যে ৫ আগস্ট যদি রিক্রিয়েট করতে হয়, তাহলে এভাবে একত্রে করতে হবে। সে কথা থেকেই এ আলাপ শুরু। কীভাবে একত্রে করা যাবে। আজকের আলোচনাটা একে কেন্দ্র করেই হবে।
যেখানে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে করতে পারবো না, উদ্দেশ্য ব্যাহত হলে দরকারও নেই। দরকারটা হলো, ওইটুকু স্মরণ করিয়ে দেবে, ওই যে আমি বললাম তো আপনাদের দেখলে আমার মনে সাহস আসে। সবার মনেই সাহস আসবে সবাই যদি আমরা একত্রে যাই। সারাদেশ একেবারে চমকে উঠবে যে আমরা তো আছি, জেগে আছি এখনো। আমরা ভোঁতা হয়ে যাইনি। আমাদের অনুভূতি এখনো ভোঁতা হয়নি। আমাদের অনুভূতি এখনো সেই চাঙ্গা আছে। আমরা জাতি হিসেবে ঐক্যবদ্ধভাবে আছি।
তিনি বলেন, আপনারা দোয়া করবেন, আমি যতদিন আছি এই একতা নিয়েই থাকবো। কাজেই সে পথে আমাদের চলতে হবে। আমাদের সেই সাহসটা আপনারা দেন, যখন আমি আপনাদের সঙ্গে একত্রে বসি। আপনাদের দেখে আজকে খুবই সাহসী মনে হচ্ছে ৫ আগস্টের কথা স্মরণ করে। আমরা একতাবদ্ধভাবে আছি এবং কীভাবে সেই একতাকে মানুষের সামনে প্রকাশ করবো, ৫ আগস্টকে রিক্রিয়েট করবো সেটাই এখন আলাপের বিষয়বস্তু হবে।
- আরও আলোচনার ভিত্তিতে ঘোষণাপত্র, গুরুত্ব দিয়েছেন সবাই : আসিফ নজরুল
- ঘোষণাপত্র নিয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্যে যেন ফাটল না ধরে : সালাহউদ্দিন আহমেদ
- জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে সবাই একমত, তবে তাড়াহুড়ো নয়: গোলাম পরওয়ার
- ঘোষণাপত্র নিয়ে সব রাজনৈতিক দল ঐকমত্য : নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী
তিনি উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, যেহেতু তাড়াহুড়ার মধ্যে এটা করতে হচ্ছিল তাই একটু এলোমেলো হয়ে গেছে। আপনারা মনে কষ্ট নেবেন না। কিন্তু আমরা যে বিষয়টা নিয়ে আলাপ করছি সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি সর্বসম্মতিক্রমে এ থেকে একটা দেশের সামনে আসতে পারি, সেটা দেশের জন্য ভালো, আন্তর্জাতিকভাবেও অনেক ভালো। সবাই দেখবে যে এই জাতিকে অনেক ঠোকরাঠোকরি করা হয়েছে, কিন্তু সবাই স্থির হয়ে আছে, শক্ত হয়ে আছে। সেটা আমরা সারা দুনিয়া ও দেশবাসীকে জানাতে চাই।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, গণসংহতি আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জাতীয় নাগরিক কমিটি, খেলাফত মজলিস, ইসলামি আন্দোলন, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলসহ (বাসদ মার্কসবাদী) বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের কর্তৃত্ববাদী শাসনের পতন ঘটে। অভ্যুত্থানের সূত্রপাত করা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘোষণাপত্রের দাবিতে প্রথম সোচ্চার হয়। পরে ছাত্র নেতৃত্বের রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম জাতীয় নাগরিক কমিটিও একই দাবি তোলে। অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতারা ২৮ ডিসেম্বর একযোগে ঘোষণা দেন, বছরের শেষ দিনে শহীদ মিনারে সমাবেশ থেকে ঘোষণাপত্র প্রকাশের। বিষয়টি রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা তৈরি হয়। আলোচিত জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রের খসড়ায় বিদ্যমান সংবিধানকে ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচার লালনের দলিল আখ্যা দিয়ে তা সংশোধন কিংবা প্রয়োজনে বাতিলের কথা বলা হয়েছে। যদিও বিএনপি সংবিধান বাতিলের ঘোর বিরোধী। গত ৫ আগস্ট থেকে কার্যকর ধরে খসড়ায় রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতির প্রস্তাব রয়েছে। অভ্যুত্থানের এক পর্যায়ে জনগণের লড়াইয়ে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের সমর্থনের স্বীকৃতি এবং আত্মমর্যাদা, সাম্য ও সামাজিক ন্যায়বিচারের যে আদর্শে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছে, তা বাস্তবায়নে সংগঠিত হওয়ার ঘোষণা রয়েছে ঘোষণাপত্রে।
কী আছে ঘোষণাপত্রের খসড়ায়?
