গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি ইসরায়েলি মন্ত্রিসভায় অনুমোদন

প্রকাশিতঃ 8:56 pm | January 17, 2025

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, কালের আলো:

দেড় বছরের ধ্বংসযজ্ঞের পর হাই প্রোফাইল দুই মন্ত্রীর কঠোর বিরোধিতার মধ্যেই ফিলিস্তিনের গাজায় ‍যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির চুক্তি ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পেয়েছে।

দেশটির উচ্চ-স্তরের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা শুক্রবার বিকালে এই চুক্তি অনুমোদনের পক্ষে ভোট দিয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে টাইমস অব ইসরায়েল। চুক্তিটি এখন আলোচনা ও ভোটের জন্য পূর্ণ মন্ত্রিসভায় চলে যাবে। আগামী রোববার থেকে যুদ্ধবিরতি শুরু হতে পারে বলে আভাস দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর কার্যালয়।

কাতার ও আমেরিকার পক্ষ থেকে যুদ্ধবিরতি ঘোষণার দুই দিন পর ইসরায়েলি মন্ত্রিসভায় চুক্তিটি অনুমোদন পেল। মন্ত্রিসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে এটি অনুমোদন পায়।

অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ এবং জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন গভির নিরাপত্তা মন্ত্রিসভায় চুক্তির বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন। কিন্তু তা অনুমোদন ঠেকাতে যথেষ্ট ছিল না।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় জানিয়েছে, মন্ত্রিসভা সরকারকে চুক্তি গ্রহণ করার সুপারিশ করেছে।

চুক্তির সমস্ত কূটনৈতিক, নিরাপত্তা এবং মানবিক দিকগুলি পরীক্ষা করার পরে করা শীর্ষ মন্ত্রীদের ফোরাম এটি গ্রহণের সুপারিশ করে বলে জানায় নেতানিয়াহুর কার্যালয়।

ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হেরজগ চুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বলেছেন, এখন পূর্ণ মন্ত্রিসভা অনুমোদন দিলে রোববার থেকে যুদ্ধবিরতি শুরু হবে। তবে চুক্তিটি ইসরায়েলের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসবে বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।

এর আগে শুক্রবার সকালে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানায়, শুক্রবার দিনের শুরুতে কাতারের দোহাতে গাজার জিম্মি মুক্তি এবং যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে ইসরায়েলি এবং হামাসের আলোচনাকারী দল। তবে এটি জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক ‍মন্ত্রিসভার অনুমোদনের অপেক্ষায় ছিল।

নিরাপত্তা মন্ত্রিসভার বৈঠকের আগে, প্রধানমন্ত্রী বেনয়ামিন নেতানিয়াহু চুক্তির বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনাকারী দলের সঙ্গে একটি নিরাপত্তা মূল্যায়নে অংশ নিয়েছিলেন।

সরকারের অনুমোদনের পর, হাইকোর্ট অব জাস্টিস এই চুক্তির উপাদানগুলির বিরুদ্ধে যেকোনো পিটিশনের শুনানি করবে। কিন্তু ব্যাপকভাবে হস্তক্ষেপ করবে না বলে আশা করা হচ্ছে।

বুধবার মধ্যস্থতাকারীদের দ্বারা ঘোষিত চুক্তিটি রোববার দুপুর ১২টা ১৫ মিনিট থেকে কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে। হিব্রু মিডিয়ার অসমর্থিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রথম তিন নারী জিম্মিকে বিকাল ৪টায় মুক্তি দেওয়া হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ইসরায়েল বলছে, ৯৮ জন জিম্মি বর্তমানে গাজায় বন্দী রয়েছে, যার মধ্যে অন্তত ৩৬ জন মৃত। তাদের মরদেহ ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ নিশ্চিত করেছে।

চুক্তির প্রথম ধাপে ছয় সপ্তাহে অর্থাৎ ৪২ দিনের মধ্যে ৩৩ জন জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস। যাদের মধ্যে থাকবে- শিশু, নারী, নারী সৈন্য, বয়স্ক এবং অসুস্থ মানুষ। ইসরায়েল বিশ্বাস করে যে এই ৩৩ জনের মধ্যে বেশিরভাগ জীবিত। আর কিছু মৃত। এর বদলে ফিলিস্তিনি বন্দিদের ইসরায়েলি কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হবে। ইসরায়েলি সেনারা গাজার ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চল থেকে সরে আসবে।

পাশাপাশি বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া ফিলিস্তিনিরা ফিরে আসতে পারবেন এবং প্রতিদিন ৬০০ ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করতে পারবে।

প্রথম ধাপের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে চুক্তির পক্ষরা একটি সম্ভাব্য দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা করবে, যা স্থায়ী যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে অবশিষ্ট সমস্ত জিম্মিদের মুক্ত করা হবে।

চুক্তির মধ্যস্থতাকারী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কাতার বুধবার গাজায় শুরু হওয়া ১৫ মাসের যুদ্ধের অবসান ঘটানোর একটি চুক্তির ঘোষণা দেয়। কিন্তু নেতানিয়াহু এর কোনো ঘোষণা দেননি। তিনি বলেছিলেন যে কিছু শর্ত রয়েছে, সেগুলো চূড়ান্ত হলেই চুক্তির বিষয়ে জানাবেন।

চুক্তির দ্বিতীয় ধাপে বাকি জিম্মিদের মুক্তি, ইসরায়েলি সেনাদের পুরোপুরি প্রত্যাহার এবং স্থিতিশীল শান্তি ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আলোচনা শুরু হবে।

তৃতীয় ও চূড়ান্ত ধাপে জিম্মিদের মৃতদেহ ফেরত এবং গাজা পুনর্গঠনের কাজ সম্পন্ন করা হবে, যা কয়েক বছর সময় নিতে পারে।

আমেরিকা, মিসর, কাতারের প্রচেষ্টায় যুদ্ধবিরতির এই চুক্তি যদি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন শুরু হয়, তাহলে তা গাজাবাসীর জন্য স্বস্তি নিয়ে আসবে। একই সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যে চলমান অস্থিতিশীলতাও কমে আসতে পারে। কারণ এই যুদ্ধ ঘিরেই লেবানন, ইয়েমেন ও ইরাকের প্রতিরোধ অক্ষের গোষ্ঠীগুলো ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছে।

এদিকে কাতার-যুক্তরাষ্ট্র বুধবার যুদ্ধবিরতি চুক্তির ঘোষণা দিলেও এরপর ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এতে কমপক্ষে আরও ৮১ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে চলা এই হামলায় এ নিয়ে উপত্যকাটিতে নিহতের মোট সংখ্যা প্রায় ৪৬ হাজার ৮০০ জনে পৌঁছেছে।

কালের আলো/এমডিএইচ