ড. সামাদ জীবিত না কী মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছেন, নিশ্চিত নয় পরিবার

প্রকাশিতঃ 8:13 pm | March 16, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

এখনো মরদেহ শনাক্ত করা যায়নি নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে বন্দুকধারী সন্ত্রাসীর গুলিতে নিহত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কৃষিতত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. আব্দুস সামাদের।

পরিবারের সদস্যরা ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা ক্রাইস্টচার্চের হাসপাতালে অবস্থান করেও ‘মরদেহ’ শনাক্ত করতে না পারেন নি। তাইতো তিনি এখনো বেঁচে আছেন না কী মৃত্যুকে আলিঙ্গণ করেছেন বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারছেন তারা।

মরদেহ না পাওয়ায় পরিবারের সদস্যরা আরো বেশি আশাবাদী হয়ে ওঠেছেন। আরো এক থেকে দু’দিন পর পুরো বিষয়টি খোলাসা হবে। তবে সবকিছুই তারা ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ঢাকায় বসবাসরত বড় ছেলে তোহা মোহাম্মদ। শনিবার (১৬ মার্চ) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে এ তথ্য জানান তিনি।

ক্রাইস্টচার্চে হাসপাতালে মরদেহ শনাক্তে বিলম্ব হওয়ায় স্থানীয় লোকজন ক্ষোভে ফুঁসে ওঠছেন বলেও জানান তোহা।

তিনি বলেন, মায়ের সঙ্গে আজো (শনিবার) কয়েকবার আমার কথা হয়েছে। সেখানকার লোকজন খুবই উত্তেজিত। শান্তি ও স্বর্গের দেশে এমন বর্বর সন্ত্রাসী হামলা তাদের বিক্ষুব্ধ করছে। স্বজন হারানোর বেদনায় তারা কাতর।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব বিভাগে চাকরি ছেড়ে ২০১৩ সাল থেকে নিউজিল্যান্ডে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন ড. আবদুস সামাদ। তার সঙ্গে নাগরিকত্ব নিয়ে থাকতেন স্ত্রী কেশোয়ারা সুলতানা, দুই ছেলে তারেক মোহাম্মদ ও তানভীর মোহাম্মদ।

ড. সামাদ-কেশোয়ারা দম্পত্তির বড় ছেলে তোহা বলেন, প্রায় ১০ থেকে ১২ বছর আগে আমার বাবা স্থানীয় লিংকন ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করতেন। তিনি খুবই ধর্মপরায়ণ ছিলেন এবং সন্ত্রাসকে ঘৃণা করতেন।

বাবা হামলার শিকার আল নুর মসজিদের মোয়াজ্জিনের দায়িত্ব পালন করছিলেন। নিয়মিত তাবলিগ জামাতও করতেন।

বাবার সম্পর্কে বলতে গিয়েই গলা ধরে আসে তোহার। নিজেকে সামলে বলেন, আমরা আশাবাদী আব্বা বেঁচে আছেন। আবার পরিস্থিতিও অনুধাবন করছি। আমার আম্মা খুব শক্ত মনের মানুষ।

তবে আমরা চিন্তিত আমার দুই ছোট ভাইকে নিয়ে। আম্মাকে নিয়ে কোনো টেনশন নেই। ভাগ্যের ওপর সবকিছু ছেড়ে দিয়েছি।

শনিবার (১৬ মার্চ, বাংলাদেশ সময় সকালে) নিউজিল্যান্ডের পুলিশ কমিশনার ক্রাইস্টচার্চে হাসপাতালে উদ্বেগ উৎকন্ঠায় অপেক্ষারত স্বজনদের সঙ্গে এসে কথা বলেন।

মায়ের বরাত দিয়ে সেই তথ্য জানিয়ে তোহা বলেন, মরদেহ শনাক্ত করতে কতোদিন সময় লাগবে এ প্রশ্ন পুলিশ কমিশনারকে করেছিলেন সবাই।

তখন তিনি বলেছিলেন, শুক্রবার পর্যন্ত সময় লাগবে। তখন স্থানীয় লোকজন বিক্ষোভ প্রকাশ করলে তিনি বলেন আরো এক থেকে দু’দিন সময় লাগবে। এরমধ্যেই সবারটা শনাক্ত হয়ে যাবে।

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের দুই মসজিদে গুলি চালিয়ে হতাহতের ঘটনায় আহতদের মধ্যে ১০ থেকে ১২ জনকে সরকারিভাবে বিভিন্ন শহরে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে বলেও নিজের পরিবারের বরাতে জানান তোহা।

তিনি জানান, ওইসময় তাৎক্ষণিকভাবে অনেক রোগীকে এয়ার প্লেনে করে বিভিন্ন শহরের হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এদের সংখ্যা হবে ১০ থেকে ১২ জন।

ওইসময় যাদের দ্রুত অপারেশন দরকার ছিলো তাদেরেই নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাড়াহুড়া করে নিয়ে যাওয়ার ফলে এদেরও শনাক্ত করা হয়নি। এজন্য সময় লাগবে বলছিলেন তোহা।

নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশের অনারারি কনসাল শফিকুর রহমান অণু সন্ত্রাসীর গুলিতে ড. আব্দুস সামাদের সঙ্গে তার স্ত্রী কেশোয়ারা সুলতানারও মৃত্যু হয়েছে বলে গণমাধ্যমকে প্রথম দিকে জানানোয় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তাদের সেখানে অবস্থানরত দুই সন্তান তারেক ও তানভীর।

এ তথ্য জানিয়ে তোহা মোহাম্মদ বলেন, কনসাল জেনারেলকে আমার ছোট ভাই বলছে, আমার আম্মা বেঁচে আছেন। হাসপাতালের সামনেই দাঁড়িয়ে আছেন। আপনি কেন বলেছেন, আম্মা মারা গেছেন? পরে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

প্রসঙ্গত, নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে উগ্র মুসলিম বিদ্বেষ থেকেই দুই মসজিদে গুলি চালিয়ে ৪৯ মুসল্লিকে হত্যা করে অস্ট্রেলিয় নাগরিক ব্রেন্টন ট্যারান্ট। এ হামলার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে চারজনকে আটক করেছে পুলিশ।

কালের আলো/এমএইচএ