সাতচল্লিশে ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্তি, একাত্তরে জনযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা ও পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বাহাত্তরের সংবিধান স্বাধীনতার শহীদ ও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের প্রত্যাশার প্রতিফলনে ব্যর্থ হয়েছিল। পরবর্তী শাসনামলেও রাষ্ট্র এবং প্রতিষ্ঠান বিনির্মাণে ব্যর্থতা ছিল। গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও শাসকগোষ্ঠীর জবাবদিহি নিশ্চিত করা যায়নি।
খসড়ায় বলা হয়েছে, ক্ষমতার সুষ্ঠু রদবদলের রাজনৈতিক ব্যর্থতার সুযোগে ষড়যন্ত্রমূলক ১/১১-এর মাধ্যমে শেখ হাসিনার একচ্ছত্র আধিপত্যের পথ সুগম হয়। শেখ হাসিনার শাসনামলের গুম-খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যা, দলীয় স্বার্থে সংবিধান সংশোধন ও পরিবর্তন রাষ্ট্রীয় এবং সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে। বিগত সরকারের আমলে গণবিরোধী একনায়কতান্ত্রিক, মানবাধিকার হরণকারী শক্তি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খুনি রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে পরিচিত করে।
জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার পরিবারের নেতৃত্বে উন্নয়নের নামে দুর্নীতি, ব্যাংক লুট, অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস ও বিদেশে টাকা পাচার সব সম্ভাবনাকে ধ্বংস করে। এর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দল, ছাত্র, শ্রমিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ গত ১৫ বছর নিরন্তর সংগ্রাম করে জেলজুলুম, গুম-খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছে। বিদেশি রাষ্ট্রের তল্পিবাহক আওয়ামী লীগ ন্যায়সংগত আন্দোলনকে নিষ্ঠুরভাবে দমন করেছে।
এর পরই খসড়ায় রয়েছে, গত তিনটি বিতর্কিত নির্বাচনের কথা। বলা হয়েছে, মানুষের ভোটাধিকার এবং প্রতিনিধিত্ব বঞ্চিত করে ছাত্র ও তরুণদের নিষ্ঠুর নির্যাতন করা হয়। সরকারি চাকরিতে একচেটিয়া দলীয় ও কোটাভিত্তিক নিয়োগ চরম বৈষম্য তৈরি করে। এই ধারা বর্ণনার পর জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানের কথা রয়েছে খসড়ায়। বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগের দমন এবং গণহত্যার পরও দল-মত নির্বিশেষে ছাত্র-জনতা গণবিক্ষোভকে গণঅভ্যুত্থানে রূপ দেন। অভ্যুত্থান চলাকালে ছাত্রদের ৯ দফা দমনে সরকার নির্মমতা চালায়। ইন্টারনেট বন্ধ, কারফিউ জারি করে ব্লক রেইডের মাধ্যমে আন্দোলন গুঁড়িয়ে দিতে সর্বশক্তি নিয়োগ করে।
খসড়ায় বলা হয়েছে, ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে অদম্য ছাত্র আন্দোলনে রাজনৈতিক দল, ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক, শ্রমিক প্রতিষ্ঠানসহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেয়। এক পর্যায়ে জনগণের লড়াইয়ে সামরিক বাহিনীর সদস্যরাও সমর্থন দেন। ফ্যাসিবাদ বিলোপ এবং নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে জনগণ ঢাকামুখী লংমার্চ করলে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান।
ঘোষণাপত্রের খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সংকট মোকাবিলায় অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণের সার্বভৌম অভিপ্রায় অভিব্যক্তি রাজনৈতিক এবং আইনি দিক থেকে বৈধ, যুক্তিসংগত ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। ছাত্র-জনতার সেই অভিপ্রায় বলে, যে আদর্শে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছে, তা বাস্তবায়নে সংগঠিত হলাম। ভূতাপেক্ষ বাস্তবায়নে সংসদ ভেঙে দিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠা এবং সুশাসন, সুষ্ঠু নির্বাচন ও ফ্যাসিবাদের পুনরুত্থান রোধে প্রয়োজনীয় সংস্কারের অভিপ্রায় ব্যক্ত করা হয়েছে ঘোষণাপত্রে। জুলাই গণহত্যা, আওয়ামী লীগ আমলের অপকর্মের বিচারের অঙ্গীকারের মাধ্যমে দ্বিতীয় জনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে। এই ঘোষণাপত্র গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে বলে খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে।
