দেশে ফিরে কাউকে পাইনি, পেয়েছি একসারি কবর : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিতঃ 1:30 pm | March 17, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যখন বিদেশে যাই এয়ারপোর্টে তখন সবাই ছিল কিন্তু বিদেশ থেকে দেশে ফিরে পরিবারের কাউকে জীবিত ফিরে পাইনি, পেয়েছিলাম একসারি কবর।

তিনি বলেন, একদিন বাবা-মা-ভাই সব হারিয়ে একেবারে নিঃস্ব-রিক্ত হয়ে বিদেশের মাটিতে ছয় বছর থাকতে হয়েছে। আমরা বাধ্য হয়েছিলাম। যখন বিদেশে যাই এয়ারপোর্টে তখন সবাই ছিল। কামাল, জামাল, রাসেল, কামাল-জামালের নববধূ সকলেই তখন বিদায় জানিয়েছিল। ফিরে এসে কাউকে পাইনি। পেয়েছিলাম বনানীতে একসারি কবর। আর পেয়েছিলাম টুঙ্গিপাড়ায় আমাদের দাদা-দাদীর কবরের পাশে শুয়ে আছে আমার বাবা।

রোববার(১৭ মার্চ) জাতির জনকের ৯৯তম জন্মবার্ষিকী এবং জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু সমাধি কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা জানান প্রধানমন্ত্রী।

শেখ মুজিবুর রহমান বিরাট হৃদয়ের অধিকারী ছিলেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এদেশে প্রায় দুর্ভিক্ষ লেগে থাকতো। নিজের গোলা খুলে দিয়ে ধান বিলিয়ে দিতেন তিনি। আমার দাদা-দাদী কখনো বকাঝকা করেননি। এই যে তার দানশীল মনোভাব, মানুষের প্রতি ভালোবাসা সেই ভালোবাসার টানে তিনি আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়ে গেছেন। আজকে আমাদের লক্ষ্য তিনি বাংলাদেশকে যেভাবে দেখতে চেয়েছিলেন উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। সেই বাংলাদেশ গড়ে তোলা এবং আমরা সেই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করছি।

তিনি আরও বলেন, আমার প্রতিজ্ঞা ছিল, বাবার স্বপ্নগুলো পূরণ করে এই বাংলাদেশকে উন্নত করে গড়ে তুলবো। আমি বাংলাদেশের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই, বিশেষ করে টুঙ্গিপাড়ার কোটালিপাড়ার মানুষের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই এ কারণে যে এই এলাকা দেখার কোনো প্রয়োজন হয় না। সব দায়িত্ব তারা বেছে নিয়েছে।

এ সময় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার কারণে একটি উন্নত জীবনের সম্ভাবনা জাতি হারাতে বসেছিল বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি তিন ভাই হারিয়েছি, পেয়েছি লাখো ভাই। আমরা দুটি বোন আমাদের সবকিছুই উৎসর্গ করেছি জনগণের জন্য। দেশের মানুষ যদি ভালো থাকে, উন্নত জীবন পায় সেটাই আমাদের সবথেকে বড় পাওয়া। সে কারণেই আমরা দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।

বাংলাদেশকে আমরা উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলবো জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের শিশু যেন আগামী দিনে সুন্দর একটি ভবিষ্যৎ পায়, সুন্দর একটা জীবন পায়। সেই লক্ষ্য সামনে রেখেই কাজ করে যাচ্ছি।

টুঙ্গিপাড়ায় মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ওই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। আলোচনা সভায় তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদসহ আওয়ামী লীগের অন্য নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে টুঙ্গিপাড়ায় তার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ রোববার সকাল ১০টার পর ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তারা। এ সময় কিছু সময় নীরবে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রী। পরে সমাধি কমপ্লেক্সে সূরা ফাতেহা ও মোনাজাত করা হয়।

কালের আলো/এমএইচএ