বিদেশে অর্থপাচার আর অস্বাভাবিক সম্পদ অর্জনে ব্যবসায়ী কুতুবউদ্দিনের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু

প্রকাশিতঃ 9:59 pm | January 20, 2025

বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো:

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে ঢুকেন ব্যাংকে। এরপর মনোনিবেশ করেন ব্যবসায়। কামিয়েছেন হাজার কোটি টাকা। অস্বাভাবিক গতিতে সম্পদ অর্জনের অভিযোগও উচ্চারিত হচ্ছে তাঁর বিরুদ্ধে। গত ১৫ বছরে তাঁর অস্বাভাবিক সম্পদ প্রশ্নবোধক। শুধু তাই নয় তিনি এখন হাউজিং কোম্পানি, টেক্সটাইল ও সিরামিকসহ ৩০টিরও বেশি প্রতিষ্ঠানের মালিক। আবাসন খাতে অপ্রদর্শিত অর্থ পাচার করেছেন বিদেশেও। পর্তুগাল ও দুবাইয়েও রয়েছে তাঁর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট। দুবাইয়ে বিনিয়োগ দেখিয়ে নিয়েছেন গোল্ডেন ভিসা। বলা হচ্ছে- বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি এবং এনভয় টেক্সটাইল লিমিটেড ও শেলটেক গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা কুতুবউদ্দিন আহমেদ’র কথা।

এবার লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁর বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর আগে গত সোমবার (১৩ জানুয়ারি) দুদকের দৈনিক ও সাম্প্রতিক অভিযোগ সেল থেকে পরিচালক ইশিতা রনির স্বাক্ষর করা একটি চিঠিতে এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে তদন্ত-১ শাখার মহাপরিচালককে বলা হয়েছে। এসব নিয়ে গণমাধ্যমে একাধিক প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে।

জানা যায়, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা শান্তিতে নোবেলজয়ী ড.মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্বভার গ্রহণের পর থেকেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। বিদেশে অর্থপাচারে জড়িত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাওয়ার প্রস্তুতিও নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ইতোমধ্যেই একটি ‘হিটলিস্ট’ প্রস্তুত করা হয়েছে। অর্থপাচারকারীদের বিরুদ্ধে দুদকের এমন শক্ত অবস্থানের সময়েই আলোচনায় এসেছেন দেশের আলোচিত ব্যবসায়ী কুতুবউদ্দিন আহমেদ। আলোচনার পালে নতুন হাওয়া লেগেছে দুদক চেয়ারম্যান বরাবর এনভয় টেক্সটাইলের শেয়ার হোল্ডার এম এ কুদ্দুসের একটি অভিযোগকে ঘিরে। সেই অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেছেন-আবাসন খাতে অপ্রদর্শিত অর্থ বিদেশে পাচার করেছেন কুতুবউদ্দিন। এ ঘটনায় বিভিন্ন পরিমণ্ডলে নানামুখী আলোচনা চলছে। দুদক অ্যাকশন শুরু করায় শেষ পর্যন্ত কী ঘটে এ নিয়েও শেষ নেই জল্পনার।

দুদকের চেয়ারম্যান বরাবর এনভয় টেক্সটাইলের শেয়ার হোল্ডার এম এ কুদ্দুসের অভিযোগে জানা গেছে, একজন ব্যাংক কর্মকর্তা থেকে হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন কুতুবউদ্দিন আহমেদ। গত ১৫ বছরে তাঁর সম্পদ বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। তিনি গড়ে তুলেছেন হাউজিং কোম্পানি, টেক্সটাইল ও সিরামিকসহ ৩০টির বেশি প্রতিষ্ঠান। কুতুবউদ্দিনের প্রতিষ্ঠান হাউজিং কোম্পানি শেলটেকের মাধ্যমে পুলিশ, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তা, এনবিআরসহ বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তা এবং অসৎ ব্যবসায়ীদের কালো টাকা সাদা করে থাকেন। কালো টাকার মালিকদের কাছেও নির্ভয়ের নাম শেলটেক। মানুষের অবৈধ অর্থ বিনিয়োগের জন্য শেলটেকের কর্মীদের কুতুবউদ্দিন নানা টেকনিক শিখিয়েছেন।’

অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়েছে-ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশান, বারিধারা, বনানীতে জমি, ফ্ল্যাট বা ফ্লোর স্পেসের মূল্য আকাশছোঁয়া হলেও এসব এলাকায় বহুতল ভবনে স্পেস বিক্রি বা হস্তান্তর দলিলে মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে অনেক কম মূল্য দেখিয়ে থাকে কুতুবউদ্দিনের শেলটেক। ফ্ল্যাট নির্মাণে প্রতি বর্গফুটে যে খরচ হয়, ডেভেলপার কোম্পানি শেলটেক ও ক্রেতা যোগসাজশ করে তার চেয়েও কম দাম দেখাচ্ছে। ক্রেতা ক্রয়কৃত ফ্ল্যাট বা স্পেসের বিনিয়োগ মূল্য আয়কর নথিতে প্রদর্শন করতে হয় না। করলেও প্রকৃত মূল্যের চেয়ে অনেক কমে নামমাত্র মূল্য প্রদর্শন করার নানা টেকনিক দেখিয়ে দেন কুতুবউদ্দিন এবং তার লিগ্যাল ডিপার্টমেন্ট। অবৈধ অর্থ বৈধ করতে তিনি হুন্ডি চক্রও তৈরি করেছেন।

শুধু তাই নয়, গুলশানে দক্ষিণমুখী লেকের পাড়ে অবস্থিত একটি বহুতল ভবনে ঢাকার একটি চক্ষু হাসপাতালের একজন চক্ষুবিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ফ্ল্যাট কেনেন। ডাক্তারি পেশা থেকে অপ্রদর্শিত আয়কে বৈধ করার জন্য ৪ হাজার ৩৭৫ বর্গফুটের ফ্ল্যাট ১৩ কোটি টাকায় কিনলেও সাড়ে ৪ কোটি টাকা মূল্যে রেজিস্ট্রেশন নেন। বাকি সাড়ে ৮ কোটি টাকার সম্পদ খুব সহজেই বৈধ করে নিয়েছেন তিনি। আর শেলটেকের মালিক এসব অর্থ বিদেশে পাচার করেছেন বলেও অভিযোগে বলা হয়েছে।

কালের আলো/এএইচ/এএএ