আরও আলোচনার ভিত্তিতে ঘোষণাপত্র, গুরুত্ব দিয়েছেন সবাই : আসিফ নজরুল
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পক্ষে রাজনৈতিক শক্তি, ছাত্র ও জনতা— সবার মধ্যে আরও বেশি আলোচনার ভিত্তিতে ঘোষণাপত্র প্রণয়নে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সর্বদলীয় বৈঠক শেষে অন্তর্র্বতী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল এমন মন্তব্য করেন।
বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) বিকেলে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে উপস্থিতি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে আসিফ নজরুল বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের নেতৃত্বে জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র প্রণয়নের বিষয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় বিএনপি, জামায়াত, হেফাজতে ইসলাম, বামমঞ্চ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জাতীয় নাগরিক কমিটিসহ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সব রাজনৈতিক শক্তি অংশগ্রহণ করে।
‘বৈঠকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র প্রণয়নের বিষয়ে সবাই একমত হয়েছেন’ জানিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, ‘সবাই বলেছেন যে, এই ধরনের একটা ঘোষণাপত্র করার দরকার আছে। তবে, এখানে অনেক সাজেশন আসছে; মোটাদাগে হলো— ঘোষণাপত্রে সবার অবদান উল্লেখ করতে হবে, ধারাবাহিকতা রাখতে হবে।’
‘ঘোষণাপত্রের রাজনৈতিক নেচার বা লিগ্যাল নেচার কী হবে, সেটা স্পষ্ট করতে হবে। বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, এই ঘোষণাপত্র আরও বেশি আলোচনার ভিত্তিতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষের রাজনৈতিক শক্তি, ছাত্র ও জনতাÑ সবার মধ্যে আলোচনা করে সর্বসম্মতিক্রমে প্রণয়ন করতে হবে। এটার জন্য যত সময় প্রয়োজন নেওয়া যেতে পারে। তবে, এই বিষয়ে যাতে অযথা কালবিলম্ব না হয়, সেই মতামতও দিয়েছেন অনেকে।’
‘সবাই ঐকমত্য হয়েছেন যে, আরও নিবিড় পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে এই ধরনের ঘোষণাপত্র হওয়া উচিত। সবাই আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, এই প্রক্রিয়ায় আমরা সফল হতে সক্ষম হব।’ ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সবাই যেমন একত্রিত হয়ে ফ্যাসিস্ট গণহত্যাকারী শেখ হাসিনাকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে, তেমনি সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে এই ঘোষণাপত্র তৈরি করবে’- বলেন আসিফ নজরুল।
সময়সীমা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সব রাজনৈতিক দল ও ছাত্র সংগঠনের যারা অংশ নিয়েছিল; সবাই বলেছেন যে, ঐকমত্য পোষণ করে সর্বসম্মতিক্রমে একটি ঘোষণাপত্র তৈরি করতে হবে। এজন্য যত সময় লাগুক, তা যেন নেওয়া হয়। তাড়াহুড়া যেন করা না হয়। অযথা কালক্ষেপণও করা না হয়। এজন্য অনেকে প্রস্তাব করেছেন যে, আলোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হোক। আমরা এই প্রস্তাবগুলো দ্রুত বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।’
