মিয়ানমারে জান্তার বিমান হামলায় নিহত অন্তত ২৮
প্রকাশিতঃ 9:29 pm | January 19, 2025
আন্তর্জাতিক ডেস্ক, কালের আলো:
মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যের অস্থায়ী একটি আটক কেন্দ্রে সামরিক জান্তা বাহিনীর বিমান হামলায় শিশুসহ অন্তত ২৮ জন নিহত হয়েছেন। এই হামলায় আহত হয়েছেন আরও কমপক্ষে ২৫ জন। রোববার রাখাইনের জাতিগত সংখ্যালঘু সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) বরাত দিয়ে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
রাখাইনের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ) রাজ্যটির নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে দীর্ঘদিন ধরে জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে আসছে। গত বছর এই রাজ্যের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের দখল নেয় আরাকান আর্মি। ইতোমধ্যে রাখাইনের রাজধানী সিত্তের সঙ্গে রাজ্যের অন্যান্য অঞ্চলকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে এই বিদ্রোহী গোষ্ঠী।
মিয়ানমারে ২০২১ সালে সেনাবাহিনীর অভ্যুত্থানে দেশটির গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চি নেতৃত্বাধীন বেসামরিক সরকারের পতন ঘটে। এরপর থেকে দেশজুড়ে জান্তা-বিরোধী ব্যাপক সশস্ত্র বিদ্রোহের শুরু হয়। রক্তাক্ত এই বিদ্রোহের কেন্দ্রে রয়েছে রাখাইনের সংঘাত।
টেলিগ্রাম চ্যানেলে দেওয়া এক পোস্টে আরাকান আর্মি বলেছে, শনিবার স্থানীয় সময় বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে ম্রাউক-ইউ শহরের একটি আটক কেন্দ্রে বোমা হামলা চালিয়েছে জান্তা বাহিনী। ওই আটক কেন্দ্রে জান্তা সৈন্যদের পরিবারের সদস্যদের বন্দি রেখেছিল আরাকান আর্মি।
‘‘বিমান হামলায় যারা নিহত ও আহত হয়েছেন, তারা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সৈন্যদের পরিবারের সদস্য। যুদ্ধের সময় আমরা তাদের গ্রেপ্তার করেছি,’’ পোস্টে জানিয়েছে আরাকান আর্মি।
রাখাইনের এই বিদ্রোহী গোষ্ঠী বলেছে, ‘‘আমরা বন্দিদের মুক্তি দেওয়ার পরিকল্পনা করছিলাম, সেই সময় সেখানে বোমা ফেলা হয়েছে।’’
বিবৃতিতে আরাকান আর্মি বলেছে, নিহতদের মধ্যে ৯ শিশুও রয়েছে। তাদের মধ্যে একজনের বয়স ২ বছর। বিমান হামলায় নিহত বাকিরা নারী। টেলিগ্রাম চ্যানেলে পোস্ট করা ছবিতে মাটিতে রাখা মৃতদেহের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। এ সময় আশপাশে কয়েকজনকে শোকাহত অবস্থায় দেখা যায়।
এই হামলার বিষয়ে মন্তব্য জানতে জান্তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে এএফপি।
মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী দেশটির একাধিক ফ্রন্টে জান্তাবিরোধী বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে লড়াই করছে। ইতোমধ্যে দেশটির বিভিন্ন প্রান্তের নিয়ন্ত্রণ সামরিক বাহিনীর হাতছাড়া হয়ে গেছে। জান্তাবাহিনীর বিরুদ্ধে অনেক এলাকায় বেসামরিক লোকজনের ওপর বিমান হামলা ও কামানের গোলা ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে।
তবে ম্রাউক-ইউ শহরের আটক কেন্দ্রটি ভুলেই নিশানা করা হয়েছিল কি না সেটি পরিষ্কার নয়। এছাড়া সৈন্যদের পরিবারের সদস্যদের আটকে রাখার জন্য ওই এলাকাটি ব্যবহার করা হলেও জান্তা বাহিনী তা জানতো কি না, তা জানা যায়নি।
দেশটিতে অভ্যুত্থানের বিরোধিতায় গঠিত যুব-নেতৃত্বাধীন পিপলস ডিফেন্স ফোর্সের (পিডিএফ) পাশাপাশি জাতিগত সংখ্যালঘু সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি ও অন্যান্য গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে লড়াই করছে জান্তা। দেশটির সীমান্ত লাগোয়া বিশাল এলাকার নিয়ন্ত্রণ করছে রাখাইনের খ্রিস্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি।
জাতিসংঘ বলেছে, মিয়ানমারে চলমান সংঘাতে ৩৫ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। যা গত বছরের তুলনায় ১৫ লাখ বেশি। চলতি বছর দেশটিতে এই সংকট আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে সংস্থাটি।
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সমন্বয়-বিষয়ক কার্যালয় (ওসিএইচএ) বলছে, ২০২৫ সালে দেশটির এক কোটি ৯৯ লাখ জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশেরও বেশি মানুষের সহায়তার প্রয়োজন হতে পারে।
সূত্র: এএফপি
কালের আলো/এমডিএইচ