আগে জাতীয় নির্বাচনের পক্ষে বিএনপি

প্রকাশিতঃ 11:01 am | January 19, 2025

কালের আলো রিপোর্ট:

আগামী জুলাই-আগস্ট মাসের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। দলটি গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে এবং জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধির মাধ্যমে দেশ পরিচালনা নিশ্চিত করতে দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়েছে। জনগণের ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা দলটির অন্যতম প্রধান লক্ষ। বিএনপি দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বচ্ছতা এবং নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছে। বিএনপি নেতারা মনে করেন, এই মুহূর্তে জাতীয় অগ্রাধিকার হচ্ছে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান। এছাড়া নির্বাচন যত বিলম্বিত হবে, ততই রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট বাড়বে। ক’দিন আগে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির সভায় এ বিষয়ে সরকারকে চাপ প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে বিএনপির একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

যদিও নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারের বিষয়ে গত ডিসেম্বর মাসের ২০ থেকে ২২ তারিখ পর্যন্ত সারা দেশে জনমত জরিপ পরিচালনা করে সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদন তৈরির ক্ষেত্রে বিবিএসের মাধ্যমে এ জরিপ চালিয়েছে। ওই জরিপে বলা হয়েছে, দেশের ৬৫ শতাংশ মানুষ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন চান। তবে জাতীয় নির্বাচনের আগে এই সরকারের অধীনেই স্থানীয় সরকার নির্বাচন করার পক্ষে রয়েছে জাতীয় নাগরিক কমিটিসহ বিভিন্ন সংগঠন ও দল। তারা বিবিএসের জরিপের ফলাফলকে যৌক্তিক বলে মনে করছে।

এর আগে গত ১৬ ই ডিসেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষণে ২০২৫ সালের শেষ থেকে ২০২৬ সালের প্রথম দিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে বক্তব্য দিয়েছিলেন। এরপর প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের ব্যাখ্যা করে তার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছিলেন, ‘আশা করতে পারেন যে নির্বাচন ২০২৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে হবে।’ তবে বিবিএস’র এই জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশের আগেই স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। স্থানীয় সরকার নির্বাচন সম্পর্কে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ৮ জানুয়ারি ঢাকা সফরকারী ইউরোপীয় বিনিয়োগ ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট নিকোলা বিয়ারের সঙ্গে আলোচনার সময় বলেন, তাঁর সরকার জাতীয় নির্বাচনের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। মূলত তখন থেকেই এ বিষয়ে সতর্ক দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি।

বিএনপি’র দলীয় সূত্র জানায়, দলটির স্থায়ী কমিটির ওই সভার সিদ্ধান্ত জানাতে গত মঙ্গলবার (১৩ জানুয়ারি) সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমরা মনে করি, নির্বাচন বিলম্বিত করার কোনো কারণ নেই। এই বছরের মাঝামাঝি সময়ে অর্থাৎ জুলাই অগাস্টের মধ্যেই নির্বাচন সম্ভব।’ দেশের স্বার্থে আগামী জুলাই আগস্ট মাসের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করার জন্য সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। বিএনপি নেতারাও মনে করেন, নির্বাচন আয়োজনের জন্য খুব বেশি সময়ের প্রয়োজন নেই। নির্বাচন কমিশনসহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে সংস্কার শেষে আগস্টের মধ্যে নির্বাচনের আয়োজন করা সম্ভব। তবে এই সময়ের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন না করা হলে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপির নেতারা।

বিবিএসের জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদের সময়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকারের সব স্তরের নির্বাচন করার পক্ষে মত দিয়েছেন ৬৪ দশমিক ৯৭ শতাংশ মানুষ। বিপরীতে ২৯ শতাংশ মানুষ জাতীয় নির্বাচনের পরেই স্থানীয় সরকার নির্বাচন চান। এ ছাড়া স্থানীয় সরকার নির্বাচন নির্দলীয় করার পক্ষে মত দিয়েছেন প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ। আর দলীয় প্রতীকে এই নির্বাচন করার কথা বলেছেন প্রায় ২৮ শতাংশ। অন্যদের এ বিষয়ে জবাব ছিল ‘না’ বা তাঁরা ‘জানেন না’।

জাতীয় সংসদ, নাকি স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে—বিষয়ে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি জামায়াতে ইসলামী। তাদের সাংগঠনিক পর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে বলেও জানা যায়নি। তবে তারা যে কোনো জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল বলে জানান একজন কেন্দ্রীয় নেতা। তিনি জানান, জাতীয় সংসদ, নাকি স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে—প্রশ্ন জোরালোভাবে সামনে এলে দল এর ভালোমন্দ বিশ্লেষণ করে অবস্থান জানাবে।

জরিপের সময় বিবিএস মানুষের কাছে কী ধরনের প্রশ্ন করেছিল, মতামত উঠে আসার ক্ষেত্রে তাতে জরিপকারীদের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটে থাকতে পারে বলে মনে করেন রাজনৈতিক দলগুলোর কেউ কেউ। এ ছাড়া এ সময়ে নাগরিক সেবা বঞ্চিত বিক্ষুব্ধ মানুষ হয়তো এ ধরনের মতামত দিতেও পারেন। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘জরিপে কীভাবে প্রশ্ন করা হয়েছে, আমি জানি না। এ মুহূর্তে মানুষ বিক্ষুব্ধ আছে স্থানীয় সরকারের নাগরিক সেবা নিয়ে। সে কারণে কেউ কেউ এমনটা বলে থাকলে সেটাকে আমি সাধারণভাবেই দেখি। কিন্তু দেশের এখনকার আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতায় জাতীয় নির্বাচনই আগে করা উচিত। সরকার নির্বাচনব্যবস্থার সংস্কারে কাজ করছে। আমি মনে করি, স্থানীয় সরকার নির্বাচনব্যবস্থার সংস্কার করে তারপরই নির্বাচন করা উচিত হবে।’

কালের আলো/এমএসএএকে/এমএএএমকে