ঘোষণাপত্র নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে কি না- জবাবে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কোনোরকম দূরত্ব সৃষ্টি হয়নি। শুধুমাত্র কী পদ্ধতিতে করা হবে, এই বিষয়ে বিভিন্ন মতামত আসছে। সব মতামতকে আমরা স্বাগত জানাই। কোথাও আমরা অনৈক্যের সুর দেখিনি। বরং সবাই বলেছেন যে, এই ঘোষণাপত্র প্রণয়নে যেন সবার মালিকানা থাকে; সেই বিষয়ে মতামত আসছে। এমন মতামতে সবার মধ্যে ঐক্য আরও সুদৃঢ় করবে।’
ঘোষণাপত্র নিয়ে আরও আলোচনা হবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আলোচনা হতে পারে, কমিটিও হতে পারে। ওনাদের (রাজনৈতিক দল) মতামত নিয়ে খুব দ্রুত একটা কর্মকৌশল ঠিক করা হবে।’
ঘোষণাপত্র নিয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্যে যেন ফাটল না ধরে : সালাহউদ্দিন আহমেদ
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ডাকা সর্বদলীয় বৈঠকে অংশ নেয় বিএনপি। বৈঠকে জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে বিএনপি বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) রাজধানীর বেইলি রোডে ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী যে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি হয়েছে, তা গণ-ঐক্যে রূপান্তর করে সেটাকে আমরা যেন রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে চর্চা করতে পারি এবং সেই ঐক্য ধরে রেখে জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি, সেটাই এখন আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।’ তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা আহ্বানে আমরা বৈঠক অংশ নিয়েছি। রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য আমরা আমাদের পরামর্শ তুলে ধরেছি। যেসব মতামত দেয়া প্রয়োজন, আমরা দিয়েছি।’
ঘোষণাপত্রের বিষয়ে কোনো পরামর্শ ছিল কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র নিয়ে কিছু আলোচনা হয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা তাদের পরামর্শমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। আমরা প্রশ্ন করেছি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সাড়ে পাঁচ মাস পর ঘোষণাপত্রের প্রয়োজন আছে কি না, যদি থাকে তার রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব এবং আইনি গুরুত্ব কী, সেগুলো নির্ধারণ করতে হবে।’
সালাহউদ্দিন বলেন, ‘এ ঘোষণাপত্রকে কেন্দ্র করে যাতে ফ্যাসিবাদবিরোধী যে ঐক্য সৃষ্টি হয়েছে, সেখানে যেন কোনো ফাটল সৃষ্টি না হয়, সেদিকে আমাদের লক্ষ রাখতে হবে। যদি কোনো রাজনৈতিক দলিল ঐতিহাসিক দলিলে পরিণত হয়, অবশ্যই আমরা সেটাকে সম্মান করি। কিন্তু সেটা প্রণয়ন করতে গিয়ে যাতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, তাদের পরামর্শ নেয়া হয়, আলোচনা করা হয়, সেই দিকটা আমরা পরামর্শ দিয়েছি।’
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সব উপদেষ্টাকে অনুরোধ জানিয়েছি, তারা যেন সেদিকে নজর রাখেন এবং পদক্ষেপ নেন। জাতীয় ঐক্যের মধ্যে কোনো ফাটল সৃষ্টি না হয়, আমাদের মধ্যে যাতে কোনো বিভ্রান্তি সৃষ্টি না হয়।’ ঘোষণাপত্র নিয়ে বিএনপির অবস্থান কী ছিল, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছি। রাজনৈতিক দলিল প্রণয়নসহ ইত্যাদি বিষয়ে কথা বলেছি।’
জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে সবাই একমত, তবে তাড়াহুড়ো নয়: গোলাম পরওয়ার
জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে সব রাজনীতিক দল একমত হয়েছে জানিয়ে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, সব রাজনীতিক দলই জুলাই ঘোষণাপত্রের বিষয়ে একমত। তবে তাড়াহুড়ো করতে গেলে অভ্যুত্থানের চেতনার ক্ষেত্রে ভুল হতে পারে। বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আহ্বানে সর্বদলীয় সংলাপ শেষে এ সব কথা বলেন তিনি।
