গভীর নলকূপ বসিয়ে পানির চাহিদামেটানোর উদ্যোগ ওয়াসার

প্রকাশিতঃ 10:01 am | January 26, 2025

কালের আলো রিপোর্ট:

পুনরায় ঢাকা শহর খনন করে গভীর নলকূপ বসিয়ে পানির চাহিদা মেটানোর উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা ওয়াসা। এজন্য এক হাজার ৫২ কোটি টাকার প্রকল্প নিয়েছে তারা। এতে আরও ঝুঁকির মুখে পড়ছে রাজধানীবাসী।সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে, বর্তমানে ভূগর্ভস্থ ও ভূ-উপরিস্থ থেকে প্রতিদিন ২৬৫ থেকে ২৯৭ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করছে ঢাকা ওয়াসা। এর মধ্যে ভূগর্ভ থেকে আসে ৭০ শতাংশ, ভূ-উপরিভাগ থেকে আসে ৩০ শতাংশ। ২০১৪ সালে প্রণীত ঢাকা ওয়াসার মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২৫ সালে ঢাকা মহানগরীতে সম্ভাব্য পানির চাহিদা হবে ৩০৫ দশমিক ৮ কোটি লিটার ও ২০২৯ সালে ৩৫৫ দশমিক ৩ কোটি লিটার।

বর্তমানে ঢাকার জনসংখ্যা পাঁচ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং গভীর নলকূপের উৎপাদনও কমছে। ২০২৯ সালে ঢাকা মহানগরীতে জনসংখ্যা প্রায় দুই কোটি ২০ লাখ হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। জনগণের জীবনযাত্রার মান ও আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি ঘটায় মাথাপিছু পানির ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সারাদেশে এক হাজার ২৭২টি পর্যবেক্ষণ কূপের মাধ্যমে ৬০ বছর ধরে পানির পরিমাণ ও গুণমান পর্যবেক্ষণ করছে পাউবো। তাদের এক প্রতিবেদন অনুসারে, ঢাকার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর প্রতি বছর দুই মিটার বা প্রায় সাড়ে ছয় ফুট করে নেমে যাচ্ছে। ঢাকার মাটির নিচে বড় বিপর্যয় তৈরি হচ্ছে। মাটির নিচে হচ্ছে বলে সেটা দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বিপর্যয়ের ধারণা পেয়েছেন গবেষকরা। অতিরিক্ত পানি উত্তোলনের ফলে ঢাকা শহরের অভ্যন্তর ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। ফলে যে কোনো ধরনের বিপর্যয় আসতে পারে। এই বিপর্যয় থেকে ঢাকা শহর বাঁচাতে আশপাশের নদীর পানি ঢাকাবাসীকে খাওয়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল।

ঢাকা ওয়াসা বর্তমানে যে পরিমাণে পানি উৎপাদন ও সরবরাহ করছে তার মধ্যে সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার ফেজ-১ ও ফেজ-২ থেকে প্রতিদিন ৪৫ কোটি লিটার এবং মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ে পদ্মা (যশলদিয়া) পানি শোধনাগার থেকে ২৮ কোটি লিটার ভূ-উপরিভাগের পানি সরবরাহ করে। এছাড়া নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার গন্ধর্বপুর পানি শোধনাগার থেকে প্রতিদিন ৫০ কোটি লিটার পানি ২০২৬ সাল নাগাদ সরবরাহ লাইনে সংযুক্ত হবে। একইভাবে সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার (ফেজ-৩) থেকে ৪৫ কোটি লিটার পানি ২০২৯ সাল নাগাদ সরবরাহ লাইনে সংযুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।

জানা যায়, ‘ঢাকা শহরে জরুরি পানি সরবরাহ’ প্রকল্পের আওতায় গভীর নলকূপ খনন করা হবে। চলতি সময় থেকে ৩০ জুন ২০২৯ নাগাদ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পের আওতায় ৬২টি নতুন গভীর নলকূপ খনন করা হবে। ৩৮৮টি গভীর নলকূপ প্রতিস্থাপন, ২৮০টি রি-জেনারেশন, ৬০টি পুনর্বাসন, ৪৪টি গভীর নলকূপে আয়রন রিমুভাল প্ল্যান্ট, ৫০টি রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং ও ১২৪টি স্ক্যাডা সিস্টেম স্থাপন করা হবে। পুরো ঢাকা মহানগরীতে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে ক্রমবর্ধমান পানির চাহিদার বিপরীতে জরুরি ভিত্তিতে বিদ্যমান পানি সরবরাহ ব্যবস্থা স্থিতিশীল রাখা এবং বিদ্যমান পানি সরবরাহ ব্যবস্থার অতিরিক্ত ৫৭ দশমিক ৬ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করা হবে প্রকল্পের আওতায়।

ভূ-উপরিভাগের পরিবর্তে ভূগর্ভস্থ পানি সংগ্রহের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. ফজলুর রহমান বলেন, ‘দিন দিন ঢাকার লোকসংখ্যা বাড়ছে। যে কারণে অনেক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। বর্তমানে ঢাকা শহরে যে পরিমাণ পানি সরবরাহ করা হয় তার মধ্যে ৩০ শতাংশ ভূ-উপরিভাগের ও ৭০ শতাংশ ভূগর্ভের। আমাদের লক্ষ্য, ২০৩০ সাল থেকে ৭০ শতাংশ ভূ-উপরিভাগের পানি ঢাকায় সরবরাহ করা। পদ্মা ও শীতলক্ষ্যার পানি ঢাকায় আসছে। সামনে মেঘনা নদীর পানিও ঢাকায় আসবে।’

কালের আলো/এমএএইচ/ইউএইচ