জিয়াউর রহমানের ৮৯তম জন্মবার্ষিকী আজ
প্রকাশিতঃ 8:54 am | January 19, 2025
নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা এবং বাংলাদেশের বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের (বীর উত্তম) ৮৯তম জন্মবার্ষিকী আজ। ১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি বগুড়ার গাবতলী উপজেলার বাগবাড়ী গ্রামে সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর ১৯ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। তার জন্মদিন উপলক্ষ্যে বিএনপি এবং তার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো আলোচনা সভা, দোয়া মাহফিলসহ নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
জিয়াউর রহমানের ডাক নাম ছিল কমল। তার পিতা মনসুর রহমান ছিলেন একজন রসায়নবিদ। বগুড়া এবং কলকাতায় শৈশব-কৈশোর অতিবাহিত করার পর, তিনি পিতার কর্মস্থল করাচিতে চলে যান। ১৯৫৫ সালে পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে কমিশন লাভের মাধ্যমে তার সামরিক জীবন শুরু হয়।
একজন বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের অধিকারী শহীদ জিয়াউর রহমান বাংলাদেশে মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা এবং বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে পরিচিত। সৈনিক হিসেবে তার জীবন শুরু হলেও, দেশ সংকটে তিনি বারবার ত্রাণকর্তা হিসেবে সামনে এসেছেন এবং দেশের সংকটময় সময়গুলোতে নেতৃত্ব প্রদান করেছেন। তিনি কেবল স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি, বরং নিজেই অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধ শেষে আবার তিনি সৈনিক জীবনে ফিরে যান এবং রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রতিষ্ঠা করেন। তার রাজনৈতিক দলটি আজ দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত, যার নেতৃত্বে তার সহধর্মিণী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এবং ছেলে তারেক রহমান রয়েছেন।
১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধে খেমকারান সেক্টরে অসীম সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করে তিনি বীরত্বের পরিচয় দিয়েছিলেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং নিজে যুদ্ধের নেতৃত্বে অংশ নেন। বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশের স্বতন্ত্র পরিচিতি গড়ে তুলতে তার ভূমিকা ছিল অপরিসীম। তিনি দেশপ্রেম, সততা, নৈতিকতা ও সহজ-সরল ব্যক্তিত্বের প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার পর, খন্দকার মোশতাক আহমদ ক্ষমতায় আসেন। পরবর্তীতে নানা রাজনৈতিক পরিবর্তন ও ঘটনাবলীর পর, জিয়াউর রহমান ১৯৭৫ সালের নভেম্বরে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসেন। তিনি দেশের বহুদলীয় গণতন্ত্র, বাক-ব্যক্তিস্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করেন। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও তার অবদান ছিল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে একদল বিপথগামী সেনাসদস্যের হাতে শহীদ হন জিয়াউর রহমান।
মির্জা ফখরুলের বাণী
জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বাণীতে শহীদ জিয়াউর রহমানের রূহের মাগফিরাত কামনা করে বলেন, ‘শহীদ জিয়া ছিলেন জাতির দিশারি। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী বাংলাদেশে আক্রমণ করার পর, তিনি সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন এবং ২৬ মার্চ চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনের পর, জাতি যখন চরম হতাশায় নিমজ্জিত, সেই সময়ে তিনি নেতৃত্ব গ্রহণ করেন এবং বাংলাদেশকে সংকট থেকে উদ্ধার করেন।’
তিনি বলেন, ‘দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীরা শহীদ জিয়াকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল, কিন্তু তার আত্মত্যাগের পর জনগণের মধ্যে একটি শক্তিশালী গণঐক্য গড়ে উঠে।’
বিএনপির মহাসচিব দেশবাসীকে স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র, মানুষের ভোটাধিকার এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আজ বেলা ১১টায় শেরেবাংলা নগরের তার মাজারে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করবেন। দুপুর ২টায় রমনার ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ মিলনায়তনে বিএনপির উদ্যোগে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
এছাড়া, জাতীয় দৈনিকে ক্রোড়পত্রসহ পোস্টার প্রকাশিত হয়েছে এবং বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনগুলোর উদ্যোগে সারাদেশে জেলা, মহানগর, উপজেলা, থানা এবং বিভিন্ন ইউনিটগুলোতে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
কালের আলো/এএএন/কেএ