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে সবাই একমত হয়েছে। তবে তাড়াহুড়ো করতে গেলে অভ্যুত্থানের চেতনার ক্ষেত্রে ভুল হতে পারে। এজন্য এটার কাঠামোগত দিক নিয়ে আরও আলোচনা দরকার। এটা প্রাথমিক আলোচনা।
সংলাপে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারের নেতৃত্বে চার সদস্যের প্রতিনিধি দল, বিএনপির পক্ষে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমানের নেতৃত্বে দুই সদস্যের প্রতিনিধি দল, জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন ও সদস্য সচিব আখতার হোসেন অংশ নেন।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরিফ সোহেল ও প্রধান সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসুদ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, রাষ্ট্রসংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদুল ইসলাম খান, খেলাফত মজলিশের সেক্রেটারি জেনারেল আহমদ আবদুল কাদেরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল ও গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর।
ঘোষণাপত্র নিয়ে সব রাজনৈতিক দল ঐকমত্য : নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী
ঘোষণাপত্র নিয়ে সব রাজনৈতিক দল ঐকমত্য বলে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) বিকেলে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ডাকা সর্বদলীয় বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি একথা বলেন।
জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, আজকে আমরা বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দল এসেছি এবং কথা বলেছি। আমরা সবাই একটি ঐকমত্যে পৌঁছেছি যে একটি ঘোষণাপত্র হবে। সবাই মিলে সম্মত হয়েছি যে অতি দ্রুত পর্যাপ্ত পর্যালোচনাসহ এটি দ্রুত প্রকাশ করা হবে। এর মধ্যে কিছু দৃষ্টিভঙ্গিগত এবং শাব্দিক কিছু চয়নের বিষয়ে সবার মধ্যে কিছু আলোচনা প্রয়োজন। সেটার জন্য সবাই সময় চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার কাছে। প্রধান উপদেষ্টা সময়ক্ষেপণ যেন না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে বলেছেন। যাতে কালবিলম্ব না হয় আবার খুব দ্রুত গতিতে না হয়। মাঝামাঝি একটা সময়ে যাতে আমরা ঐকমত্যে পৌঁছে সুন্দর একটি জিনিস তৈরি করতে পারি। এই বিষয়ে আমরা ঐকমত্যে পৌঁছেছি এবং দ্রুতই সবার সামনে আসবে।
তিনি আরও বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও নাগরিক কমিটি আমরা সেই ৩১ ডিসেম্বর রাত থেকে ধৈর্য ধারণ করে যাচ্ছি এবং এখনো করছি। আমরা দেশের জনগণকে বলবো আপনারা আরও কিছু সময় ধৈর্য ধারণ করুন। বাংলাদেশে যদি গণতান্ত্রিক উপায়ে উত্তরণের পথে যেতে হয় এই ঐতিহাসিক দলিল ছাড়া এটি সম্ভব নয়। এজন্য বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী যে রাজনৈতিক দলগুলো আছে, গণতন্ত্রকামী মানুষ আছে, যারা গত ১৫ বছর গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছে সেই মানুষগুলোর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা না করে সব মত, দল, পক্ষকে এই ঐতিহাসিক দলিলের মধ্যে দিয়ে গণতন্ত্রের পথে যাত্রার জন্য আমরা সবাইকে আহ্বান জানিয়েছি। তারা সম্মত হয়েছে, আশা করি ভবিষ্যতে আমাদের যাত্রা একসঙ্গে হবে, ভবিষ্যতের বাংলাদেশে।
কোনো সময়সীমা দেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সময়সীমা নিয়ে অনেকে বলেছেন। সুনির্দিষ্ট কোনো ডেডলাইন হয়নি। তবে সবাই সম্মত হয়েছে যে অনেক বেশি দেরি না আবার খুব তাড়াতাড়ি না। দ্রুত সময়ের মধ্যে সবার পর্যবেক্ষণ নিয়ে এটি প্রকাশ করা হবে।
কালের আলো/এমএসএএকে