শিক্ষা প্রশাসনে শীর্ষ অনেক পদ খালি, ধুঁকছে দপ্তর সংস্থাগুলো
প্রকাশিতঃ 11:23 am | January 19, 2025
নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থার শীর্ষ পদ এখন খালি। কোনো কোনো পদ মাসের পর মাস শূন্য আছে। এতে প্রতিষ্ঠানগুলো ধুঁকছে, সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া বিলম্বিত হচ্ছে, সেবাপ্রার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছেন। এসব পদ পূরণে তেমন কোনো তৎপরতা নেই মন্ত্রণালয়ের।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি), ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, জাতীয় শিক্ষা প্রশাসন একাডেমির (নায়েম) শীর্ষ পদ শূন্য। এর মধ্যে মাউশি মহাপরিচালক পদে দীর্ঘ সময় ধরে কেউ নেই। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের পদ প্রায় এক মাস ধরে খালি। সংশ্লিষ্টরা জানান, এসব পদ মূলত বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকদের দিয়ে পূরণ করা হয়।
মাউশি সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠানটির সর্বশেষ মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ সরকার পরিবর্তনের পর ২৫ আগস্ট পদত্যাগ করেন। তাঁর পদত্যাগের পর মাউশির পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) এবিএম রেজাউল করীমকে মহাপরিচালকের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়। তবে তিনিও অবসরে চলে গেছেন। বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের একাধিক কর্মকর্তা জানান, শীর্ষ পদ শূন্য থাকায় বর্তমানে চরম অচলাবস্থা বিরাজ করছে। গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ঝুলে থাকছে।
কেবল মহাপরিচালক নয়, মাউশির দুটি পরিচালক পদও খালি। তাই এ দুটি উইংও ধুঁকছে। এ ছাড়া উপপরিচালক (মাধ্যমিক) পদেও কেউ নেই।
এদিকে জাতীয় শিক্ষা প্রশাসন একাডেমির (নায়েম) মহাপরিচালক পদে এখন কেউ নেই। সর্বশেষ মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. তাহমিনা বেগম গত ৩১ ডিসেম্বর অবসরে যান। এ প্রতিষ্ঠানে পরিচালক (প্রশিক্ষণ) পদও দীর্ঘদিন শূন্য। ঢাকা শিক্ষাবোর্ডে নেই কোনো চেয়ারম্যান। সর্বশেষ চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকারকে গত ১৮ ডিসেম্বর অবসরে যাওয়ার সুবিধার্থে ওএসডি করা হয়। বোর্ডের সচিব আজাদ হোসেন চৌধুরী চেয়ারম্যানের রুটিন দায়িত্বে ছিলেন। তাঁকেও গত রোববার অন্যত্র বদলি করা হয়েছে। চেয়ারম্যান ছাড়াও এই বোর্ডের উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দুটি ও উপবিদ্যালয় পরিদর্শকের একটি পদ শূন্য।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) একটি পূর্ণকালীন সদস্য পদ খালি। একজন চেয়ারম্যান ও পাঁচজন পূর্ণকালীন সদস্য নিয়ে ইউজিসি পরিচালিত হয়। বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর কমিশনের তৎকালীন সদস্যরা পদত্যাগ করেন। অন্তর্বর্তী সরকার অধ্যাপক এস এম ফায়েজকে ইউজিসির চেয়ারম্যান, অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীম উদ্দীন খান, অধ্যাপক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, অধ্যাপক মো. সাইদুর রহমান ও অধ্যাপক মাছুমা হাবিবকে সদস্য নিয়োগ করা হয়। বাকি একটি সদস্য পদে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ইউজিসির সদস্য পদ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সমমর্যাদার।
বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলেও খণ্ডকালীন সদস্যর একটি পদ খালি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন অপর প্রতিষ্ঠান প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের উপপরিচালক পদও শূন্য।
পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের মোট তিনটি পদ শূন্য। এর মধ্যে শিক্ষা পরিদর্শকের দুটি এ সহকারী শিক্ষা পরিদর্শকের একটি পদ খালি।
দুই প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদ খালি হচ্ছে এ মাসে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর (ইইডি) এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) শীর্ষ পদ চলতি মাসেই শূন্য হবে। এনসিটিবির শীর্ষ পদে দায়িত্ব পালনকারী অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান আগামী ২৮ জানুয়ারি অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটিতে যাবেন। এনসিটিবির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদ সদস্য (অর্থ)। এই পদেও বর্তমানে কেউ নেই।
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরেও (ইইডি) শীর্ষ পদ শূন্য। সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনকারী ইইডিতে প্রধান প্রকৌশলীর পদ ছাড়াও ২টি তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, ১০টি নির্বাহী প্রকৌশলী এবং ১৯টি সহকারী প্রকৌশলীর পদ শূন্য।
সংশ্লিষ্টরা যা বলেন
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন একাধিক দপ্তরপ্রধানের পদ শূন্য থাকা প্রসঙ্গে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের একজন জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক নাম প্রকাশ না করার শর্তে সমকালকে বলেন, আগে দপ্তরপ্রধানদের চাকরি শেষ হওয়ার আগেই সেই পদে পরবর্তী কর্মকর্তা কে হবেন তা বাছাই করে রাখা হতো। এতে দ্রুত পদায়ন নিশ্চিত করা যেত। এ বিষয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
কালের আলো/এএএন/কেএ